Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ডাচ ফুটবলে ফুল ফোটাচ্ছে এক টোটাল ফুটবলারই

ওলন্দাজদের ‘ফান’ নামটা আমাদের বাঙালিদের খোকন, বাবু সোনা-র মতোই প্রায় ঘরে ঘরে। নেদারল্যান্ডস ফুটবল দলও তার ব্যতিক্রম নয়। চিলির সঙ্গে রবেনদের ম্যাচটা লেখার আগে কাগজপত্র ঘেঁটে দেখছিলাম, ২২১ ম্যাচ পরে সোমবার ডাচরা খেলল টিমে ‘ফান’ নামে কোনও ফুটবলার ছাড়াই। শেষ নাকি এমন কাণ্ড ঘটেছিল আঠারো বছর আগে চিনের সঙ্গে একটা ফ্রেন্ডলি ম্যাচে। এবং কোনও খোকন-বাবু-সোনা ছাড়া বাঙালি বাড়িকে যেমন ঠিক মানায় না, নেদারল্যান্ডস টিমও যেন সে রকম। অন্তত এ দিন ৭৭ মিনিটে ডাচরা গোল পাওয়ার আগে পর্যন্ত রবিন ফান পার্সির অভাব টের পাওয়া গেল।

সাও পাওলোয় কমলা-ঝড়। গ্যালারির অভিনন্দনে ভাসলেন রবেনরা। সোমবার।

সাও পাওলোয় কমলা-ঝড়। গ্যালারির অভিনন্দনে ভাসলেন রবেনরা। সোমবার।

চুনী গোস্বামী
শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৪ ০৫:২৯
Share: Save:

নেদারল্যান্ডস-২ (ফার, দেপে)
চিলি-০

ওলন্দাজদের ‘ফান’ নামটা আমাদের বাঙালিদের খোকন, বাবু সোনা-র মতোই প্রায় ঘরে ঘরে। নেদারল্যান্ডস ফুটবল দলও তার ব্যতিক্রম নয়। চিলির সঙ্গে রবেনদের ম্যাচটা লেখার আগে কাগজপত্র ঘেঁটে দেখছিলাম, ২২১ ম্যাচ পরে সোমবার ডাচরা খেলল টিমে ‘ফান’ নামে কোনও ফুটবলার ছাড়াই। শেষ নাকি এমন কাণ্ড ঘটেছিল আঠারো বছর আগে চিনের সঙ্গে একটা ফ্রেন্ডলি ম্যাচে। এবং কোনও খোকন-বাবু-সোনা ছাড়া বাঙালি বাড়িকে যেমন ঠিক মানায় না, নেদারল্যান্ডস টিমও যেন সে রকম। অন্তত এ দিন ৭৭ মিনিটে ডাচরা গোল পাওয়ার আগে পর্যন্ত রবিন ফান পার্সির অভাব টের পাওয়া গেল।

কার্ড সমস্যায় এই ম্যাচে নেদারল্যান্ডস অধিনায়ক মাঠে ছিল না। আর আক্রমণে রবেন একা পড়ে যাচ্ছিল। বল সমেত রবেনের ৩৫-৪০ গজের স্প্রিন্টের সময় ফান পার্সি যে ‘ডামি রান’ বা বল ছাড়া দৌড়টা দেয়, সেটার জন্য বিপক্ষ ডিফেন্ডাররা বুঝে উঠতে পারে না, রবেনকে কে আটকাবে আর ফান পার্সিকেই বা কে মার্কিং করবে! আর সেটা ভাবতে ভাবতেই গোল খেয়ে বসে। ফান পার্সির বল নিয়ে দৌড়ের সময় আবার ঠিক সেই কাজটা করে থাকে রবেন। যার সুবাদে ওদের দু’জনেরই আগের দু’টো ম্যাচে তিনটে করে গোল। ফান পার্সির বদলে ডাচ কোচ লুই ফান গল চার বছর আগে বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলা ডার্ক কুইটকে খেলালেও এ দিন রবেনের সাহায্যে ছিল আর এক ফুটবলার। কিন্তু সেই লেন্স এক বারও ফান পার্সি হয়ে উঠতে পারেনি। আর প্রকৃত সাহায্যকারীর অভাবে এ দিন রবেনের দৌড়গুলো সত্যিকারের ভয়ঙ্কর হয়নি। কেবল ইনজুরি টাইমে দেপে-কে দিয়ে দ্বিতীয় গোলটা করানোর সময়টা ছাড়া। তবে প্রথমার্ধে এক বার নিজের হাফে বল ধরে দুর্দান্ত একটা ৪০-৪৫ গজের স্প্রিন্ট টেনে প্রায় গোল করে ফেলেছিল রবেন।

আসলে লুই ফান গলের টিমের যেটা ট্রেডমার্ক খেলা, সেই ধীরে ধীরে মাঝমাঠে খেলা তৈরি করে অ্যাটাকিং থার্ডে বিপক্ষকে মারাত্মক ঝটকা দেওয়ার ব্যাপারটা এ দিন অন্তত শেষ পনেরো মিনিটের আগে দেখা যায়নি। দু’টো দলই নক আউটে উঠে যাওয়ায় দুই শিবিরেই সম্ভবত ঘুরপাক খাচ্ছিল, পরের রাউন্ডে কী ভাবে ব্রাজিলকে এড়ানো যায়। যদিও সেটা সোমবার ভোররাতে ব্রাজিল-ক্যামেরুন ম্যাচ শেষ হওয়ার আগে আমাদের মতোই জানা সম্ভব নয় নেদারল্যান্ডস এবং চিলিরও। কিন্তু ফান গল আগের দু’ম্যাচে আট গোল করার স্ট্র্যাটেজি বিসর্জন দিয়ে চিলির বিরুদ্ধে দলকে বেশি সময়টাই খেলালেন কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর ডিফেন্সিভ ফুটবল। যা কমলা রঙের (বস্তুত এ দিনই ব্রাজিল বিশ্বকাপে নিজেদের চিরাচরিত জার্সি পরে নেমেছিল ডাচরা) জার্সিধারীদের থেকে দেখতে ফুটবলপ্রেমীদের ভাল লাগার কথা নয়। রবেন, দে জং ছাড়া কাউকে সে ভাবে পাওয়া গেল না। স্নেইডারকে তো প্রথমার্ধে মাঠে প্রায় খুঁজে না পাওয়ায় (একমাত্র ফ্রিকিক নেওয়ার সময়টুকু বাদে) দ্বিতীয়ার্ধে কোচ তুলেই নেন।

এবং স্নেইডারের পরিবর্তই শেষমেশ এ দিন নেদারল্যান্ডসকে গোলের সরণিতে নিয়ে দাঁড় করাল। লেরয় ফার পঁচাত্তর মিনিটে মাঠে নেমে তার দু’মিনিটের মাথায় প্রথম বলে টাচ থেকেই গোল করে ১৯৭০-এর শিল্ড ফাইনালে পাজ ক্লাবের বিরুদ্ধে ইস্টবেঙ্গলের পরিমল দে-র গোলের কথা মনে পড়িয়ে দিল। জানমাতের ক্রসটায় প্রায় অরক্ষিত থাকা ফার বুলেটের গতিতে হেড নিয়েছিল। বেশ ভাল গোল। তার পর দে জংয়ের হেডে নেদারল্যান্ডসের আত্মঘাতী গোল খেয়ে বসার কথা। উল্টে সে যাত্রায় বেঁচে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই রবেনের বিপক্ষের দু’জনকে গতিতে পরাস্ত করে পাঠানো দুর্দান্ত ক্রস থেকে আর এক পরিবর্ত দেপের গোলে ডাচরাই ২-০ করল। বেলজিয়ামের পর এখন নেদারল্যান্ডস দলেও ‘সুপার সাব’দের দাপট!

তবে আসল দাপট রবেনের। টোটাল ফুটবলার। স্কিমার, শুটার, ডিফেন্ডার, সোলো রানার সব ভূমিকায় ওকে এ দিন দ্বিতীয়ার্ধে দেখলাম। চিলির এ দিন একমাত্র বিপজ্জনক দেখানো প্লেয়ার, বার্সেলোনার অ্যালেক্সি সাঞ্চেজের আক্রমণের সময় রবেনকে নিজেদের ডিফেন্সে নেমে এসে বল ক্লিয়ার করতেও দেখা গেল! নিঃসন্দেহে বলা যায়, এই বিশ্বকাপে মেসি-নেইমার-সুয়ারেজের সঙ্গে একাসনে বসবে আর্জেন রবেন।

ব্রাজিলে রবেন

ম্যাচ ৩ গোল ৩ (স্পেন ২, অস্ট্রেলিয়া ১)

গোলে শট ৮ (স্পেন ৩ অস্ট্রেলিয়া ৩ চিলি ২)

ফাউল করেছেন ৫ (স্পেন ১ অস্ট্রেলিয়া ২ চিলি ১)

বিশ্বরেকর্ড: প্রথম ম্যাচে গত বারের চ্যাম্পিয়ন স্পেনের বিপক্ষে নিজের দ্বিতীয় গোলের সময় স্প্যানিশ স্টপার র্যামোসকে পিছনে ফেলে দেন ঘণ্টায় ৩৭ কিমি গতির স্প্রিন্টে। ফিফার বিচারে এখনও বিশ্বকাপে দ্রুততম দৌড়।

ছবি: এএফপি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE