Advertisement
E-Paper

এসএনসিইউ গড়েও নজির হতে পারল না রাজ্য, এগিয়ে ঝাড়খণ্ড

ঝাড়খণ্ড, জম্মু-কাশ্মীর পারে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ পারে না। পরিবর্তনের পরে বেশ কয়েক কোটি টাকা খরচ করে রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে তৈরি করা হয়েছিল ৪৩টি ‘সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট’ (এসএনসিইউ)। ভাবা হয়েছিল, এর ফলে নবজাতক মৃত্যুর হার কমিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সারা দেশে দৃষ্টান্ত গড়তে পারবে। কিন্তু কার্যত দেখা গেল, যা ভাবা হয়েছিল সেটা হল না। নবজাতক মৃত্যুর হার তেমন কমল না। নবজাতক মৃত্যুর হার কমানোর প্রতিযোগিতায় পশ্চিমবঙ্গকে ছাড়িয়ে গেল প্রতিবেশী ঝাড়খণ্ড।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৩৩

ঝাড়খণ্ড, জম্মু-কাশ্মীর পারে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ পারে না।

পরিবর্তনের পরে বেশ কয়েক কোটি টাকা খরচ করে রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে তৈরি করা হয়েছিল ৪৩টি ‘সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট’ (এসএনসিইউ)। ভাবা হয়েছিল, এর ফলে নবজাতক মৃত্যুর হার কমিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সারা দেশে দৃষ্টান্ত গড়তে পারবে। কিন্তু কার্যত দেখা গেল, যা ভাবা হয়েছিল সেটা হল না। নবজাতক মৃত্যুর হার তেমন কমল না। নবজাতক মৃত্যুর হার কমানোর প্রতিযোগিতায় পশ্চিমবঙ্গকে ছাড়িয়ে গেল প্রতিবেশী ঝাড়খণ্ড। সারা বছর হয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা জঙ্গি হানায় সিঁটিয়ে থাকা জম্মু-কাশ্মীরের ফলও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে ভাল।

রেজিস্ট্রার জেনারেল অব ইন্ডিয়ার সাম্প্রতিক ‘স্যাম্পল রেজিস্ট্রেশন সার্ভে’ (এসআরএস)-তে এই তথ্য সামনে আসার পরেই স্বাস্থ্য মন্ত্রক থেকে তা জানানো হয় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে। তাতে দেখা যাচ্ছে, গত তিন বছরে পশ্চিমবঙ্গে জন্ম থেকে এক বছর বয়সী শিশুদের মৃত্যুর হার এক জায়গায় থমকে গিয়েছে, কমানো যায়নি। তুলনায় তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, গুজরাত, মহারাষ্ট্র, পঞ্জাব, দিল্লি, কর্নাটক, ঝাড়খণ্ড, জম্মু-কাশ্মীরের মতো বহু রাজ্য শিশু মৃত্যুর হার গড়ে ৬ থেকে ১০ ভাগ কমিয়ে ফেলেছে।

২০১৩ সালের এই রিপোর্ট এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ করেনি কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু মৌখিক ভাবে তাদের কাছ থেকে নিজেদের খারাপ ফলের কথা জানার পরেই সম্প্রতি স্বাস্থ্যভবনে এসএনসিইউ-এর কর্তাদের জরুরি বৈঠক বসে। এসএনসিইউগুলির কাজকর্ম পর্যালোচনা করে স্বাস্থ্যকর্তারা একমত হন যে, প্রধানত চিকিৎসকের অভাব এবং সময়মতো রিপোর্ট না-পাঠানোর জন্যই এসএনসিইউ থাকা সত্ত্বেও তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।

শিশুমৃত্যু রুখতে গঠিত রাজ্যের বিশেষ টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “অন্য অনেক রাজ্য সত্যিই আমাদের থেকে অনেক ভাল কাজ করতে পেরেছে। যতটা গভীরে গিয়ে কাজটা করার কথা ছিল, আমরা তা পারিনি।” তা হলে এত খরচ করে এতগুলি এসএনসিইউ তৈরি করে কী লাভ হল? ত্রিদিববাবুর জবাব, “স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতি আস্থা তৈরি করতে এসএনসিইউগুলি দরকার ছিল। মানুষ অন্তত অসুস্থ শিশুকে নিয়ে যাওয়ার একটা জায়গা পেয়েছে, আগে তো সেটাও ছিল না।”

স্বাস্থ্য ভবনের একাংশের মতে, নবজাতক মৃত্যু নিয়ন্ত্রণ করতে পশ্চিমবঙ্গই এক দিন গোটা দেশকে ‘পুরুলিয়া মডেল’ এর পথ দেখিয়েছিল। কিন্তু সেই মডেলের প্রধান রূপকার চিকিৎসক অরুণ সিংহ স্বাস্থ্য-বিভাগের শীর্ষে থাকা সরকার-ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত কিছু কর্তার সঙ্গে সংঘাতের জেরে রাজ্য ছাড়তে বাধ্য হন বলে অভিযোগ। এতে রাজ্যে শিশুমৃত্যু নিয়ন্ত্রণের কাজ কিছুটা হলেও ধাক্কা খেয়েছে। কিন্তু পাশাপাশি স্বাস্থ্যভবনের অন্য অংশ মনে করছে, কোনও একটি মানুষের অনুপস্থিতি এতটাও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে না, যার জন্য কোনও ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। পশ্চিমবঙ্গের খারাপ ফলের সঙ্গে আসলে অন্য কিছু বিষয় জড়িত।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের এক ডেপুটি কমিশনার সেই বিষয়গুলির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে জানিয়েছেন, রাজ্যের এসএনসিইউ গুলিতে চুক্তির ভিত্তিতে অনেক কম মাইনেতে চিকিৎসক নিয়োগ করা হচ্ছে। তাঁদের কাজের প্রতি কোনও দায়বদ্ধতা তৈরি হচ্ছে না। কম মাইনে এবং অস্থায়ী চাকরির জন্য তাঁরা যখন-তখন চাকরি ছাড়ছেন বা সপ্তাহে সাকুল্যে দু’-তিন দিন কাজে যাচ্ছেন বা গ্রামের দিকের এসএনসিইউতে যেতেই চাইছেন না। এ ছাড়া, পশ্চিমবঙ্গ এখনও যথেষ্ট সংখ্যায় মায়েদের সময়মতো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার নিশ্চয়যান চালাতে পারছে না। নিয়মিত অন্তঃসত্ত্বাদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা নিশ্চিত করতে পারছে না। অপ্রশিক্ষিত দাই মারফত বাড়িতে শিশুর জন্ম আটকাতে পারছে না, যা অন্য রাজ্যগুলি পারছে। সব মিলিয়ে শিশু মৃত্যু কমানোর লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়ছে পশ্চিমবঙ্গ।

তবে শিশুমৃত্যু রুখতে গঠিত রাজ্যের বিশেষ টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপলব্ধি, “শুধু এসএনসিইউ দিয়ে শিশুমৃত্যু কমবে না। সব চেয়ে বেশি দরকার শিক্ষা ও পুষ্টির হার বাড়ানো। গর্ভবতীরা ঠিকঠাক পুষ্টি না পেলে, সময়মতো স্বাস্থ্যপরীক্ষা না করলে বা প্রসবের জন্য স্বীকৃত হাসপাতালে যাওয়ার তাগিদ অনুভব না করলে শিশু মৃত্যুর হার কমবে না। অন্য রাজ্যে সেটা হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে হচ্ছে না।”

sncu parijat bandyopadhyay newborn died newborn
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy