Advertisement
E-Paper

নাকের ডাক যখন মৃত্যুর পরোয়ানা

যাঁর ডাকে, তিনি বিশেষ টের পান না। যাঁরা সেই ডাক শোনেন, তাঁরা হাসেন। মজা করেন। বিরক্তও হন কখনও কখনও। নাক-ডাকা কিন্তু নিছক হাসিঠাট্টা বা বিরক্তির বিষয় নয়। নাকের অনেক ডাকই হতে পারে মৃত্যুর অ্যালার্ম বা বিপদঘন্টি, বলছেন চিকিৎসকেরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৪ ০২:৫৮

যাঁর ডাকে, তিনি বিশেষ টের পান না। যাঁরা সেই ডাক শোনেন, তাঁরা হাসেন। মজা করেন। বিরক্তও হন কখনও কখনও।

নাক-ডাকা কিন্তু নিছক হাসিঠাট্টা বা বিরক্তির বিষয় নয়। নাকের অনেক ডাকই হতে পারে মৃত্যুর অ্যালার্ম বা বিপদঘন্টি, বলছেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, চলতি কথায় যাকে নাক-ডাকা বলে, সেই আওয়াজটা কিন্তু নাক থেকে আসে না। আসে গলা আর নাকের মাঝখানের অংশ থেকে। সেখানে বাতাসের গতিবিধি কোনও ভাবে বাধা পেলে শব্দের সৃষ্টি হয়। চিকিৎসাবিদ্যার পরিভাষায় এর নাম ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’। সব স্লিপ অ্যাপনিয়াই নাক-ডাকা, যদিও সব নাক-ডাকাই স্লিপ অ্যাপনিয়া নয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে স্লিপ অ্যাপনিয়াই।

এই নিদ্রারোগ ও তার উপসর্গ, কোন রোগীর ক্ষেত্রে সমস্যার উৎস কী ভাবে খুঁজে বার করা যাবে, কোন পদ্ধতিতে চিকিৎসা হবে, কখন মনে করা হবে চিকিৎসা সফল হয়েছে, তা নিয়ে কথোপকথন ইত্যাদি নিয়ে অন্য ধরনের একটি আলোচনাসভা হয়ে গেল রবিবার বিকেলে। কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে। আয়োজক ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব সার্জনস ফর স্লিপ অ্যাপনিয়া’।

কী ভাবে বাতাস বাধা পেয়ে নাকের বিপজ্জনক ডাক হয়ে ওঠে, আলোচনাসভায় তার একটি দৃষ্টান্ত দেওয়া হল পর্দায় প্রতিফলন ঘটিয়ে। বছর চল্লিশের মোটাসোটা ভদ্রলোক ছ’ঘণ্টা ঘুমোলে তার মধ্যে অন্তত ২৫০০-৩০০০ বার নাক ডাকতেন। নাক ডাকতে ডাকতে বারবার দমবন্ধ হয়ে ধড়মড়িয়ে উঠতেন তিনি। ভেঙে যেত ঘুম। বিশেষ পদ্ধতিতে তাঁকে ঘুম পাড়িয়ে চিকিৎসকেরা গলার মধ্যে দিয়ে এন্ডোস্কোপ ঢুকিয়ে গলা ও শ্বাসনালির ভিতরের অবস্থা দেখেছিলেন। সেখানে স্তরে স্তরে জমে ছিল মাংস। শ্বাস নেওয়ার সময় বাতাস ঠিকমতো ঢুকতে পারছিল না। কনফারেন্স রুমের স্ক্রিনে সেই এন্ডোস্কোপির ছবি দেখানো হল।

রোগ ও উপসর্গ, সমস্যার উৎস সন্ধান, চিকিৎসার পদ্ধতি নিয়ে মঞ্চে বসে থাকা বিশেষজ্ঞদের নানা প্রশ্ন করলেন আলোচনাসভার সঞ্চালক, ইএনটি বিশেষজ্ঞ দীপঙ্কর দত্ত। নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে নিলেন ইএনটি বিশেষজ্ঞ, বক্ষঃরোগ বিশেষজ্ঞ, বেরিয়াট্রিক সার্জন, হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ, অ্যানেস্থেশিস্টরা। আলোচনার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করলেন সংগঠনের আঞ্চলিক কো-অর্ডিনেটর দীপঙ্করবাবু। বললেন, “নাক-ডাকা যে মজার বিষয় নয়, এটা ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’র মতো একটা মারাত্মক সমস্যার আগাম বিপদঘন্টি, সেই বিষয়ে সচেতন করতেই এই ধরনের সভার আয়োজন করা হয়েছে।”

আলোচকেরা জানালেন, ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ কথাটির সঙ্গে অনেকেই অপরিচিত। চিকিৎসকদের ব্যাখ্যা, নাক ডাকতে ডাকতে শ্বাস আটকে যাওয়াই হল এই রোগ। শরীরে মেদ বেড়ে গেলে, সঙ্গে ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ থাকলে এই রোগের আশঙ্কা বাড়ে। দেহের ভিতরে জমে ওঠা মেদের বাধায় বাতাস ভাল ভাবে শরীরে ঢুকতে পারে না। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। ঘুমন্ত অবস্থায় দম আটকে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। স্লিপ অ্যাপনিয়ার রোগীদের ঘুমের মধ্যে মৃত্যুর হার প্রায় ৪৬ শতাংশ।

প্রশ্ন উঠল, ঘুমের মধ্যে দম আটকে যাওয়ার সমস্যা নিয়ে কোনও রোগী এলে চিকিৎসক তাঁর কাছ থেকে কী কী জানতে চাইবেন?

ইএনটি বিশেষজ্ঞ কৌশিক দাস, বিকাশ অগ্রবাল, জে এন গুর্তু, বিশ্বরূপ মুখোপাধ্যায়, বক্ষঃরোগ বিশেষজ্ঞ অরূপ হালদার-সহ প্রত্যেকেরই জবাব: জানতে হবে, সারা দিনে রোগী কতটা ক্লান্ত বা ঝিমিয়ে থাকেন। কত বার রাতে জেগে ওঠেন। সেই সঙ্গেই এটা জেনে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, রোগীর হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস অথবা থাইরয়েড রয়েছে কি না।

ওই সব রোগীর ক্ষেত্রে চিকিৎসককে কী করতে হবে?

চিকিৎসকদের জবাব: রোগীর ‘পলিসমনোগ্রাফি’ করা অত্যন্ত দরকারি। অর্থাৎ রোগীকে ঘুম পাড়িয়ে দেখে নিতে হবে, কী ভাবে কত বার দম আটকে যাচ্ছে। পরীক্ষা করতে হবে, কী ভাবে ডাকছে নাক। চিকিৎসকদের কথায়, “রোগটা স্লিপ অ্যাপনিয়া, নাকি অন্য কোনও ধরনের ‘স্লিপ ডিসঅর্ডার’, সেটা বোঝা যায় পলিসমনোগ্রাফি পরীক্ষায়।” সেই পরীক্ষার পরে নিরাময়ের জন্য চিকিৎসক প্রয়োজনীয় ওষুধ আর আনুষঙ্গিক ব্যবস্থাপত্র দেবেন।

ঠিক কী ভাবে বোঝা যাবে যে, চিকিৎসা ফলপ্রসূ হয়েছে?

আলোচনাসভায় উপস্থিত চিকিৎসকেরা একবাক্যে জানিয়ে দেন, শুধু নাক-ডাকা কমে গেলেই সমস্যার সমাধান হয়েছে ভেবে নিলে ভুল হবে। যখন রোগী নিজে চাঙ্গা বোধ করবেন, বারবার দমবন্ধ হয়ে ঘুম থেকে উঠবেন না, সারা দিন ঝিমিয়ে থাকবেন না অর্থাৎ সামগ্রিক ভাবে তাঁর জীবনধারণের মানের উন্নতি ঘটবে, একমাত্র তখনই বলা যেতে পারে, রোগী আপাতত স্লিপ অ্যাপনিয়ার বিপদ থেকে মুক্ত হয়েছেন।

snoring
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy