Advertisement
E-Paper

কুষ্ঠরোগীদের জন্য উৎকর্ষ কেন্দ্র শহরে

প্রতি বছরই এ রাজ্যে কয়েক হাজার নতুন কুষ্ঠরোগীর হদিস মিলছে। এঁদের মধ্যে একটা বড় অংশেরই শরীরে নানা ধরনের বিকৃতি। সুযোগের অভাবে এত দিন পর্যন্ত এঁদের অনেকেরই অস্ত্রোপচার আটকে থাকত। তাঁদের কথা ভেবেই রাজ্যে এই প্রথম সরকারি পরিকাঠামোয় কুষ্ঠ রোগের অঙ্গ পুনর্গঠনের একটি উৎকর্ষ কেন্দ্র চালু হচ্ছে কলকাতায়।

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৪

প্রতি বছরই এ রাজ্যে কয়েক হাজার নতুন কুষ্ঠরোগীর হদিস মিলছে। এঁদের মধ্যে একটা বড় অংশেরই শরীরে নানা ধরনের বিকৃতি। সুযোগের অভাবে এত দিন পর্যন্ত এঁদের অনেকেরই অস্ত্রোপচার আটকে থাকত। তাঁদের কথা ভেবেই রাজ্যে এই প্রথম সরকারি পরিকাঠামোয় কুষ্ঠ রোগের অঙ্গ পুনর্গঠনের একটি উৎকর্ষ কেন্দ্র চালু হচ্ছে কলকাতায়। স্বাস্থ্য দফতর এবং জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের উদ্যোগে কলকাতার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আজ, শনিবার এই কেন্দ্র চালু হচ্ছে। হাজার হাজার কুষ্ঠরোগী যে এই রাজ্যে স্রেফ পরিকাঠামোর অভাবে এত দিন পঙ্গুত্বের শিকার হয়েছেন, এর ফলে তাঁদের সামনে এ বার নতুন জীবনে পা রাখার সুযোগ খুলে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।

সারা দেশে কুষ্ঠরোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ১৩টি কেন্দ্রকে ‘নোডাল সেন্টার’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এ রাজ্যে এর মধ্যে একমাত্র কেন্দ্রটিই হল আর জি করে। কিন্তু সেখানেও কুষ্ঠরোগীদের চিকিৎসার বিশেষ কোনও পরিকাঠামো ছিল না। জেনারেল সার্জারি বিভাগে এঁদের অস্ত্রোপচার হত। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বিপুল রোগীর ভিড়ে কুষ্ঠরোগীদের দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হত। অপেক্ষা করতে করতে অনেকে হতাশ হয়ে হাসপাতালে আসা বন্ধ করে দিতেন। সেই কারণেই পৃথক পরিকাঠামোর প্রয়োজনীয়তার কথা সামনে আসছিল। আর জি করের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক রূপক মজুমদার বলেন, “আমাদের এই কেন্দ্রে ১৫টি শয্যা থাকছে। সঙ্গে পৃথক অপারেশন থিয়েটার। ফলে এ বার থেকে কুষ্ঠরোগীদের হাপিত্যেশ করে অপেক্ষার দিন শেষ।”

কুষ্ঠরোগের ক্ষেত্রে একটা সাধারণ প্রবণতাই হল রোগকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা। নিজে বুঝেও অন্যের থেকে রোগটা গোপন রাখতে হাসপাতালে না যাওয়া। কুষ্ঠ নিরাময়ের ক্ষেত্রে তাই চিকিৎসককেই রোগীর কাছে পৌঁছতে হয় বহু ক্ষেত্রে। এই উৎকর্ষ কেন্দ্রে রোগীকে আনার ক্ষেত্রে তা হলে কী ব্যবস্থা হবে? রূপকবাবু বলেন, “প্রথম দফায় কর্মীরা গ্রামে বাড়ি বাড়ি ঘুরে রোগীদের চিহ্নিতকরণের কাজ করবেন। তার পরে জেলা হাসপাতালে এনে তাঁদের স্ক্রিনিং হবে। যেখানে ছোটখাটো অস্ত্রোপচার প্রয়োজন, সেখানে মেডিক্যাল কলেজগুলো থেকে চিকিৎসকেরা জেলা হাসপাতালে গিয়ে অস্ত্রোপচার করবেন। কিন্তু যে সব ক্ষেত্রে বিশেষ পরিকাঠামো প্রয়োজন, সেই রোগীদের নিয়ে আসা হবে আর জি কর হাসপাতালে।”

কুষ্ঠরোগের অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে আলাদা উৎকর্ষ কেন্দ্র গড়া কি খুব প্রয়োজন ছিল? তা-ও আবার কলকাতার কোনও মেডিক্যাল কলেজে? কোনও কোনও মহল থেকে এই প্রশ্ন উঠেছিল। স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, নতুন কুষ্ঠরোগীর হদিস মিললেও সংখ্যাটা আগের চেয়ে কমছে। কিন্তু আগে থেকেই যাঁদের দেহে বিকৃতি রয়েছে, তাঁদের মূল স্রোতে ফেরানোটাও সমান জরুরি। দফতরের এক শীর্ষ কর্তা জানান, বছরখানেক আগে দফতরের নিজস্ব সমীক্ষাতেই ধরা পড়েছিল কলকাতা, হাওড়া ও দুই ২৪ পরগনা থেকে নিয়মিত বহু কুষ্ঠরোগী কলকাতার হাসপাতালগুলিতে আসছেন। এঁদের অনেকেরই দেহে রয়েছে গুরুতর বিকৃতি। সমীক্ষকেরা জেনেছিলেন, শহরে বা শহরের গা ঘেঁষে থাকলেও যথাযথ চিকিৎসার পরিকাঠামো এঁদের সামনেও নেই। অনেকেই অর্ধেক চিকিৎসার পরে হারিয়ে যান। কারও অস্ত্রোপচার হয় না। কেউ ওষুধ পান না। কেউ বা পান না বিশেষ ধরনের জুতো। মাঝেমধ্যে বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু হাসপাতালে কুষ্ঠরোগীদের অস্ত্রোপচার হয় ঠিকই, কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা একেবারেই নগণ্য। বাকিরা কর্মক্ষমতা হারিয়ে সমাজ এবং পরিবারের কাছে অনেক ক্ষেত্রেই বোঝা হয়ে দাঁড়ান। কলকাতায় একটি উৎকর্ষ কেন্দ্র চালু হলে শুধু শহর নয়, গোটা রাজ্যের কুষ্ঠরোগীদের ক্ষেত্রেই তা আশার আলো দেখাবে বলে স্বাস্থ্যকর্তারা আশাবাদী।

leprosy soma mukhopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy