Advertisement
E-Paper

‘একা কী করব, আমাদের টিমটাই তো মধ্যবিত্ত’

ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ফুটবলের পারফেক্ট ভিলেন! খেলা যেমন, চুলের স্টাইলও তেমন। দু’টোই জঘন্য! সিআর সেভেন, এ বার জার্মানির দিকে তাকিয়ে বসে থাকো! ফুটবল সত্যি বড় নিষ্ঠুর। মাত্র এগারো দিন আগে তিনি ছিলেন ব্রাজিল-বিশ্বযুদ্ধে এক নম্বর মহাযোদ্ধা। লিওনেল মেসি বা নেইমার দ্য জুনিয়র দু’জনেই ছিলেন ডিসট্যান্ট টু বা থ্রি। রোনাল্ডো প্র্যাকটিসে সাম্বা নাচলেন কি না, হাঁটুতে আইস-প্যাক বাঁধতে হল কি না, চোট তাঁর স্কিল অপরিবর্তিত রাখতে পারবে কি না, এক-আধটা নয়, জল্পনার সমুদ্র। আর এগারো দিন বাদে?

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৪ ০৫:৩১

ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ফুটবলের পারফেক্ট ভিলেন!

খেলা যেমন, চুলের স্টাইলও তেমন। দু’টোই জঘন্য!

সিআর সেভেন, এ বার জার্মানির দিকে তাকিয়ে বসে থাকো!

ফুটবল সত্যি বড় নিষ্ঠুর। মাত্র এগারো দিন আগে তিনি ছিলেন ব্রাজিল-বিশ্বযুদ্ধে এক নম্বর মহাযোদ্ধা। লিওনেল মেসি বা নেইমার দ্য জুনিয়র দু’জনেই ছিলেন ডিসট্যান্ট টু বা থ্রি। রোনাল্ডো প্র্যাকটিসে সাম্বা নাচলেন কি না, হাঁটুতে আইস-প্যাক বাঁধতে হল কি না, চোট তাঁর স্কিল অপরিবর্তিত রাখতে পারবে কি না, এক-আধটা নয়, জল্পনার সমুদ্র। আর এগারো দিন বাদে?

এগারো দিন বাদে সেই রোনাল্ডোকেই কিনা বলতে হল, আমি বিশ্বকাপ জয়ের কথা স্বপ্নেও ভাবিনি!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হেরে সোমবার ভোররাতেই সিআর সেভেনের বিদায় নেওয়ার কথা, যদি না শেষ মুহূর্তে ব্যালন ডি’অর প্রাপ্তের ডান পা অবিশ্বাস্য ভাবে ঝলসে না উঠত। কিন্তু তা ঝলসে উঠেও বিশেষ লাভ হয়নি। দুটো ম্যাচ হেরে টিম রোনাল্ডো গ্রুপের তলানিতে বসে। ঘানার বিরুদ্ধে জিতলেই হবে না, পাঁচ-সাত গোলে যেমন জিততে হবে, তেমনই যুক্তরাষ্ট্র-জার্মানি শেষ ম্যাচে কাউকে একটা হারতে হবে।

রোনাল্ডোকে তাই বলতে হচ্ছে, বিশ্বজয়ের কথা আমি কখনও ভাবিনি। রুক্ষ বাস্তব তাঁকে দিয়ে বলিয়ে নিচ্ছে!

“মিথ্যে কথা বলতে পারব না। বলতে পারব না আমাদের টিমটা সেরাদের একটা ছিল,” যুক্তরাষ্ট্র ম্যাচ শেষে বলে দিয়েছেন রোনাল্ডো। টিমের উপর তাঁর রাগ। আর বিশ্বের রাগ তাঁর উপর! দু’ম্যাচ যেতে না যেতেই রোনাল্ডোর দম্ভকে কটাক্ষ করে আন্তর্জাতিক প্রচারমাধ্যম লিখতে শুরু করেছে, ফুটবলের এক নম্বর খলনায়ক তুমি! বলতে শুরু করেছে, তোমার চুলের স্টাইলটা ব্রাজিল বিশ্বকাপের সবচেয়ে জঘন্য। যতই সেটা ক্যানসারে আক্রান্ত কিশোরের কথা ভেবে করিয়ে থাকো।

“আমি একা কী করব? আমার টিমটাই তো মধ্যবিত্ত টিম। অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। তার পর পেপে আর কোয়েন্ত্রাও নেই। তাতে আমাদের শক্তিটা আরও কমে গেল। একে টিম ভাল নয়। তার উপর আমরা নিজেদের সেরা খেলাটাও খেলতে পারছি না। এ ভাবে তো সেরা টিমদের হারানো যায় না,” আফসোস বেরিয়ে এসেছে সিআর সেভেনের গলা থেকে।

আর সেটা এতটাই যে, স্বয়ং সিআর সেভেনকেই কিনা বলতে হচ্ছে মিরাকল সম্ভব নয়। যিনি কিনা সেটা ঘটিয়েই টিমকে বিশ্বকাপে তুলেছিলেন জ্লাটান ইব্রাহিমোভিচের দু’গোলের জবাবে তিন গোল দিয়ে। ক্লাব ফুটবলেও গ্যারেথ বেল আসার আগে এমন বহু ম্যাচ গিয়েছে যেখানে রিয়াল বলতে শুধু রোনাল্ডোকেই বুঝিয়েছে। লিওনেল মেসির তারকাখচিত বার্সেলোনার মহড়াও অনেক সময়ই নিয়েছেন একা। চোটে নিজের ফিটনেস আক্রান্ত বলে কি না কে জানে, সেই একই রোনাল্ডো এ বারের বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ের মুখে দাঁড়িয়ে বলছেন, “আমি জানতাম আমাদের গ্রুপটা টাফ। কিন্তু হয়তো বাকি টিমগুলো আমাদের চেয়ে অনেক ভাল। বিশ্বাস করুন, আমি কোনও দিন ভাবিনি আমরা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে পারি। ভদ্র ভাবে সত্যিটাকে স্বীকার করে নেওয়া ভাল। নিজেদের ক্ষমতাটা বুঝে নেওয়া ভাল। আমি ফালতু কথা বলার লোক নই। তাই বলছি, টুর্নামেন্টটা জেতার কথা কখনওই ভাবিনি।”

নিজের চোটকেও যিনি আর অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করতে চান না। চান না লোকে বলুক, রোনাল্ডোর চোট ছিল তাই বিশ্বকাপে খেলতে পারেনি। চান না লোকে বলুক, রোনাল্ডো ক্লান্ত ছিল, পর্তুগাল টিমটা ক্লান্ত ছিল, তাই পারল না। “এটা ঠিক যে, একটা লম্বা মরসুম খেলে আমাদের বিশ্বকাপে নামতে হয়েছে। কিন্তু সেটা কোন টিমের হয়নি? ওদেরও কাউকে কাউকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলতে হয়েছে। নিজেদের দেশের লিগ খেলতে হয়েছে। তাই এ সব নিয়ে কথা বলে কোনও লাভ নেই,” বলে দিয়েছেন রোনাল্ডো। সঙ্গে নিজেকে নিয়ে তাঁর বক্তব্য, “আমার শরীর কত খারাপ, আমি কী পারছি আর কী পারছি না, সেগুলো দিয়ে নিজের পারফরম্যান্সের ব্যাখ্যা করতে চাই না। আর এ সব নিয়ে বলে কী লাভ? যা হয়ে গিয়েছে, সেগুলো নিয়ে ভেবে আর কী হবে? আমি এখানে আছি। লড়ছি। লড়ব। নিজের সেরাটা দেব। দৌড়ব। জেতানোর চেষ্টা করব। বাকি অন্য কিছু নিয়ে কিছু বলতে চাই না।”

কিন্তু কেন? বলতে চান না কেন? “বলে কী হবে? প্রত্যেক দিনই কাগজ খুললে দেখি আমার হাঁটু নিয়ে কত কথা। কত জল্পনা। কী হচ্ছে না হচ্ছে, সবই দেখছি নানা ভাবে বলা হচ্ছে। তাই নিজের চোট নিয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার কিছু নেই। আমি এখানে নিজের শরীর ও আত্মাকে উৎসর্গ করেছি জাতীয় দলের জন্য।”

কিন্তু তাতে শেষ পর্যন্ত লাভ হবে তো? যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাঁচ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত সম্মানরক্ষা ছাড়া কিছু কপালে জোটেনি। “আসলে ক্লিন্সম্যানের টিমের মনোভাব আর আমাদের টিমের মনোভাবে আকাশপাতাল তফাত ছিল। এখানে সবাই জিততেই আসে। কিন্তু আমরা জানতাম, আমরা মোটেও ফেভারিট নই। কখনওই ছিলাম না!” সাংবাদিক সম্মেলনে যে কথাগুলো বলেছেন রোনাল্ডো, তার সঙ্গে অদ্ভুত ভাবে মিলে যায় ম্যাচ শেষে তাঁর অভিব্যক্তি। টিমকে সোয়ার্ভিং ক্রসে বাঁচিয়েও এতটুকু স্বস্তি ছিল না। মাঝে মাঝেই ঠোঁট কামড়ে ধরছিলেন। যেন মানাউসেই বুঝে গিয়েছে, পরের ম্যাচটা হয়তো শুধুই নিয়মরক্ষার। এ বারও হল না।

আসলে বিশ্বসেরা জানেন, বিশ্বকাপে তিনি বেঁচে আছেন শুধু অঙ্কে!

দুঃখের দিনে বিশেষ কারণে করা হেয়ারস্টাইল।

fifaworldcup fifa world cup portugal ronaldo
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy