Advertisement
E-Paper

ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিত্‌সা দিতে ক্লিনিক

বিদেশে থাকার জন্য মনস্থির করে ফেলেছিলেন। একই বছরে লণ্ডন ও এডিনবরা থেকে ডাবল এমআরসিপি করার পরে ফের গবেষণার কাজে ইউকে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলেছিলেন। বিয়েও করে নিয়েছিলেন ইংল্যাণ্ডবাসী জিন মার্গারেটকে। সেই সময়েই মায়ের চিঠি এলো হাতে। এত পড়াশোনা, চিকিত্‌সায় বিদ্যায় পারদর্শিতা - তা কী দেশের মানুষের জন্য নয়। বিদেশে তো অনেক বড় বড় চিকিত্‌সক রয়েছেন। এসব জানিয়ে ছেলেকে দেশে ফেরার কথা বললেন মা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৩৭
নির্মিয়মান ডায়াবেটিসের ক্লিনিক। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

নির্মিয়মান ডায়াবেটিসের ক্লিনিক। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

বিদেশে থাকার জন্য মনস্থির করে ফেলেছিলেন। একই বছরে লণ্ডন ও এডিনবরা থেকে ডাবল এমআরসিপি করার পরে ফের গবেষণার কাজে ইউকে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলেছিলেন। বিয়েও করে নিয়েছিলেন ইংল্যাণ্ডবাসী জিন মার্গারেটকে। সেই সময়েই মায়ের চিঠি এলো হাতে। এত পড়াশোনা, চিকিত্‌সায় বিদ্যায় পারদর্শিতা - তা কী দেশের মানুষের জন্য নয়। বিদেশে তো অনেক বড় বড় চিকিত্‌সক রয়েছেন। এসব জানিয়ে ছেলেকে দেশে ফেরার কথা বললেন মা। মায়ের ডাক ফেলতে পারেননি। ইউকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করে ফিরে এলেন কলকাতায়। কলকাতা থেকে আত্মীয়তা সূত্রে মেদিনীপুরে। প্রথমে ১০ টাকা ফি দিয়ে চেম্বারে রোগী দেখা শুরু। ছিলেন মেদিনীপুর হোমিওপ্যাথি কলেজের অধ্যক্ষও। প্রচুর নাম-ডাক হওয়ায় এক সময় ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যান। সাধারণ রোগীদের পক্ষে তাঁর কাছে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। প্রাচুর্য্যের মধ্যে থাকতে থাকতে কী তাহলে ভুলে যাচ্ছিলেন মানুষের সেবার কথা।

হঠাত্‌ মাথায় চাড়া দিয়ে ওঠে মায়ের কথাগুলো। দেশের জন্য তাহলে কী করলাম? অর্থের বিনিময়ে চিকিত্‌সা পরিষেবা দিলেই কী সব হয়? চিকিত্‌সার অভিজ্ঞতা দিয়ে দেখেছেন, ধীরে ধীরে সারা দেশ তথা ভারতকে গ্রাস করছে এক রোগ। তা হল ডায়াবেটিস মেলাইটিস অর্থাত্‌ মধুমেহ। শুরু করলেন ডায়াবেটিস রোগের বিরুদ্ধে আন্দোলন। এই রোগের করাল গ্রাস থেকে বাঁচতে কিভাবে চলতে হবে তা নিয়ে একের পর এক সচেতনতা শিবির। তারই সঙ্গে নিজের চেম্বারে সপ্তাহে এক দিন নিখরচায় রোগের চিকিত্‌সাও। তারই সঙ্গে সামান্য কিছু পরীক্ষা নিরিক্ষাও করতে শুরু করলেন নিখরচায়। তিনি হলেন চিকিত্‌সক বিমলেন্দু বিকাশ সাহা।

বিমলেন্দুবিকাশবাবুর জন্ম বাংলাদেশের নোয়াখালিতে। সেখান থেকে বাবা-মায়ের হাত ধরে কলকাতায় আগমন। ছোট থেকেই মেধাবী ছাত্র ছিলেন তিনি। তাই সহজেই ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়ার সুযোগও মেলে। ১৯৬০ সালে এমবিবিএস পড়ার পর চার বছর প্রশিক্ষণ। ডাক্তারি ডিগ্রি সম্পূর্ণ হওয়ার পর ইংল্যান্ড যাত্রা ১৯৬৪তেই। ১৯৬৯ সালে দু’টি জায়গা থেকে এমআরসিপি ডিগ্রি লাভ। ওই বছরেই স্ত্রী জিন মার্গারেটকে নিয়ে মায়ের ডাকে দেশে ফেরা।

২০০২ সালের ১৪ নভেম্বর ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করার জন্য শপথ নিয়েছিলেন। গড়েছিলেন বিনোদা-নোরা মেমোরিয়াল ডায়াবেটিক ক্লিনিক। নিজের চেম্বারেই সপ্তাহে এক দিন করে চিকিত্‌সা শুরু। ১২ বছরে ১ লক্ষ ২০ হাজারেরও বেশি রোগী দেখেছেন নিখরচায়। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ছাড়াও বাঁকুড়া,পুরুলিয়া-সহ বিভিন্ন জেলাতেই ডায়াবেটিস সম্বন্ধে মানুষকে সচেতন করতে শিবির করেছেন। তারপরেও মন থেকে চিন্তা দুর হয়নি। নিজের তো বয়স বাড়ছে। ভবিষ্যতের জন্য কিছু করে যাওয়া প্রয়োজন। তাই সরকারের কাছ থেকে জমি চেয়েছিলেন। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন শরত্‌পল্লির কাছে প্রায় ৭ কাঠা জমিও দিয়েছিল ১ টাকার বিনিময়ে। কিন্তু জমি পেলেই তো হবে না। চিকিত্‌সার উপযোগী ভবন তৈরি করতে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকাও লাগবে যে! শুভাকাঙ্খীদের সাহায্যে সেই কাজও শেষ। শুক্রবার, বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবসে যার উদ্বোধন হওয়ার কথা। নিয়ে আসা হচ্ছে বিভিন্ন অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিও। যাতে ডায়াবেটিস সংক্রান্ত যাবতীয় পরীক্ষা নিরিক্ষার কাজও নিখরচায় করা যায়।

বিমলেন্দুবিকাশবাবুর কথায়, “সংস্থার পরিচালন সমিতিতে উত্‌সাহী বহু মানুষ রয়েছেন। রোগীদের সুবিধের জন্য এরকম একটি ভবনের প্রয়োজন ছিল। যাতে আমার অবর্তমানেও এই নিখরচার ক্লিনিক থেকে গ্রামগঞ্জের গরিব মানুষও নিখরচায় চিকিত্‌সা পরিষেবা পেতে পারেন। এতদিনে তা করতে পেরে আমি খুশি।” ডায়াবেটিস যে ভবিষ্যতে বড় ধরনের সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকেও সেই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের একটি সমীক্ষা বলছে, ১৯৭০ সালে শহরাঞ্চলে মাত্র ২.৩ শতাংশ ও গ্রামাঞ্চলে ১ শতাংশ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হতেন। ২০০০ সালে তা বেড়ে শহরাঞ্চলে হয়েছে ১২-১৯ শতাংশ ও গ্রামাঞ্চলে ৪-১০ শতাংশ। এই বৃদ্ধির হার কমাতেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন সত্তরোর্ধ এই চিকিত্‌সক।

medinipur clinic diabetis
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy