Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নজর পড়ল মুখ্যমন্ত্রীর, বন্ধ হল হাসপাতালে দুর্গোৎসব

দেবীর ‘চৈতন্যরূপ’ দেখালেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং! তাই বন্ধ হল হাসপাতাল চত্বরের প্রস্তাবিত দুর্গাপুজো। প্যান্ডেল বাঁধা শুরু হয়ে গিয়েছিল। ঢাক, মাইকের ব্যবস্থা পাকা। চাঁদা তোলার কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। কে, কবে, কাদের নিয়ে কুমোরটুলিতে প্রতিমা আনতে যাবেন, সে সব পরিকল্পনাও চূড়ান্ত।

সেই পুজোর বিল

সেই পুজোর বিল

সোমা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৪৬
Share: Save:

দেবীর ‘চৈতন্যরূপ’ দেখালেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং! তাই বন্ধ হল হাসপাতাল চত্বরের প্রস্তাবিত দুর্গাপুজো।

প্যান্ডেল বাঁধা শুরু হয়ে গিয়েছিল। ঢাক, মাইকের ব্যবস্থা পাকা। চাঁদা তোলার কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। কে, কবে, কাদের নিয়ে কুমোরটুলিতে প্রতিমা আনতে যাবেন, সে সব পরিকল্পনাও চূড়ান্ত। শেষ মুহূর্তে বাদ সাধল স্বাস্থ্য ভবনের এক শীর্ষ কর্তার ফোন। তিনি জানালেন, খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোটা বিষয়টিতে ঘোরতর অসন্তুষ্ট। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, হাসপাতাল দুর্গাপুজো করার জায়গা নয়। তাই বাতিল করতে হবে ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রিতে পুজো করার ‘অভিনব’ পরিকল্পনা!

হাসপাতালের চিকিৎসকদের একটা বড় অংশই গোটা বিষয়টিতে বিস্মিত। তাঁদের প্রশ্ন, একটি হাসপাতালের ভিতরে এ ভাবে দুর্গাপুজো করার পরিকল্পনা এত দূর এগোলোই বা কী ভাবে? মুখ্যমন্ত্রী দূর থেকে বিষয়টি জেনে হস্তক্ষেপ করলেন। কিন্তু যাঁরা নিজেরা এই পুজোর পরিকল্পনা করছিলেন, তাঁদের মনে এক বারও খটকা লাগল না? বিষয়টি নিয়ে চিকিৎসকদের কয়েক জন স্বাস্থ্য ভবনে অভিযোগও জানিয়েছেন।

হাসপাতাল সূত্রে খবর, প্রতিষ্ঠানের অধিকর্তা প্রদীপ সাহা নিজেই পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা। তিনিই চাঁদা নির্ধারণ করেছেন। তিনিই পুজোর বাজেট ঠিক করেছেন। আনন্দবাজার-এর হাতে পুজোর বাজেটের যে কাগজ এসেছে, সেখানেও অধিকর্তার সই-ই দেখা গিয়েছে। যদিও প্রদীপবাবুর দাবি, এই পুজোর পরিকল্পনা করেছিলেন হাসপাতালের আবাসনে বসবাস করা কিছু কর্মী। তিনি বলেন, “আমি গোটা বিষয়টির মধ্যে কোনও ভাবেই জড়িত নই। সরকারি হাসপাতালে এ ভাবে পুজো করার অনুমতি দেওয়া যায় না। তাই আমিই ওঁদের পুজো করতে বারণ করেছি। আমার নামে পুজোর বাজেটের কাগজ কী ভাবে তৈরি হতে পারে, জানি না।”

স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, পুজোর পরিকল্পনার বিন্দুবিসর্গ জানানো হয়নি সেখানে। মুখ্যমন্ত্রী পরিকল্পনার কথা কোনও ভাবে জানতে পেরে খুবই অসন্তুষ্ট হন। অবিলম্বে সমস্ত ব্যবস্থা বন্ধ করার জন্য স্বাস্থ্য কর্তাদের নির্দেশ দেন তিনি। তখনই তড়িঘড়ি স্বাস্থ্য ভবন থেকে ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রিতে পুজো বন্ধ করার কথা বলা হয়। এক চিকিৎসক বলেন, “আচমকাই চাঁদা চাওয়া হয়েছিল। আর বৃহস্পতিবার আচমকাই কর্মীদের ডেকে বলা হয়, দমকলের ছাড়পত্র পাওয়া যায়নি, তাই পুজো হবে না। চাঁদার টাকাও ফেরত দেওয়া হল। সত্যিই যদি পুজো হত, হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করতাম আমরা।”

রাজ্যে মনোরোগীদের অন্যতম সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রি। এর পাশেই স্নায়ুরোগ চিকিৎসার উৎকর্ষকেন্দ্র বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজি (বিআইএন)। ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রির অ্যাকাডেমিক বিল্ডিংয়ের সামনেই প্যান্ডেল বাঁধা শুরু হয়েছিল। পদাধিকার অনুসারে ২০০ টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদাও ধার্য হয়েছিল। এক চিকিৎসক বলেন, “আমরা অনেকেই আপত্তি তুলেছিলাম। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কানেই তোলেননি। উল্টে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চাঁদার টাকা জমা দিতে বলা হয়েছিল। না দিলে ‘যথাযথ ব্যবস্থা’ নেওয়ার প্রচ্ছন্ন হুমকিও ছিল।

সাধারণ ভাবে পুজোর সময়ে মানসিক হাসপাতালের রোগীদের এক সেট করে নতুন পোশাক দেওয়া হয়। পুজোর ক’দিন স্পেশ্যাল মেনুও থাকে। কোনও কোনও হাসপাতালে আবার পঞ্চমীর বিকেল বা ষষ্ঠীর সকালে রোগীদের বাসে চড়িয়ে কিছু মণ্ডপে ঠাকুর দেখতেও নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালে পুজো করে রোগীদের মনোরঞ্জনের কথা কখনও ভাবা হয়নি।

বিআইএন-এর এক চিকিৎসক বলেন, “গুরুতর রোগীরা এখানে ভর্তি থাকেন। এর ঠিক সামনেই ঢাক, মাইক বাজিয়ে পুজো হবে বলে স্থির হয়েছিল। এতে রোগীদের ভোগান্তি বহু গুণ বাড়ত। এই পরিকল্পনাই যথেষ্ট লজ্জাজনক।”

সরকারি হাসপাতালের ভিতরে চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের কালীপুজো, ছট পুজোর উৎসব কিংবা হাসপাতাল চত্বরের ভিতরের মাজারে নানা অনুষ্ঠান নিয়ে একাধিক বার আপত্তি উঠেছে। প্রতিবারই স্বাস্থ্য কর্তারা জানিয়েছেন, এমন হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। কিন্তু কোনও বারই বিষয়টি ঠেকাতে পারেননি। এ বার যে ঠেকানো গেল, তাতে তাঁরা স্বস্তির শ্বাস ফেলেছেন। এক কর্তার কথায়, “ভাগ্যিস মুখ্যমন্ত্রী জেনেছিলেন। কী দুর্দশাই হত তা না হলে!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mamata hospital durga puja soma mukhopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE