হাসপাতালে মেলে না বসার জায়গাও। —নিজস্ব চিত্র।
রবিবার রাতে বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক হলেও ফেরেনি পরিষেবা।
সোমবার বেলা ১১টা নাগাদ বেলডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালে ঢুকে দেখা গেল চারিদিকে জমে রয়েছে কাদা। তার পাশে প্রচুর ভ্যান রিকশা, বেসরকারি গাড়ি ভিড় করে আছে। প্রচুর আগাছা হাসপাতাল চত্বরের চারপাশে। হাসপাতালের মূল ভবনের প্রবেশ দ্বারে সারি সারি ছাগল বসে আছে। খানিক এগোতেই ইমারজেন্সির একটু আগে বসার জায়গা না পেয়ে মাটিতে বসে পড়েছেন রোগীদের পরিবারের শিশু ও মহিলারা। রোগী দেখানোর লম্বা লাইনে ঠায় দাঁড়িয়ে অসুস্থ মানুষ। একটু এগিয়ে বাঁ দিকে যেতেই লাইনের আরও একটা অংশ। পাশেই ছাগলের পাল ঠায় দাঁড়িয়ে। দোতলায় উঠতেই সিঁড়ির বাঁ দিকের দেওয়ালে সাদার উপর নীলে থুতু ও পানের পিক না ফেলার যে নির্দেশিকাটি রয়েছে, তার ‘না’-টা কে মুছে দিয়েছে কে? শুধু তাই নয়, তার উপরেই অজস্র সদ্য ফেলা থুতু ও পানের পিক।
সিঁড়িরও একই অবস্থা। উপরে উঠে মেল ও ফিমেল ওয়ার্ডে মোট ৩০টি বেড থাকলেও সব সময়েই ৭০ জনের উপর রোগী ঠাসাঠাসি করে শুয়ে আছেন। ভনভন করছে মাছি। মোট ছয়টি শৌচালয় থাকলেও কোনওটিই ব্যবহারের উপযুক্ত নয়। পরিচ্ছন্নতার অভাবে এমনই অবস্থা, একান্ত বাধ্য না হলে সেখানে কেউ ঢোকেন না। পানীয় জল নিয়েও সমস্যার অন্ত নেই। দু’টি নলকূপ থাকলেও মাঝে মাঝেই সেখানে জল পরে না। জলে আর্সেনিকও আছে। ড্রেনগুলো প্লাস্টিক জমে বন্ধ। সর্বত্র প্লাস্টিক পরে রয়েছে। কোথাও স্তূপ।
স্বাস্থ্য কর্মী আবাসনে কখনও কখনও কেউটে সাপও ঢুকে যাচ্ছে। এদিকে কর্মীর অভাবের কথাও বলা হয়েছে। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ৬ জন ডাক্তারের জায়গায় রয়েছেন ৪ জন। ঝাড়ুদার ৫ জনের মধ্যে ৩ জন। ফার্মাসিস্ট দু’জনের বদলে ১ জন। নার্স ১২ জনের জায়গায় ১০ জন। কর্মীর অভাবে বন্ধ মর্গ। অ্যানাসথেটিস্ট ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অভাবে তৈরি হওয়া অপারেশন থিয়েটার বন্ধ। যন্ত্রপাতি কিন্তু সবই আছে। হাসপাতালে উপস্থিত পারুল বিবি বলেন, “সব থাকতেও প্রসূতির অবস্থা একটু জটিল হলেই তাঁকে ২২ কিলোমিটার দূরে বহরমপুরে রেফার করে দেওয়া হয়।”
শুধু তাই নয়, সূর্য পাটে নামলেই এলাকা চলে যায় সমাজ বিরোধীদের দখলে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, হাসপাতাল চত্বরেই তখন অবাধে চলে গাঁজা, জুয়া ও মদের আসর। ছয় বছর আগে এখানকার পুলিশ ক্যাম্পটি উঠে যাওয়াতেই এই সমস্যাগুলি দেখা দিয়েছে। মর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের কংগ্রেস সদস্য ও এলাকার বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম বলেন, “হাসপাতালের পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর। স্বাস্থ্যকর পানীয় জল পাওয়া যায় না। বাথরুম যেন নরক। যত্রতত্র মদের বোতল পড়ে থাকে।” আগাছা পরিষ্কারের কোনও ব্যবস্থা নেই। বেলডাঙার বিধায়ক তথা এই হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির দায়িত্বপ্রাপ্ত সফিউজ্জাম জানান, এই হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল এলাকার চার লক্ষাধিক মানুষ। তিনি বলেন, “রোগীর চাপ সামলাতে এই হাসপাতালকে স্টেট জেনারেল হাসপাতালে রূপান্তরিত করার অনুরোধ করা হয়েছে দু’বছর আগে। কিন্তু সে সম্পর্কে আজও কোনও খবর পাওয়া যায়নি।”
হাসপাতালের সুপার দেবদত্ত বড়াল বলেন, “পরিকাঠামো থাকলেও কর্মীর অভাবে পরিষেবা দেওয়া যাচ্ছে না। আমরাও বিপদের মুখে পড়ছি।” তিনি জানান, ১০ দিন আগে তাঁর আবাসনেই একটা কেউটে সাপ ঢুকেছিল। কোনও মতে তা চোখে পড়ে যাওয়ায় বড় বিপদের হাত থেকে বেঁচেছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy