Advertisement
E-Paper

ধরার ব্যবস্থা নেই, অবাধে ঘুরছে ৯৫ হাজার শুয়োর

এনসেফ্যালাইটিস প্রতিরোধের স্বার্থে ‘শুয়োর হঠাও’ অভিযানের ডাক দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় শুয়োর ধরার কাজ শুরুও হয়েছে। ব্যতিক্রম পশ্চিম মেদিনীপুর। জেলায় এখনও এই অভিযান শুরুই হয়নি। পঞ্চায়েত এবং পুর-এলাকায় অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে ৯৫ হাজার শুয়োর। এলাকা থেকে ‘শুয়োর হঠাও’ অভিযান শুরু করার আর্জি জানিয়ে ইতিমধ্যে প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরে চিঠিও আসতে শুরু করেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৪ ০৩:০০

এনসেফ্যালাইটিস প্রতিরোধের স্বার্থে ‘শুয়োর হঠাও’ অভিযানের ডাক দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় শুয়োর ধরার কাজ শুরুও হয়েছে। ব্যতিক্রম পশ্চিম মেদিনীপুর। জেলায় এখনও এই অভিযান শুরুই হয়নি। পঞ্চায়েত এবং পুর-এলাকায় অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে ৯৫ হাজার শুয়োর। এলাকা থেকে ‘শুয়োর হঠাও’ অভিযান শুরু করার আর্জি জানিয়ে ইতিমধ্যে প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরে চিঠিও আসতে শুরু করেছে। দিন কয়েক আগে খড়্গপুর শহরের হিজলি থেকে চিঠি এসেছে। চিঠি পাঠিয়েছে স্থানীয় এক সোসাইটি। প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতর আবার চিঠিটি পুরসভার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে।

কেন জেলায় ‘শুয়োর হঠাও’ অভিযান শুরু করা যাচ্ছে না?

দফতর সূত্রে খবর, জেলায় সেই পরিকাঠামোই নেই। তাছাড়া নির্দেশ অনুযায়ী, প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতর যেখান-সেখান থেকে এ ভাবে শুয়োর ধরতে পারে না। এ নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করতে হলে তা পঞ্চায়েত কিংবা পুরসভাকেই করতে হয়। আপাতত তাই সচেতনতা প্রচারের উপর বেশি জোর দিয়েছে প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতর। শুয়োরদের টিকাকরণও শুরু হয়েছে। দফতরের উপ-অধিকর্তা তপন সাধু খাঁ বলেন, “জেলার বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতামূলক প্রচার চলছে। প্রচারপত্রও বিলি করা হচ্ছে। টিকাকরণের কাজও চলছে। আমাদের জেলায় এনসেফ্যালাইটিসে কারও মৃত্যু হয়নি। তা-ও সচেতনতার জন্য সমস্ত পদক্ষেপই করা হচ্ছে।” সব শুয়োরের টিকাকরণ সত্যিই সম্ভব? তপনবাবুর জবাব, “আমরা চেষ্টা করছি।”

পশ্চিম মেদিনীপুরে ঠিক কত শুয়োর রয়েছে? সরকারি হিসেব অনুযায়ী, সংখ্যাটা ৯৫,২৫৩। বেসরকারি মতে সংখ্যাটা এর থেকেও বেশি। জেলার ২৯টি ব্লকের মধ্যে সব থেকে বেশি শুয়োর রয়েছে গড়বেতা-৩ ব্লকে (চন্দ্রকোনা রোড) ৯,০২৮টি। আর ৮টি পুরসভার মধ্যে সব থেকে বেশি শুয়োর রয়েছে ঝাড়গ্রামে ৫৮৬টি। শুয়োরই জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের অন্যতম বাহক। এদের শরীরে বাসা বাঁধে সেই ভাইরাস, যা কিউলেক্স বিশনোই প্রজাতির মশার কামড়ে মানবদেহে সংক্রমিত হয়। এই ভাইরাস যুক্ত বিশনোই মশা কোনও মানুষকে কামড়ালে তার জাপানি এনসেফ্যালাইটিস হওয়ার সমূহ আশঙ্কা থাকে। অবশ্য উত্তরবঙ্গে আক্রান্তদের অধিকাংশের দেহে অন্য রোগ-জীবাণু হামলা চালিয়েছে, যার অন্যতম বাহক জল। এ ক্ষেত্রে সংক্রমণের হারও দ্রুততর হয়।

এখন শহরের যত্রতত্রই ঘুরে বেড়াচ্ছে শুয়োর। খড়্গপুরের হিজলির কথাই ধরা যাক। সারি দিয়ে একের পর এক বাড়ি। বসতি এলাকা। রয়েছে গাছপালা। পাশে নর্দমা। নর্দমার আশপাশে অবাধে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় শুয়োরের দল। এই এলাকার অদূরেই রয়েছে খড়্গপুর আইআইটি। এনসেফ্যালাইটিসে উত্তরবঙ্গে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তারপরও কেন শহরকে শুয়োরমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না? খড়্গপুরের উপপুরপ্রধান চিত্তরঞ্জন মণ্ডল বলেন, “আমরা ইতিমধ্যে মাইক-প্রচার করেছি। শুয়োরকে ঘেরা জায়গায় রাখতে বলেছি। শহরের বিভিন্ন এলাকায় মশা মারার তেলও স্প্রে করা হয়েছে।” তাঁর কথায়, “রেল এলাকায় বেশি শুয়োর রয়েছে। রেল পুরসভার কাছে সহযোগিতা চেয়েছিল। আমরা সমস্ত রকম সহযোগিতা করছি।” মেদিনীপুরের উপপুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাসেরও বক্তব্য, “ইতিমধ্যে শুয়োর পালকদের ডেকে আমরা সতর্ক করেছি। এ-ও বলেছি, তাঁরা যদি শহর সংলগ্ন এলাকায় খোঁয়াড় তৈরি করেন, তাহলে পুরসভা থেকে আর্থিক সাহায্যের ব্যবস্থা করা হবে।” একই সঙ্গে উপ-পুরপ্রধান মানছেন, শহরকে রাতারাতি শুয়োরমুক্ত করা সম্ভব নয়।

এখনও পর্যন্ত জেলার কোথাও শুয়োরের খোঁয়াড় তৈরি হয়নি। কোনও পুর-এলাকার আশপাশেও নিয়ম মেনে খামার তৈরি করা হয়নি। যেখানে শুয়োরের দল থাকতে পারে। শুয়োর ধরা সম্ভব নয় বুঝেই জেলায় আপাতত সচেতনতা প্রচার চালাচ্ছে প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতর। বলা হচ্ছে, জাপানি এনসেফ্যালাইটিস ঠিক কী, এ রোগের লক্ষ্মণ কী, চিকিত্‌সা পদ্ধতিই বা কী, রোগ নিয়ন্ত্রণের কী কী উপায় রয়েছে। দফতরের পরামর্শ, রোগটি যেহেতু মশাবাহিত, তাই সবার আগে দরকার মশা নিয়ন্ত্রণ। এ জন্য শুয়োর চাষের এলাকায় ডিডিটি বা অনান্য মশানিধনকারী স্প্রে করতে হবে। শুয়োরের বাসস্থানের চারদিকে ব্লিচিং পাউডার ও চুন ১:৯ ভাগে মিশিয়ে ছড়াতে হবে। জমা জলে ফরমালিন স্প্রে করা যেতে পারে। শুয়োরের বাসস্থান সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বাসস্থানের আশপাশে জমা জল থাকতে দেওয়া যাবে না কারণ সেখানে মশার বংশবৃদ্ধি ঘটে। শুয়োরের কোনও অসুখ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে নিকটবর্তী পশু চিকিত্‌সা কেন্দ্রে যোগাযোগ করতে হবে। প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতরের উপ-অধিকর্তা তপনবাবু বলেন, “ইতিমধ্যে জেলাস্তরে বৈঠক করা হয়েছে। এনসেফ্যালাইটিস একটি ভাইরাস ঘটিত রোগ। এই ভাইরাস শুয়োর ও বকজাতীয় প্রাণীর দেহে ঢুকলে সংখ্যায় বহুগুণ বেড়ে যায়। জেলার বিভিন্ন এলাকায় দফতরের কর্মীরা কাজ করছেন। সচেতনতামূলক প্রচার চালাচ্ছেন। সচেতনতাই তো রোগ নিরাময়ের আদর্শ উপায়।”

encephalities medinipur 95 thousand pigs
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy