চার-পাঁচ দিন ধরে প্রবল জ্বর। থার্মোমিটারে প্রায় ১০৩-১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠে যাচ্ছে। গলায় ব্যথা-চোখ লাল-মাথায় ব্যথা। সঙ্গে খুব দুর্বলতা। দেখেশুনে ডাক্তার বললেন, ‘হিট ফিভার।’ আর লাল চোখের কারণ কনজাংটিভাইটিস। তাই প্রেসক্রিপশনে প্যারাসিটামলের সঙ্গে যোগ হল সাধারণ চোখের ড্রপ। কিন্তু তাতে কাজের কাজ তো কিছু হলই না, উপরন্তু চোখের কোণ বেয়ে রক্ত গড়ানো শুরু হল। রোগী নিজে তো বটেই, পাশাপাশি গোটা পরিবারই আতঙ্কিত। আসলে রোগটার পোশাকি নাম ‘ফ্যারিঙ্গোকনজাংটাইভাল ফিভার’। শহরে চোখের চিকিৎসকদের চেম্বারে এখন এমন রোগীর ভিড় বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, এই রোগের জন্য দায়ী অ্যাডিনোভাইরাস। তার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে গলা, চোখ-সহ বিভিন্ন প্রত্যঙ্গে। যাদের শরীরে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনায় কম, তাদেরই বেশি আক্রমণ করে এই ভাইরাস। চক্ষু-চিকিৎসক শৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সংক্রমণ হলে জ্বর এবং কানের সামনের অংশটা ফুলে থাকে। সংক্রমণ আটকাতে না পারলে ফুসফুসেও তা ছড়িয়ে পড়ে।”
যে কোনও বয়সেই এই সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে সমস্যাটা বেশি। শৌভিকবাবুর কথায়, “চিকিৎসকদেরও সতর্ক থাকতে হবে। সাধারণ ভাইরাল ফিভারের সঙ্গে বিষয়টাকে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। সাধারণ ভাইরাল ফিভারে জ্বর, গা-হাত পায়ে ব্যথা, খিদে না হওয়া ইত্যাদি থাকে। তার সঙ্গে যদি আবার চোখ লাল হয় এবং গলা-কানের গোড়া ফোলে, তা হলে প্রথম থেকেই চিকিৎসা জরুরি। অ্যান্টিবায়োটিক এবং অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ দরকার।”
একটি বেসরকারি চক্ষু-হাসপাতালের অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যের মতে, “জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল এবং চোখের জন্য সাধারণ টিয়ার ড্রপই যথেষ্ট। গোড়ায় অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কর্নিয়া যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তা হলে চোখে ঝাপসা দেখা শুরু হবে। সে ক্ষেত্রে স্টেরয়েড ড্রপ প্রয়োজন। কিন্তু সেটা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিতে হবে। ওষুধের দোকানে গিয়ে ইচ্ছেমতো ড্রপ কিনলে বিপদ।” চিকিৎসক সুমিত চৌধুরীও বলেন, “কর্নিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হলে তবেই অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ প্রয়োজন। তা না হলে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ড্রপ এবং চোখ ঠান্ডা করার ড্রপেই কাজ চলে যায়।”
ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু-বিভাগের প্রধান চিকিৎসক জ্যোতির্ময় দত্ত বলেন, “সাধারণত একই সঙ্গে দু’চোখেই সংক্রমণ হয়। কনজাংটাইভাল ব্লাড ভেসেল ছিঁড়ে গিয়ে রক্তক্ষরণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কখনও কনজাংটাইভার ভিতরেই রক্তক্ষরণ হয়। কখনও আবার রক্ত বাইরে চলে আসে। মণির পাশে সাদা অংশে লাল ডটের মতো রক্তবিন্দুও দেখা যায় বহু ক্ষেত্রে।”
চোখের চিকিৎসকদের একটা বড় অংশই জানাচ্ছেন, এই সংক্রমণের ক্ষেত্রে চিকিৎসা দেরিতে শুরু হওয়াটা যথেষ্ট ঝুঁকির। সে ক্ষেত্রে রক্তনালী ফেটে চোখ থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে যেতে পারে। রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অব অপথ্যালমোলজির চিকিৎসক হিমাদ্রি দত্ত বলেন, “সমস্যাটা কতটা তীব্র, সেটা বলতে পারবেন একমাত্র চিকিৎসকেরাই। চোখ লাল এবং গলা ব্যথা হলে ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসা করাটাই শ্রেয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy