Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ইবোলা নয় ভেবেও শেষ রক্ষা পেলেন না চিকিৎসক

কাগজটা দেখে নিজেকে আর সামলাতে পারলেন না তিনি। ভেঙে পড়লেন কান্নায়। মার্টিন সালিয়া। বেশ কিছু দিন ধরেই শরীরটা খারাপ লাগছিল তাঁর। জ্বর জ্বর। গা বমি। ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন সিয়েরা লিয়নের এই চিকিৎসক মার্টিন। ইবোলা হয়েছে কি না, দেখতে তড়িঘড়ি পরীক্ষা করান তিনি। স্বস্তির খবর, সে পরীক্ষায় ধরা পড়ল না ইবোলা। আর সেই ফলাফল দেখে নিজের আবেগকে বশে রাখতে পারলেন না মার্টিন। প্রিয় বন্ধুদের জড়িয়ে ধরে কেঁদেই ফেললেন তিনি। কিন্তু শরীর ঠিক হল না কিছুতেই। বরং বাড়তে লাগল উপসর্গ।

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৫
Share: Save:

কাগজটা দেখে নিজেকে আর সামলাতে পারলেন না তিনি। ভেঙে পড়লেন কান্নায়। মার্টিন সালিয়া। বেশ কিছু দিন ধরেই শরীরটা খারাপ লাগছিল তাঁর। জ্বর জ্বর। গা বমি। ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন সিয়েরা লিয়নের এই চিকিৎসক মার্টিন। ইবোলা হয়েছে কি না, দেখতে তড়িঘড়ি পরীক্ষা করান তিনি। স্বস্তির খবর, সে পরীক্ষায় ধরা পড়ল না ইবোলা। আর সেই ফলাফল দেখে নিজের আবেগকে বশে রাখতে পারলেন না মার্টিন। প্রিয় বন্ধুদের জড়িয়ে ধরে কেঁদেই ফেললেন তিনি। কিন্তু শরীর ঠিক হল না কিছুতেই। বরং বাড়তে লাগল উপসর্গ। আবার পরীক্ষা হল ইবোলার। আর মার্টিনের শরীরে এ বার ধরা পড়ল সেই মারণ ব্যাধি। যার জেরে সোমবার মৃত্যু হল সেই চিকিৎসকের।

সিয়েরা লিয়নের নাগরিক মার্টিন ফ্রি টাউনের একটি হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক ছিলেন। নিখুঁত অস্ত্রোপচার করা নাকি তাঁর ‘নেশা’ ছিল, বলে জানিয়েছেন মার্টিনের সহ-কর্মীরা। কিন্তু হঠাৎ করে কী ভাবে ছবিটা এ রকম হয়ে গেল কিছুই বুঝতে পারছেন না তাঁরা। সুস্থ মার্টিনের ক’দিন ধরে জ্বর জ্বর মনে হচ্ছিল। ইবোলার মতো উপসর্গ দেখে পেশায় চিকিৎসক মার্টিন ভয়ে পেয়ে যান। পরীক্ষা হয় তাঁর। কিন্তু সে পরীক্ষার ফল আসে নেগেটিভ। স্বভাবতই আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে ওঠেন তিনি ও তাঁর সহ-কর্মীরা।

কিন্তু পরীক্ষার ফল যাই আসুক, কিছুতেই সেরে উঠছিলেন না মার্টিন। এমনকী ম্যালেরিয়ার চিকিৎসাও করেন নিজের উপর। তাতেও জল সেই তিমিরেই রয়ে যায়। আর তাই আবার ইবোলা ভাইরাস ডিজিজ (ইভিডি)র পরীক্ষা হয় তাঁর। ৬ নভেম্বর মার্টিনের প্রথম পরীক্ষা হয়েছিল। আর ১০ নভেম্বর হয় দ্বিতীয়টি। তাতেই উল্টে যায় ফল। ইভিডি ধরা পড়ে মার্টিনের।

কিন্তু, দু’বার দু’রকম ফল হল কেন?

এর উত্তর দিতে গিয়ে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আসলে সংক্রমণের প্রথম তিন দিনের মধ্যে পরীক্ষা করা হলে অনেক সময়েই নেগেটিভ আসতে পারে ফল। মূলত তখনও রক্তে পরীক্ষায় ধরা পড়ার মতো সংখ্যায় ভাইরাস থাকে না। বংশবৃদ্ধি হতে খানিক সময় লাগে তাদের। তাই প্রথম বার না দেখা দিলেও দ্বিতীয় বারে দেখা মিলতে পারে ভাইরাসটির।

পরীক্ষার ফল হাতে আসার পর শনিবার আমেরিকার ওমাহায় একটি হাসপাতালে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় মার্টিনকে। এতই অসুস্থ ছিলেন মার্টিন যে বিমানবন্দর থেকে তাঁকে কোনও মতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। সোমবার স্থানীয় সময় ভোর চারটে নাগাদ মৃত্যু হয় মার্টিনের। এই নিয়ে আমেরিকায় ইবোলায় মৃত্যু হল দু’জনের। আর এঁরা দু’জনেই পশ্চিম আফ্রিকার বাসিন্দা।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, মার্টিন যখন পৌঁছলেন ওমাহায় তখন ইভিডি ভালমতোই ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর দেহে। শ্বাসকষ্ট এবং কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। রক্ত দেওয়া হয় তাঁকে। হয় ডায়ালিসিসও। তবুও এত চেষ্টা বৃথা হয়ে গেল সোমবার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ebola martin salia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE