Advertisement
E-Paper

ডেঙ্গি বুঝেও অবহেলা কেন, শিশুর মৃত্যুতে চিঠি বাবার

জ্বর, বমি, পেটখারাপ নিয়ে ধুঁকতে থাকা সাত বছরের এক শিশু সরকারি হাসপাতালে ভর্তি রইল টানা ১৯ ঘণ্টা। অথচ, এই দীর্ঘ সময়ে তার অসুস্থতার প্রকৃত কারণ জানার চেষ্টাই করলেন না চিকিত্‌সকেরা। মৌখিক ভাবে তাঁরা ডেঙ্গির আশঙ্কার কথা জানালেও তার রক্তের কোনও পরীক্ষা হল না, পেটব্যথা-বমি থাকা সত্ত্বেও কোনও আল্ট্রাসোনোগ্রাফি হল না। শেষ পর্যন্ত প্রায় বিনা চিকিত্‌সায় সেই বালিকা ‘সেপটিক শক’-এ চলে যায় বলে অভিযোগ। তার পরেই মৃত্যু হয় তার।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৪ ০১:২৫

জ্বর, বমি, পেটখারাপ নিয়ে ধুঁকতে থাকা সাত বছরের এক শিশু সরকারি হাসপাতালে ভর্তি রইল টানা ১৯ ঘণ্টা। অথচ, এই দীর্ঘ সময়ে তার অসুস্থতার প্রকৃত কারণ জানার চেষ্টাই করলেন না চিকিত্‌সকেরা। মৌখিক ভাবে তাঁরা ডেঙ্গির আশঙ্কার কথা জানালেও তার রক্তের কোনও পরীক্ষা হল না, পেটব্যথা-বমি থাকা সত্ত্বেও কোনও আল্ট্রাসোনোগ্রাফি হল না। শেষ পর্যন্ত প্রায় বিনা চিকিত্‌সায় সেই বালিকা ‘সেপটিক শক’-এ চলে যায় বলে অভিযোগ। তার পরেই মৃত্যু হয় তার।

গত ২১ অক্টোবর রাত পৌনে দশটা নাগাদ টালিগঞ্জের এম আর বাঙুর হাসপাতালে কবরডাঙা এলাকার বাসিন্দা দিয়া আচার্য নামে ওই বালিকার মৃত্যুর পরে স্বাস্থ্য দফতরে চিঠি দিয়ে তার বাবা শুভঙ্কর আচার্য জানতে চেয়েছেন, হাসপাতালে চিকিত্‌সা না পাওয়াটাই কি তাঁদের মতো দরিদ্র মানুষদের ভবিতব্য? কেন সাত বছরের শিশুকে নিজের জীবন দিয়ে হাসপাতালের গাফিলতির মাসুল গুনতে হবে? বাঙুরের সুপার সোমনাথ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একটি কমিটি ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। দিয়া যে এলাকায় থাকত, সেই ১১৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর রত্না শূর নিজে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে চিঠি দিয়ে চিকিত্‌সকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, ২০ অক্টোবর সোমবার রাত পৌনে তিনটে নাগাদ গুরুতর অসুস্থ দিয়াকে বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাকে স্যালাইন এবং কিছু অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার কোনও রক্তপরীক্ষা বা আল্ট্রাসোনোগ্রাফি হয়নি। অথচ বাঙুর হাসপাতাল চত্বরেই প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপে ডায়গনস্টিক সেন্টার রয়েছে। দিয়ার বেড-টিকিটে মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটায় লেখা হয়েছে রোগী সেপটিক শক-এ চলে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও তখনও কোনও পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বলা হয়নি। বেড-টিকিট অনুযায়ী, সন্ধ্যা সাড়ে আটটায় ডেঙ্গির পরীক্ষা করাতে লেখা হয়েছে। কিন্তু সে পরীক্ষা হয়নি। শেষে সে দিনই রাত পৌনে দশটা নাগাদ শিশুটির মৃত্যু হয়। দিয়ার বাবা শুভঙ্করবাবুর অভিযোগ, “হাসপাতালে ভর্তির পরেও আমার মেয়ে ওয়ার্ডের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছিল, হাসছিল, টিভিতে কার্টুন দেখবে বলে জেদ করছিল। ডাক্তারবাবুরা একটু আগে পরীক্ষা করে ওর রোগ বোঝার চেষ্টা করলে বেঁচে যেত। ওঁরা কিচ্ছু করলেন না। কষ্ট পেতে-পেতে চোখের সামনে মেয়েটা মরে গেল।”

কেন কোনও পরীক্ষা করা হয়নি দিয়ার? সেই সময়ে দায়িত্বে থাকা চিকিত্‌সক তপনকুমার মাইতি বলেন, “বুঝতে পারিনি কেসটা এত জটিল হয়ে যাবে।” তাঁর ব্যাখায়, সকালে তিনি রোগীকে স্যালাইন, অ্যান্টাসিড ও অ্যান্টিবায়োটিক দিয়েছিলেন। তখন রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনক বলে তাঁর মনে হয়নি, তাই তিনি কোনও পরীক্ষা করাতে বলেননি। তাঁর দাবি, দুপুরে তিনি মৌখিক ভাবে আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করাতে বলেছিলেন। মেয়েটিকে নিয়েও যাওয়া হয়েছিল, কিন্তু আল্ট্রাসোনোগ্রাফি রুম থেকে বলা হয়, অনেক রোগী লাইনে রয়েছেন। এটি ইমার্জেন্সি নয়, তাই দু’দিন বাদে আল্ট্রাসোনোগ্রাফি হবে। তপনবাবু জানান, এর পরে তাঁর নিজের শরীর খারাপ হয়েছিল বলে তিনি তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে এসেছিলেন। বিকেলে জুনিয়র ডাক্তারদের থেকে খবর পান যে, মেয়েটি ক্রমশ শকে চলে যাচ্ছে।

তা হলে তখন কেন রক্তপরীক্ষা বা আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করে রোগের কারণ খোঁজা হল না? বালিকাটির সত্যি ডেঙ্গি হয়েছে কি না, জানার চেষ্টা হল না কেন? তপনবাবুর জবাব, “আসলে তখন মেয়েটিকে শক থেকে বাইরে আনার চিকিত্‌সা হচ্ছিল। তার পরে রাত আটটা নাগাদ রক্তপরীক্ষা লেখা হয়। হাসপাতালের ডায়গনস্টিক ক্লিনিক থেকে টেকনিশিয়ানেরা রক্ত নিতে আসেন। কিন্তু আমরা পরে জানতে পারি যে, মেয়েটির শিরা শুকিয়ে যাচ্ছিল বলে তাঁরা রক্ত না নিয়েই ফিরে গিয়েছিলেন। চিকিত্‌সকেদের সেটা জানাননি।” টেকনিশিয়ানেরা যখন এসেছিলেন, তখন সেপটিক শকে চলে যাওয়া শিশুর পাশে কেন কোনও চিকিত্‌সক ছিলেন না বা কেন তাঁরা রক্ত টানতে টেকনিশিয়ানদের সাহায্য করেননি? তপনবাবুর উত্তর, “হয়তো ডাক্তারবাবুরা অন্য ঘরে গিয়েছিলেন।”

নিজের হাসপাতালের এই ঘটনায় খোদ বাঙুরের সুপার সোমনাথবাবুই ক্ষুব্ধ। তাঁর কথায়, “১৯ ঘণ্টা ধরে গুরুতর অসুস্থ শিশুর কোনও পরীক্ষা হল না, আল্ট্রাসোনোগ্রাফি ঘর থেকে তাকে ফেরানো হল, রক্ত নেওয়া হয়নি, কিন্তু কেউ জানতে পারল না। এটা চলতে পারে না। তদন্তে যাঁরা দোষী প্রমাণিত হবেন, তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।”

parijat bandopadhyay negligance mr bangur dengue
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy