বাবুলচন্দ্র বিশ্বাস। —নিজস্ব চিত্র।
চিকিত্সার গাফিলতিতে এক ব্যক্তির ডান হাত কনুই থেকে কেটে বাদ দেওয়ার ঘটনায় রানাঘাট মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিত্সক বি বি রায়কে ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিল নদিয়া ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। চলতি বছর ২০ জানুয়ারি রানাঘাটের গোঁসাইচর এলাকার বাসিন্দা বাবুলচন্দ্র বিশ্বাস ওই অভিযোগ করেছিলেন। মঙ্গলবার কৃষ্ণনগরে নদিয়া ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের সভাপতি প্রদীপ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, সদস্য রীতা রায়চৌধুরী মালাকার ও শ্যামল কুমার ঘোষের বেঞ্চ ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের রায় শোনায়।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২ সালের ২১ জানুয়ারি বিকেলে সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন বাবুলবাবু। সেই সময় পাশের গ্রাম তিলডাঙার রাস্তায় তিনি সাইকেল নিয়ে পাশের গর্তে পড়ে যান। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে চিকিত্সক বি বি রায়ের তত্ত্বাবধানে ভর্তি করা হয়। তাঁর পেটে তিনটে সেলাই করা হয়। বুকে আঘাত লাগায় বুকেরও এক্স-রে করা হয়। অভিযোগ, চিকিত্সকের কথা মতো ডান হাতে চ্যানেল করে স্যালাইন দেওয়ার সময়েই ভুল হয় কোথাও। রাত থেকে বাবুলবাবুর হাতে যন্ত্রণা শুরু হয়। তাঁর দাবি, নার্স ও চিকিত্সকদের সে কথা বললেও কেউ গুরুত্ব দেননি। বাবুলবাবু বলেন, ‘‘পরদিন থেকে আমার হাত ক্রমশ ফুলতে থাকে। সঙ্গে অসহ্য যন্ত্রণা। এরপর আমার ডান হাত ক্রমশ নীল হয়ে যায়।’’ ২৫ জানুয়ারি বাবুলবাবুকে অপারেশন থিয়েটরে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তত্কালীন সার্জেন তাঁর অপারেশন না করে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তরিত করে দেন। হাসপাতাল কতৃপক্ষ সম্পূর্ণ নিজেদের খরচে অ্যাম্বুল্যান্সে কলকাতার হাসপাতালে পাঠান তাঁকে। সেখানে চিকিত্সকরা দেখেই বলে দেন, বাবুলবাবুর হাতের ৯০ শতাংশ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ৯ ফেব্রুয়ারি অপারেশন করে তাঁর ডান হতের কনুইয়ের নীচ থেকে কেটে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। ২৭ ফেব্রুয়ারি তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। তারপরও দীর্ঘ দিন চিকিত্সার জন্য নানা জায়গায় ছোটাছুটি করতে হয়েছে।
বাবুলবাবু পেশায় কৃষক। ডান হাত কাটা পড়ায় তিনি এখন কর্মক্ষমতাহীন। তিনি বলেন, ‘‘আমার যা সামান্য জমি ছিল তার বেশিটাই বিক্রি করে চিকিত্সা করিয়েছি। এখন সামান্য জমি আছে। কিন্তু সেটাও ঠিকমতো চাষ করতে পারছি না।’’
বাবুলবাবুর দুই মেয়ে এক ছেলে। সকলেই পড়াশোনা করে। বাবুলবাবু বলেন,‘‘আমার স্ত্রী গ্রামের স্কুলে রাঁধুনির কাজ করেন। আর আমার দুই মেয়ে টিউশন করে কোনও রকমে সংসার চালায়। ওই চিকিত্সক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে আমার সংসারটা এখন চরম অর্থসঙ্কটে পড়ে গিয়েছে।’’
ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের সভাপতি প্রদীপ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এক্ষেত্রে দু’টো গাফিলতি ধরা পড়েছে। প্রথমত, স্যালাইন দেওয়ায় ভুল হয়েছে। দ্বিতীয়ত সঠিক সময়ে সঠিক চিকিত্সা শুরু করলে হাতটা কেটে বাদ দিতে হত না।’’
চিকিত্সক বি বি রায় অবশ্য বলেন, ‘‘আমার মনে হয় না আমার কোনও গাফিলতি ছিল। আদালতের রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পরে কী করণীয় সেই বিষয়ে আমি সিদ্ধান্ত নেব। তার আগে এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’ রানাঘাট মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে সুপার অতীন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ হাতে পাওয়ার পরে আমাদের দফতর যা নির্দেশ দেবে সেই মতোই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy