Advertisement
E-Paper

জ্বর আক্রান্তদের গ্রামে ক্ষোভের মুখে স্বাস্থ্যকর্তা

রোগ প্রতিরোধে আগাম ব্যবস্থা নিতে উদাসীনতার ফাঁক গলেই উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলাগুলিতে ডেঙ্গি, এনসেফ্যালাইটিসের মতো রোগ গত কয়েক বছর ধরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শিলিগুড়ি, মালদহ, বালুরঘাট-সহ উত্তর দিনাজপুর, আলিপুরদুয়ারের মতো জেলাতেও ডেঙ্গি ফের হানা দিয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগের প্রকোপ বাড়তে শুরু করার পর নড়েচড়ে বসছে স্বাস্থ্য দফতর এবং প্রশাসনের কর্তারা। তা নিয়ে বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৪ ০২:০০
কালিয়াচকের নয়াবস্তি গ্রামে জ্বরে আক্রান্ত মেয়েকে শুশ্রূষা মায়ের।

কালিয়াচকের নয়াবস্তি গ্রামে জ্বরে আক্রান্ত মেয়েকে শুশ্রূষা মায়ের।

রোগ প্রতিরোধে আগাম ব্যবস্থা নিতে উদাসীনতার ফাঁক গলেই উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলাগুলিতে ডেঙ্গি, এনসেফ্যালাইটিসের মতো রোগ গত কয়েক বছর ধরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শিলিগুড়ি, মালদহ, বালুরঘাট-সহ উত্তর দিনাজপুর, আলিপুরদুয়ারের মতো জেলাতেও ডেঙ্গি ফের হানা দিয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগের প্রকোপ বাড়তে শুরু করার পর নড়েচড়ে বসছে স্বাস্থ্য দফতর এবং প্রশাসনের কর্তারা। তা নিয়ে বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।

রবিবার দুপুরে সেই ক্ষোভেরই আঁচ পাওয়া গেল মালদহের কালিয়াচকের নয়াবস্তি গ্রামে। ওই এলাকাতে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৮ অক্টোবর থেকে এখনও পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকায় নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্য দফতর এবং প্রশাসন। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে রবিবার দুপুরে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে সঙ্গে নিয়ে অতিরিক্ত জেলাশাসক কালিয়াচকের নয়বস্তি গ্রামে ঢুকতেই বাসিন্দার ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। অতিরিক্ত জেলাশাসক দেবতোষ মণ্ডল ও জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দিলীপকুমার মণ্ডলকে ঘিরে বাসিন্দার ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁরা বলতে থাকেন, “এতদিন আপনারা কোথায় ছিলেন? গ্রামে শতাধিক মানুষ জ্বরে কাতরাচ্ছে আর আপনারা বসে থেকে মজা দেখছেন? গ্রামের মানুষ যখন মরতে শুরু করেছে তখন লোক দেখাতে গ্রামে মশা মারার কামান এনে ধোঁয়া থড়ানো হচ্ছে! একমাস আগে এই কাজ করলে গ্রামের পাঁচটি মানুষকে জ্বরে মরতে হত না।” বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে থেকে স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক সাবিনা ইয়াসমিনের ক্ষোভ, “জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসনের অপদার্থতার জন্য গ্রামে ডেঙ্গি ছড়িয়ে পড়েছে।”

মালদহ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দিলীপকুমার মণ্ডল জানান, নয়াবস্তি গ্রামে ডেঙ্গি উপসর্গ নিয়ে মালদহ মেডিক্যালে ভর্তি ১২ জনের মধ্যে ছ’জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। তবে নার্সিংহোম সূত্রে জানা গিয়েছে, গত এক সপ্তাহে জেলার ৯৮ জনের রক্ত পরীক্ষা করার পর ২৮ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, “গ্রামে নর্দমা এবং যত্রতত্র জমা জলে মশা বংশবিস্তার করেছে। বাসিন্দারা সচেতন না হওয়ার জন্যই ডেঙ্গি ছড়িয়েছে।” তাঁর দাবি, স্বাস্থ্য দফতরেরে কর্মীরা একমাস আগে যখন গ্রামে ডিডিটি স্প্রে করতে গিয়েছিলেন তখন বাসিন্দারা তাদের তাড়িয়ে দিয়েছিল। যে কারণে ডেঙ্গির প্রকোপ বেড়েছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক দেবতোষ মণ্ডল বলেন, “এলাকায় অপরিষ্কার রেখে প্রশাসন বা স্বাস্থ্য দফতরকে দোষারোপ করলে হবে না।” তবে গ্রামের তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য ইউনুস শেখ বলেন, “এর আগে কোনওদিন স্বাস্থ্য দফতরের কেউ গ্রামে এসে স্প্রে করেননি। পাঁচ জনের মৃত্যু হওয়ার পরই স্বাস্থ্য দফতর কর্তারা গ্রামে আসছেন।” তাঁর দাবি, ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা দিতেই গ্রামের বেশ কয়েয়কটি পরিবার গ্রাম থেকে অন্যত্র চলে গিয়েছে। গ্রামের অন্তত ২০ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে কলকাতায় চিকিৎসা করাচ্ছেন। বাবুল শেখের মেয়ে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা নার্গিস জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বাড়িতেই কাতরাচ্ছেন।


স্বাস্থ্য আধিকারিকদের ক্ষোভ জানাচ্ছেন বিধায়ক সাবিনা ইয়াসমিন।

দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে ঠিক এক বছরের মাথায় ডেঙ্গি ফিরে আসায় রোগ সচেতনতা নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের অবহেলার ছবিটাই উঠে এসেছে। দীর্ঘদিন ধরে এ জেলায় ডেপুটি সিএমও এইচ-টু ছিলেন না। ফলে ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর ও এনসেফ্যালাইটিস প্রবণ দক্ষিণ দিনাজপুরে ওই সমস্ত রোগ সম্পর্কে গ্রাম শহরে বাসিন্দাদের মধ্যে স্বাস্থ্য কর্মীদের মাধ্যমে সচেতনতার প্রচারে ঘাটতির অভিযোগ রয়েছে।

অক্টোবর মাস থেকে বালুরঘাট ব্লকের পন্ডিতপুর, বাদামাইল ও কুতুবপুর এলাকায় ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে এখনও পর্যন্ত আড়াই বছরের এক শিশু সহ ৮জন ভর্তি হয়েছেন। ওই সমস্ত এলাকায় এখন ঘরে ঘরে জ্বর। তা সত্ত্বেও জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে হেলদোল ছিল না বলে অভিযোগ। অভিযোগ এলাকাগুলিতে লিফলেট বিলি করেই দায় সাড়া হয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারির কাজল মণ্ডল অবশ্য দাবি করেন, “ধোঁয়া ও ব্লিচিং ছড়ানো হচ্ছে। কিন্তু বিভিন্ন ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের তুলে জেলা সদর ও মহকুমা হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে ডেপুটেশনে এনে রাখায় গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবা মার খাচ্ছে।”

এ দিন আলিপুরদুয়ার হাসপাতালে ভর্তি থাকা এক মহিলা রোগীকে কলকাতায় রেফার করেছেন চিকিৎসক। তাঁর শরীরে অনুচক্রিকা কমে এসেছে। উত্তর দিনাজপুর জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রাসবিহারী দত্ত দাবি করেন, জেলায় এখনও পর্যন্ত একজনের শরীরে রক্তের নমুনায় ডেঙ্গির জীবাণু ধরা পড়েছে। ওই ব্যক্তি বাইরে গিয়ে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন।

গত জুন মাস থেকে এনসেফ্যালাইটিসের প্রকোপ দেখা দেয় উত্তরবঙ্গ জুড়েই। খিঁচুনি-জ্বরে মারা যান দেড়শোরও বেশি মানুষ। তার মধ্যে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে মারা গিয়েছেন অন্তত ৩৬ জন।

মনোজ মুখোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

health officer kaliachak nayabasti dengue
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy