Advertisement
E-Paper

দোলে ছুটির মেজাজে হাসপাতাল, চিকিৎসা পেতে হয়রানি রোগীদের

আগুনে পুড়ে গেলে চিকিৎসার সুযোগ পেতে হন্যে হয়ে ঘুরতে হয় সাধারণ মানুষকে। কিন্তু আগুনের কবল থেকে মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন যে দমকলকর্মীরা, তাঁদেরও কতটা ভোগান্তি হতে পারে, সোমবার তার সাক্ষী রইল কলকাতা। কারণ দোল খেলার ‘ছুটি’ উপলক্ষে এ দিনও দিনভর ছুটির মেজাজ ছিল বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে।

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৪ ০৩:০০

আগুনে পুড়ে গেলে চিকিৎসার সুযোগ পেতে হন্যে হয়ে ঘুরতে হয় সাধারণ মানুষকে। কিন্তু আগুনের কবল থেকে মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন যে দমকলকর্মীরা, তাঁদেরও কতটা ভোগান্তি হতে পারে, সোমবার তার সাক্ষী রইল কলকাতা। কারণ দোল খেলার ‘ছুটি’ উপলক্ষে এ দিনও দিনভর ছুটির মেজাজ ছিল বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে। সরকারি হাসপাতালেও পরিষেবার ঢিলেঢালা হাল। তাই অগ্নিদগ্ধ দমকলকর্মী থেকে শুরু করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে আসা রোগীভোগান্তির শিকার হলেন সকলেই। ছুটির দিনে অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার সুযোগ পাওয়া যে কার্যত লটারি পাওয়ার সামিল, নানা জনের অভিজ্ঞতায় সে কথা প্রমাণ হল আরও এক বার।

এ দিন ভোর পাঁচটা নাগাদ বেলঘরিয়ার একটি রাসায়নিক কারখানায় আগুন লাগে। আগুন নেভাতে গিয়ে গুরুতর অগ্নিদগ্ধ হন দুই দমকলকর্মী। অভিযোগ, শঙ্কর দাস ও শুভাশিস রিজ নামে ওই দুই দমকলকর্মীকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় সল্টলেকের এক বেসরকারি হাসপাতালে। অভিযোগ, সেখানে ছুটির দিনে পরিকাঠামো নেই জানিয়ে তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তার পরে তাঁরা যান সল্টলেকের আর একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানেও তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তার পরে একাধিক ছোট-বড় হাসপাতালে তাঁদের একই অভিজ্ঞতা হয়েছে। অভিযোগ, সব জায়গাতেই বলা হয়েছে, ছুটির দিনে ডাক্তারের সংখ্যা কম। তাই অগ্নিদগ্ধ রোগী ভর্তি নেওয়া যাবে না।

নানা জায়গায় প্রত্যাখাত হওয়ার পরে ওই দুজনকে নিয়ে যাওয়া হয় এম আর বাঙুর হাসপাতালে। সেখানে সদ্য ৪০ শয্যার নতুন বার্ন ইউনিট চালু হয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, সমস্ত শয্যাই ভর্তি। তাই বার্ন ইউনিটে ঠাঁই দেওয়া যাবে না। হাসপাতালের সুপার সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “নতুন ইউনিট চালু হওয়ার আগে অগ্নিদগ্ধ রোগীরা যেখানে ভর্তি হতেন, সেই ওয়ার্ডটি এখন ফাঁকা পড়ে রয়েছে। তাই সেখানেই ওঁদের ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু পরিবারের লোকেরাই ওঁদের এসএসকেএমে নিয়ে যান।” ওই দমকলকর্মীদের পরিজনেদের অবশ্য বক্তব্য, বাঙুরের ওই পুরনো ওয়ার্ডটি তাঁদের কাছে পরিত্যক্ত ওয়ার্ডের মতো মনে হয়েছিল। তাই সেখানে দু’জনকে রাখার ঝুঁকি তাঁরা নেননি।

এ দিন দুপুরে দুই দমকলকর্মীর ঠাঁই হয়েছে এসএসকেএম হাসপাতালে। কিন্তু সেখানেও বার্ন ইউনিটে শয্যা মেলেনি। তাই জেনারেল ওয়ার্ডেই চিকিৎসা চলছিল তাঁদের। দু’জনেরই বেশি আঘাত মুখে। প্রায় গোটা মুখটাই ঝলসে গিয়েছে। চোখের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। সন্ধ্যায় এসএসকেএম থেকে ফের ওই দু’জনকে স্থানান্তরিত করা হয় হাওড়ার এক বেসরকারি হাসপাতালে।

দোল ছিল রবিবার। আর সোমবার সরকারি তরফে ঘোষণা করা হয়েছিল হোলির ছুটি। কিন্তু এ জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবায় যাতে কোনও বিঘ্ন না ঘটে, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকেই সরকারি তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সরকারি হাসপাতালে এ দিন চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের হাজিরা তুলনামূলক ভাবে কম হলেও ভয়াবহ পরিস্থিতি ছিল বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে। অভিযোগ, ই এম বাইপাস সংলগ্ন একাধিক বেসরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে গিয়ে রোগীদের শুনতে হয়েছে, “আজ ছুটি। আগামিকাল আসুন।”

পড়ে গিয়ে চোট পেয়েছিলেন সত্তরোর্ধ্ব তৃপ্তি বসু। ডাক্তার এমআরআই করাতে বললে তাঁর পরিবারের তরফে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সল্টলেকের একাধিক বেসরকারি হাসপাতালে। কিন্তু কোথাওই সেই ব্যবস্থা হয়নি। রবিবার সকাল থেকে প্রবল জ্বর ছিল তুহিন চৌধুরীর। এ দিন ভোরে পড়ে গিয়ে মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ শুরু হয় তাঁর। পরিবারের তরফে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বাইপাসের এক বেসরকারি হাসপাতালে। অভিযোগ, সেখান থেকে তাঁদের বলা হয় দ্রুত অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। কিন্তু ছুটির দিনে তা অসম্ভব অস্ত্রোপচার হবে মঙ্গলবার সকালে।

কলকাতার এক ক্যানসার চিকিৎসকের সঙ্গে এক বেসরকারি হাসপাতালে আসানসোলের এক ক্যানসার রোগীর অ্যাপয়েন্টমেন্ট করা ছিল দু’সপ্তাহ আগে থেকেই। শহরে এসে তাঁরা জানতে পারেন, ডাক্তার আসবেন না। তাই অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল। এমন নজির অজস্র।

বেসরকারি হাসপাতালগুলির সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব হসপিটালস অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া-র কর্তৃপক্ষ জানান, সোমবার হাসপাতালের আউটডোর ছুটি ছিল। যে কোনও ছুটির দিনের মতোই তাই আউটডোরে ডাক্তার-টেকনিশিয়ান ছিলেন না। এটা আগাম ঘোষণা করাই ছিল। তবে ইমার্জেন্সি পরিষেবা চালু ছিল বলে দাবি করেছেন তাঁরা।

soma mukhpadhyay doctor hospital holi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy