Advertisement
E-Paper

ডাক্তার নেই দশ মাস, ভরসা ফার্মাসিস্ট-নার্স

চিকিৎসকের চেম্বারে তালা ঝুলছে। তার পাশের ঘরে একের পর এক রোগীকে দেখে ওষুধ দিচ্ছেন ফার্মাসিস্ট। এই চিত্র একদিন বা দু’দিনের নয়। প্রায় দশ মাস ধরে বাঁকুড়ার পাত্রসায়র ব্লকের নলডাঙা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এ ভাবেই চিকিৎসকের কাজ সমালাচ্ছেন ফার্মাসিস্ট কার্তিকচন্দ্র বাগদি।

দেবব্রত দাস

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৪ ০৩:৩১
রোগী দেখছেন ফার্মাসিস্ট। —নিজস্ব চিত্র।

রোগী দেখছেন ফার্মাসিস্ট। —নিজস্ব চিত্র।

চিকিৎসকের চেম্বারে তালা ঝুলছে। তার পাশের ঘরে একের পর এক রোগীকে দেখে ওষুধ দিচ্ছেন ফার্মাসিস্ট। এই চিত্র একদিন বা দু’দিনের নয়। প্রায় দশ মাস ধরে বাঁকুড়ার পাত্রসায়র ব্লকের নলডাঙা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এ ভাবেই চিকিৎসকের কাজ সমালাচ্ছেন ফার্মাসিস্ট কার্তিকচন্দ্র বাগদি।

এলাকার বাসিন্দাদের কাছে এটা নতুন কিছু নয়। গত তিন বছর ধরে মাঝে মধ্যেই চিকিৎসকহীন অবস্থায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালাতে হয়েছে ফার্মাসিস্টকে। তবে গত বছরের ১২ মে থেকেই স্থায়ী বা অস্থায়ী কোনও চিকিৎসক নেই। পাত্রসায়রের বিডিও অপূর্বকুমার বিশ্বাস বলেন, “বেশকিছু দিন ধরেই চিকিৎসকের সমস্যা দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরে লিখিতভাবে বিষয়টি জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর থেকে আশ্বাস দেওয়া হলেও এখনও চিকিৎসক নিয়োগ করা হয়নি।”

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ধমান জেলার সীমানা ঘেঁষা বাঁকুড়ার পাত্রসায়রের এই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপর পাত্রসায়র ও ইন্দাস ব্লকের চারটি পঞ্চায়েতের প্রায় ৩০টি গ্রামের মানুষ নির্ভরশীল। পাত্রসায়রের নলডাঙা, লালবাঁধ, বিউর, তেলুড়, রসুলপুর, কাটোরা, শ্যামসুন্দরপুর, শালখাঁড়া, মামুদপুর, বীজপুর, দেউলি, কাজিরডাঙা এবং ইন্দাসের রোল, ফাটিকা, সোমসার, ভাসনা, বিড়াশিমূল, কুমনা, পলাশডাঙা, কুমরুলসহ আশপাশের বাসিন্দারা এখানে যেমন আসেন, তেমনি বর্ধমানের খণ্ডঘোষ এলাকার মানুষজনও আসেন। গত সোমবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ নলডাঙা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল, ফার্মাসিস্ট কার্তিকবাবু, নার্স টুম্পা পাত্র একটি ঘরে বসে রয়েছেন। আর একটি ঘরে ছিলেন প্যারামেডিক্যাল অপথালমিক অ্যাসিস্ট্যান্ট ইমামূল হক মিদ্যা। অন্য আর একটি ঘরে কাজ করছেন দুই স্বাস্থ্য সহায়িকা সুনীতিরানি ঘোষ ও মমতাজ খাতুন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সিনিয়র নার্স সাবিত্রী মুখোপাধ্যায়কে ওই দিন দেখা যায়নি।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরে নির্ভরশীল চার পঞ্চায়েতের প্রায় ৩০টি গ্রামের ৫০ হাজার বাসিন্দা।

স্থায়ী চিকিৎসক থাকার কথা ২ জন। একজনও নেই।

৩ জন নার্সের জায়গায় আছেন ২ জন। তাঁদের মধ্যে এক জনের বদলির নির্দেশ এসেছে।

চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ২ ও সুইপার এক জন থাকার কথা। ওই পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য।

ওই দিন নলডাঙার শেখ বদরে আলম পায়ে ব্যথা এবং ওই গ্রামেরই আয়নাল মল্লিক তাঁর ছেলেকে নিয়ে এসেছিলেন। দু’জনকেই দেখে ওষুধ লিখে দিলেন ফার্মাসিস্ট। পাশে বসা নার্স ওষুধ দিলেন। বদরে আলম ও আয়নাল মল্লিক বললেন, “কাছে ভেবে এখানে এসেছিলাম। কিন্তু ডাক্তার নেই। কী করব। বাধ্য হয়ে ফার্মাসিস্টকে দেখালাম।” জ্বর, সর্দি-কাশি, ব্যথা নিয়ে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসেছিলেন রোল গ্রামের বধূ মেনকা পাত্র, ঝুমা বাগদি। চিকিৎসক যে ওই দিন নেই, তা তাঁরা জানতেন না। যিনি তাঁদের চিকিৎসা করলেন, তিনি যে চিকিৎসক নন, তাও তাঁরা জানতেন না। বিস্ময়ের সুরে বললেন, “সে কী! এই তো ডাক্তারবাবু আমাদের দেখলেন। আমাদের কী হয়েছে জেনে ওষুধও দিলেন। ডাক্তার যে নেই, আমরা জানতাম না। যাই হোক ওষুধ তো পেয়েছি। সুস্থ হয়ে গেলেই ভাল।” ইমামূল হক বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে সুইপার নেই। ফলে স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বর পরিষ্কার রাখাটা কষ্টকর হয়ে উঠেছিল। স্থানীয় এক মহিলাকে অস্থায়ীভাবে মাসিক সাড়ে সাতশো টাকার বিনিময়ে সুইপারের কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”

স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রশ্ন, এত দিন ধরে চিকিৎসক নেই। ফার্মাসিস্ট রোগী দেখে ওষুধ দিচ্ছেন। কোনও অঘটন ঘটলে দায়িত্ব কে নেবে? কার্তিকবাবু বলেন, “আগের চিকিৎসক কৌশিক সরকার মাত্র এক মাস ছিলেন। গত বছরের মে মাস থেকে আর কোনও চিকিৎসক নেই। রোগীদের ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সাধ্য মতো আমরা সবাই পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।” তাঁর ক্ষোভ, “দায়িত্ব নিয়ে আমাকেই সব কিছু সামলাতে হচ্ছে। রোগীদের কিছু হলে, সব দোষ তো আমার ঘাড়েই এসে পড়বে। তখন কী হবে? তা ছাড়া, চতুর্থ শ্রেণির কর্মী, সুইপার না থাকায় প্রচণ্ড অসুবিধা হচ্ছে।” এলাকার বাসিন্দা তথা বিউর-বেতুড় পঞ্চায়েতের সদস্য তৃণমূলের হারুন রশিদ বলেন, “এখানে এত দিন ধরে একজনও চিকিৎসক নেই। ফার্মাসিস্ট রোগী দেখছেন। অবিলম্বে চিকিৎসক নিয়োগের জন্য স্বাস্থ্য দফতরের কাছে আমরা দাবি জানিয়েছি। কাজের কাজ কিছুই হয়নি।”

পাত্রসায়রের বিএমওএইচ উজ্জ্বল মণ্ডল বলেন, “ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৬ জন চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু মাত্র দু’জন রয়েছেন। সম্প্রতি আমাকেও বদলি করা হয়েছে। এই অবস্থায় নলডাঙা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টানা কয়েক মাস ধরে চিকিৎসক নেই। অতিরিক্ত ডিউটি করতে হচ্ছে সকলকে। সমস্যার কথা জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।” সিএমওএইচ শুভ্রাংশু চক্রবর্তী সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। কিন্তু সমাধান হবে তার সদুত্তর মেলেনি। তিনি শুধু বলেন, “চিকিৎসকের সঙ্কট জেলা জুড়েই রয়েছে। পাত্রসায়র ব্লকে শীঘ্রই নতুন চিকিৎসক পাঠানো হবে। আপাতত নলডাঙা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ততদিন চিকিৎসকের কাজ সামলাবেন ফার্মাসিস্টই।”

debabrata das bankura patrasayer patrasayer shortage of doctors
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy