Advertisement
E-Paper

নিয়োগ বন্ধ, চিকিৎসক সঙ্কটে বন্ধ হতে বসেছে দাতব্য চিকিৎসালয়

একের পর এক চিকিৎসক অবসর নিচ্ছেন। কিন্তু তাঁদের জায়গায় আর কাউকে নিয়োগ করা হচ্ছে না। এই অবস্থায় চিকিৎসক সঙ্কটে পড়েছে হাওড়া জেলা পরিষদ পরিচালিত দাতব্য চিকিৎসালয়গুলি। জেলায় মোট আটটি পুরো সময়ের দাতব্য চিকিৎসালয় রয়েছে। এখানে অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা হয়। কিন্তু ছয়জ অবসর নেওয়ার পরে চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র দু’টি চিকিৎসালয়ে।

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৪ ০১:২৬
বন্ধ মহিয়াড়ি দাতব্য চিকিৎসালয়। ছবি: সুব্রত জানা।

বন্ধ মহিয়াড়ি দাতব্য চিকিৎসালয়। ছবি: সুব্রত জানা।

একের পর এক চিকিৎসক অবসর নিচ্ছেন। কিন্তু তাঁদের জায়গায় আর কাউকে নিয়োগ করা হচ্ছে না। এই অবস্থায় চিকিৎসক সঙ্কটে পড়েছে হাওড়া জেলা পরিষদ পরিচালিত দাতব্য চিকিৎসালয়গুলি।

জেলায় মোট আটটি পুরো সময়ের দাতব্য চিকিৎসালয় রয়েছে। এখানে অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা হয়। কিন্তু ছয়জ অবসর নেওয়ার পরে চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র দু’টি চিকিৎসালয়ে। এই দু’জনের মধ্যে আবার জুলাই মাসে অবসর নেবেন একজন। বাকিজনের অবসর নেওয়ার কথা ২০১৬ সালে। তার পর থেকে আটটি দাতব্য চিকিৎসালয়ই চিকিৎসকহীন হয়ে পড়বে বলে জেলা পরিষদ সূত্রের খবর।

জেলা পরিষদের এই চিকিৎসাকেন্দ্রগুলি যথেষ্ট পুরনো। তৎকালীন ডিস্ট্রিক্ট বোর্ড-এর আমলে ডোমজুড়ের মহিয়াড়ি ও মাকড়দহ, সাঁকরাইলের রাজগঞ্জ, উদয়নারায়ণপুরের সিংটি ও বড়দা, জগৎবল্লভপুরের গড়বালিয়া শ্যামপুর এবং আমতায় দাতব্য চিকিৎসালয়গুলি তৈরি হয়েছিল। দাতব্য চিকিৎসালয়ে শুধু যে একজন চিকিৎসক থাকতেন তা নয়, রয়েছেন কম্পাউন্ডার, চতুর্থ শ্রেণির কমী এবং সাফাইকর্মী। প্রতিদিন সকাল ৯টায় এগুলি খোলা হয়। বন্ধ হয় বিকেল পাঁচটায়। রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধপত্র দেওয়া হয়। রোগীদের কাছ থেকে ফিজ নেওয়া হয় প্রথমবার দু’টাকা। তারপর নেওয়া হয় এক টাকা করে। চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের বেতন দেওয়া হয় জেলা পরিষদ থেকে। ওষুধপত্র আসে জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে।

কিন্তু কয়েক বছর ধরে যে সব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী অবসর নিয়েছেন তাঁদের জায়গায় আর নতুন করে কাউকে নিয়োগ করা হয়নি। ফলে গ্রামীণ মানুষকে বিনাপয়সায় চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার এই ব্যবস্থা এখন বন্ধ হওয়ার জোগাড়। গত দু’বছর ধরে চার জন চিকিৎসককে দিয়ে আটটি চিকিৎসালয় চালানো হচ্ছিল। ফলে একেক জন চিকিৎসকের হাতে ছিল দু’টি করে দাতব্য চিকিৎসালয়ের দায়িত্ব। সপ্তাহে তিন দিন করে তাঁরা একেকটি চিকিৎসালয়ে বসতেন। কিন্তু গত দু’মাসে দু’জন চিকিৎসক অবসর নেন। ফলে চারটি দাতব্য চিকিৎসালয় একেবারেই বন্ধ। বর্তমানে সিংটি এবং বড়দা এই দু’টি দাতব্য চিকিৎসালয় চালাচ্ছেন একজন চিকিৎসক। অন্য দিকে শ্যামপুর এবং রাজগঞ্জের দায়িত্ব রয়েছে একজন চিকিৎসকের হাতে। সিংটি এবং বড়দা এই দু’টি চিকিৎসালয় যিনি চালাচ্ছেন তিনি অবসর নেবেন ৩১ জুলাই। ফলে তার পর থেকে এই দু’টি চিকিৎসালয়েরও বাকিগুলির মতো অবস্থা হবে। অন্যদিকে শ্যামপুর এবং রাজগঞ্জের দায়িত্বে যিনি রয়েছেন তিনি অবসর নেবেন ২০১৬ সালে। ফলে সেখানেও একই সমস্যা।

নর্থব্রুক জুটমিলের মিলের ভিতরে তদন্তে পুলিশ।—নিজস্ব চিত্র।

সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের বক্তব্য, জেলা পরিষদের দাতব্য চিকিৎসালয়গুলি তাঁদের বেশ উপকারে আসত। কম খরচে ছোটখাটো অসুখের চিকিৎসা করাতে পারতেন তাঁরা। ওষুধেরও অভাব ছিল না। ফলে চিকিৎসকের অভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া দাতব্য চিকিৎসালয়গুলিতে চিকিৎসক নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

মহিয়াড়ির দাতব্য চিকিৎসালয়ের চিকিৎসক অবসর নিয়েছেন গত ৩১ মে। আগেই অবসর নিয়েছেন কম্পাউন্ডার। চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী কার্তিকচন্দ্র দাস বললেন, “প্রতিদিন ৭০-৮০ জন রোগী আসেন। চিকিৎসক অবসর নিলেও রোগী আসার বিরাম নেই। বাধ্য হয়ে তাঁদের পাঠিয়ে দিচ্ছি পাশেই লক্ষ্মীকমল হাসপাতালে।”

জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরই চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের বেতন দিত। কিন্তু যে সব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী অবসর নিচ্ছেন তাঁদের জায়গায় কাউকে আর নিয়োগ করেনি পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর। ফলে সমস্যা হচ্ছে। জেলা পরিষদের সহকারি সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্য এবং জনস্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মাধ্যক্ষ সীতানাথ ঘোষ বলেন, “শুনেছি পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর এইসব পদ তুলে দিতে চাইছে। বিষয়টি সঠিক ভাবে জানতে আমরা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরে চিঠি লিখেছি।” তবে একই সঙ্গে তাঁদের বক্তব্য, যদি পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর পদগুলি তুলে দেয় তা হলে জেলা পরিষদের নিজস্ব তহবিলের টাকায় চিকিৎসক নিয়োগ করা হবে। সে ক্ষেত্রে অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসকদেরই অনুরোধ করা হবে ফের যেন তাঁরা পরিষেবা দেন। তাঁরা রাজি না হলে নতুন চিকিৎসক নিয়োগ করা হবে। দাতব্য চিকিৎসালয় বন্ধ করা যাবে না।

howrah health center nurul absar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy