দলের কাউন্সিলর দীপায়ন রায়ের বাবা মারা যাওয়ার পর তাদের পরিবারের পাশে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। বুধবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত হয়ে এক কাউন্সিলরের বাবার মৃত্যু হতেই শিলিগুড়ি শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়ে গিয়েছে। বাড়ছে আতঙ্কও। উদ্বিগ্ন বাসিন্দাদের অভিযোগ, মেয়র এবং তার পারিষদরা ইস্তফা দেওয়ার পর গত তিন মাস ধরে পরিষেবা প্রায় মিলছে না। এনসেফ্যালাইটিস প্রতিরোধের কাজ কর্মেও চূড়ান্ত ঢিলেমি চলছে। ব্লিচিং পাউডার, মশা মারার তেল, ধোঁয়া ছড়ানোর কাজ সব ওয়ার্ডে হচ্ছে না। শুয়োর ধরার কাজও প্রায় শিকেয় উঠেছে বলে অভিযোগ। কাউন্সিলরদের অনেকেই পুরসভার ভূমিকায় হতাশ এবং ক্ষুব্ধ। পুর কমিশনার সোনম ওয়াংদি ভুটিয়া বলেন, “কাউন্সিলরের বাবার মৃত্যু দুর্ভাগ্যজনক। তবে মশা মারতে বরো ভিত্তিতে কাজ আগেই শুরু হয়েছে। সেই কাজ নিয়মিত চলছে। ব্লিচিংও পাঠানো হচ্ছে ওয়ার্ডগুলিতে।” তিনি দাবি করেন এ দিন শুয়োর ধরার কাজও হয়েছে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে।
গত ৫ অগস্ট থেকে সেবক রোডের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি ছিলেন সিপিএম কাউন্সিলর দীপায়ন রায়ের বাবা অমূল্যবাবু। তিনি যে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত হয়েছেন, তা ৭ অগস্টই জানা গিয়েছিল। অথচ তার পরেও শহরে মশা মারতে এবং এলাকা সাফ রাখতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। দীপায়নবাবু নিজেই এ দিন পুর কর্তৃপক্ষের কাজকর্ম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “জুলাই মাস থেকেই এনসেফ্যালাইটিসের দাপটে উত্তরবঙ্গ জুড়েই আতঙ্ক ছড়িয়েছে। তার পরেও শিলিগুড়ি শহরে রোগ প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। মুখে বলা হচ্ছে সমস্ত কিছু করা হচ্ছে। বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। আমাদের ওয়ার্ডে একটি গোশালা রয়েছে। শহরের মধ্যে এ ধরনের গোশালার জন্যও বাসিন্দারা অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।” তাঁর দাবি, বারবার চাইলেও পর্যাপ্ত মশা মারার তেল দেওয়া হয়নি। মশা মারতে ধোঁয়া ছড়ানোর কাজও নামমাত্র হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, এই নিয়ে শিলিগুড়িতে এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত হয়ে পাঁচ জনের মৃত্যু হল। দীপায়নবাবুর বাবা গত ১৮ জুলাই মালদহে যান। ২৯ জুলাই তিনি ফেরেন। তার কয়েকদিন পর তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন। এর আগে প্রকাশনগর, বাগাযতিন কলোনি, সুভাষপল্লি এবং ডাঙিপাড়া এলাকায় ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে।
তাই পুর কমিশনারের বক্তব্যের সঙ্গে সহমত হতে পারছেন না কাউন্সিলর এবং বাসিন্দাদের অনেকেই। এ দিন পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “গত বছর ডেঙ্গির পর এ বার উত্তরবঙ্গ জুড়ে এনসেফ্যালাইটিস ছড়িয়েছে। কোথায় পরিস্থিতি সামলাতে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা নয়। শহরে একাধিক রোগী এনসেফ্যালাইটিসে মারা যাওয়ার পরও প্রশাসনের তরফে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। মুখে বলা হচ্ছে রোগ নিয়ন্ত্রণে। অথচ বস্তব পরিস্থিতি অন্য।” তাঁর কটাক্ষ, শহরের এক জন কাউন্সিলরের বাবা নার্সিংহোমে ভর্তি থেকে মারা গেলেন অথচ মন্ত্রী বা প্রশাসনের কেউ এত দিন খোঁজ নিলেন না। তাঁর যুক্তি, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব নিজেও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। সৌজন্য দেখাতেও তিনি আসতে পারতেন। মন্ত্রী গৌতমবাবু বলেন, “দীপায়নবাবুর বাবা এ দিন মারা গিয়েছেন বলে জানাছিল না।” তবে শহরে রোগ প্রতিরোধে সমস্ত ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেছেন। ইতিমধ্যে পুরসভা, প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতর, জনস্বাস্থ্য এবং কারিগরী দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে তিনি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরে বৈঠক করেছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সমস্ত ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন। সেই মতো কাজ শুরু হয়েছে। মন্ত্রীর নির্দেশ মতো পুরসভায় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করে তাদের দিয়েও সচেতনতা প্রচার এবং রোগ প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে পুর কর্তৃপক্ষ দাবি করেন।
দলের কাউন্সিলরের বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে এ দিন নার্সিংহোমে যান সিপিএমের দার্জিলিং জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জীবেশ সরকার, পুরসভার বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম, কাউন্সিলর কমল অগ্রবাল, জয় চক্রবর্তীরা। রোগ নিয়ন্ত্রণে পুরসভার কাজের সমালোচনা করেন সকলেই। নুরুলবাবু বলেন, “আগে থেকেই আমরা বারবার পুর কমিশনারকে বলে আসছি কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে। তারা সেই কাজ করতে দেরি করেন। ওয়ার্ডে নামমাত্র ব্লিচিং দেওয়া হচ্ছে। মশা মারার তেল নেই। এমন অরাজক পরিস্থিতি আগে দেখিনি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy