Advertisement
E-Paper

গভীর রাতের আগুনে আতঙ্ক হাসপাতালে

জেলা সদর হাসপাতালের মধ্যে থাকা সার্ভার-রুমে অগ্নিকাণ্ডের জেরে সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে গেল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে তথ্য আদান প্রদান। শনিবার রাতে সিউড়ি সদর হাসপাতালের এই ঘটনায় রোগীদের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ দিকে, সময় মতো দমকলকর্মীরা এসে পড়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৭

জেলা সদর হাসপাতালের মধ্যে থাকা সার্ভার-রুমে অগ্নিকাণ্ডের জেরে সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে গেল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে তথ্য আদান প্রদান। শনিবার রাতে সিউড়ি সদর হাসপাতালের এই ঘটনায় রোগীদের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এ দিকে, সময় মতো দমকলকর্মীরা এসে পড়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। চিকিত্‌সক, নার্স থেকে শুরু করে সকলের প্রচেষ্টায় প্রসূতি, সদ্যোজাত শিশু ও অসুস্থ শিশু, মুমুর্ষূ রোগীগের কোনও ক্রমে হাসপাতালের বাইরে বের করে আনায় কারও ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা। তবে রোগীদের মধ্যে এতটাই আতঙ্ক ছড়িয়েছে যে, ঘটনার পর বেশ কয়েক ঘণ্টা কেটে গেলেও শনিবার হাসপাতালে ভর্তি থাকা ৪৪১ জন রোগীর মধ্যে ২২ জনের কোনও খোঁজ নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে পুলিশে রিপোর্ট করেছেন।

তবে সার্ভার রুমের মধ্যে কী ভাবে আগুন লাগল তা এখনও স্পষ্ট নয়। শর্টসার্কিট থেকে না কি অন্য কোনও কারণ এর পিছনে রয়েছে সে ব্যাপারে দমকল ও বিদ্যুত্‌ বিভাগ জানাতে পারেননি বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল সুপার শোভন দেব। হাসপাতাল সূত্রের খবর, সঠিক কারণ খতিয়ে দেখতে ফরেন্সিক টেস্টের কথাও ভাবা হচ্ছে। জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী জানিয়েছেন, কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল সেটা পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

ঠিক কী ঘটেছিল?


(বাঁ দিক থেকে) আগুন নেভাতে ব্যস্ত দমকলকর্মীরা। শিশু ও অন্য রোগীদের নিয়ে
বেরিয়ে আসছেন আত্মীয়রা। আতঙ্কে ফাঁকা প্রসূতি বিভাগ। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, রোগী ও তাঁদের পরিজনের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, শনিবার রাত ১টা নাগাদ হঠাত্‌ই সার্ভার-রুমে আগুন লেগে যায়। কালো ধোঁয়ায় ভরে যায় চারদিক। হাসপাতালে ঢোকার মূল গেটের কাছাকাছি সার্ভার-রুমটি থাকায় ওই পথ দিয়ে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। আতঙ্ক ছাড়িয়ে পড়ে রোগী ও পরিজনদের মধ্যে। যে যেদিকে পারছেন তাঁদের লোকজন নিয়ে ছুটে চলছেন। কারণ, ওই রুমের পাশাপাশি ছিল প্রসূতি বিভাগ, এসএনসিইউ, সিসিইউ-র মতো বিভিন্ন বিভাগ। মুহূর্তের মধ্যে গোটা হাসপাতাল চত্বরে হুলুস্থুল পড়ে যায়। এসএনসিইউ, সিসিইউতে ভর্তি থাকা শিশু ও রোগীদের ততক্ষণে হাসপাতালের বাইরে বেরোনের বিকল্প রাস্তাগুলি খুলে দেওয়া হয়েছে। নার্স, হাসপাতলের কর্মী ও রোগীর পরিজনেরা ঝুঁকি নিয়ে তাঁদেরকে হাসপাতালের বাইরে বের করে এসেছেন। যেখানে যেখানে ধোঁয়া পৌঁছেছে সেই সব ওয়ার্ডগুলি যতশীঘ্র সম্ভব খালি করে দেওয়ার আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়েছেন সকলেই। এই আগ্নিকাণ্ডের জেরে বড় কোনও বিপদ না ঘটে যায়, সে জন্য বিদ্যুত্‌ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল। প্রথমিকভাবে হাসপাতালের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা দিয়ে আগুন নেভানোর একটা চেষ্টা হয়েছিল। সেটা বিফলে যায়। বিপদ ঘণ্টা (স্মোক অ্যালার্ম) বেজে যাওয়ায় খবর পৌঁছেছিল কাছেই থাকা দমকল বিভাগে। পরে হাসপাতাল থেকে খবর দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকলের একটি ইঞ্জিন।

রাত পৌঁনে ২টো নাগাদ হাসপাতালে পৌঁছলে দেখা যায়, আগুন প্রায় নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। চারিদিকে ছোটাছুটি তখনও থামেনি। ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরে ইতস্তত ভাবে কেউ কেউ দাঁড়িয়ে, কেউ কেউ যে যাঁর রোগীদের নিয়ে বসে আছেন তাঁদের আত্মীয়রা। অনেকের কোলে সদ্যোজাত শিশু, অসুস্থ শিশু। যাঁদের অস্ত্রোপচার হয়েছে তাঁদের সকলকেই ট্রলি করে হাসপতালের বাইরে নিয়ে আসা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন এক বছরের অসুস্থ শিশু কোলে নিয়ে সাঁইথিয়ার বধূ নার্গিস বিবি, সিউড়ির বাসিন্দা প্রসূতি সুজাতা অঙ্কুর কিংবা ১৫ দিনের অসুস্থ দুই যমজ সন্তানকে নিয়ে নিবেদিতা মাজি, ঘণ্টা তিনেক আগে অস্ত্রোপচার করে শিশু কন্যার জন্ম দেওয়া দুবরাজপুরের পদ্মা বাউড়িরা। আতঙ্ক সকলের চোখেমুখে। কিন্তু সকলেই বলছেন, “ভাগ্যের জোরে বেঁচে গেলাম। আমাদের সন্তানরা বাঁচল।” রাত আড়াইটে নাগাদ জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী এবং সিএমওএইচ কার্তিক মণ্ডল ঘটনাস্থলে আসেন। ততক্ষনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসে গিয়েছে। সব দিক খতিয়ে দেখে তাঁরা বললেন, “দুর্ঘটানা সামলানো গিয়েছে। ভায় পাবেন না।”

রাত ৩টে ২০ মিনিট নাগাদ সকলকে আবার ওয়ার্ডে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ভয় কাটেনি কারওরই। পরিস্থিতি আবার জটিল হয় রবিবার ভোরে ফের বিপদ ঘণ্টা বেজে ওঠায়। দমকলের ইঞ্জিন আবার হাসপাতালে পৌঁছয়। অবশ্য পরে জানা যায়, সেটি কোনও কারণে বেজে উঠেছে। ঘটনার ১২ ঘণ্টা পরে অর্থাত্‌ রবিবার দুপুরেও সেই আতঙ্ক স্পষ্ট। এই পরিস্থিতির জন্য অনেকেই হাসপাতালে রোগীদের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। হাসপাতাল সুপার শোভনদেব বলেন, “এখনও ভয় রয়েছে। সেটা আমাদের কাটাতে হবে।” কিন্তু আগুন যাতে পুনরায় না লাগে তার জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সেটা স্পষ্ট করেননি সুপার। হাসপাতল সূত্রের খবর, শনিবার রাতের দুর্ঘটানার করাণ যাই হোক না কেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এড়াতে যে নজরদারি প্রয়োজন সেটাতে যেমন খমতি রয়েছে, তেমনই যে সচেতনতা প্রয়োজন সেটও মানেন না কেউই। তিনি চিকিত্‌সক, নার্স বা রোগী কিংবা রোগীর পরিজন যেই হোক না কেন। মাঝে মাঝে হাসাপাতলের মধ্যে বিনা বাধায় ধূমপান বা স্টোভ জ্বালিয়ে রান্না সবই হয়ে থাকে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই সব বিষয় নজরে আনা হবে বলে জানিয়েছেন সিউড়ি হাসপাতাল সুপার।

hospital fire siuri zilla sadar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy