Advertisement
E-Paper

বরাহ-বাহিনী ছোটাল দিনভর, ধরা দিল ১৮টি

বাজনার চেয়ে খাজনা কম! হাওড়া পুরসভার শুয়োর ধরা অভিযানের প্রথম দিনে সারকথা এটাই। এলাকা জুড়ে যখন কয়েক হাজার শুয়োরের দল দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, তখন দিনভর পুরকর্তাদের হাঁকডাক, পুরকর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের পরে বুধবার বিকেল পর্যন্ত খোঁয়াড়ে পোরা গিয়েছে মাত্র ১৮টিকে! বাকিদের কী ভাবে কত দিনে জালে বন্দি করা যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৪ ০২:৩১
অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য।

অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য।

বাজনার চেয়ে খাজনা কম!

হাওড়া পুরসভার শুয়োর ধরা অভিযানের প্রথম দিনে সারকথা এটাই। এলাকা জুড়ে যখন কয়েক হাজার শুয়োরের দল দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, তখন দিনভর পুরকর্তাদের হাঁকডাক, পুরকর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের পরে বুধবার বিকেল পর্যন্ত খোঁয়াড়ে পোরা গিয়েছে মাত্র ১৮টিকে! বাকিদের কী ভাবে কত দিনে জালে বন্দি করা যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গিয়েছে।

জাপানি এনসেফ্যালাইটিস মোকাবিলায় হাওড়ার ৯টি এলাকাকে চিহ্নিত করে সেখানে ৫০টি শুয়োরের খোঁয়াড় তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় হাওড়া পুরসভা। ঠিক হয়, লোহার খাঁচা তৈরি করে তার চার দিক ঢেকে দেওয়া হবে মশারি দিয়ে। থাকবে পর্যাপ্ত আলো এবং সিসিটিভি-র ব্যবস্থাও। এমনকী, শুয়োরদের যাতে মশা না কামড়ায়, সে জন্য খাঁচায় যেমন সর্বদা পাখা চলবে, তেমনই মাঝেমধ্যে ছড়ানো হবে মশা মারা তেলও।

ব্যবস্থার ত্রুটি ছিল না। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, শুয়োরের খোঁয়াড় তৈরির সিদ্ধান্ত হওয়ার পরেই রাতারাতি এক ঠিকাদারকে গ্রিল তৈরির কারখানায় লোহার জাল তৈরির ভার দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, রাস্তায় ব্যারিকেড দেওয়ার জন্য পুলিশ যে মোটাসোটা লোহার রেলগার্ড ব্যবহার করে, তেমনই ২০ বর্গফুট মাপের খাঁচা তৈরির মতো রেলগার্ড বানাতে হবে। কেনা হয়েছিল কয়েকশো ফুট মশারির মতো জাল। প্রাথমিক ভাবে খোঁয়াড় তৈরির এই উদ্যোগে পুরসভার অর্থ ভাণ্ডার থেকে ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়।

হাওড়ায় শুয়োরদের জন্য জালে ঘেরা নতুন বাসস্থান।—নিজস্ব চিত্র

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়ায় যেহেতু সব থেকে বেশি শুয়োর রয়েছে বেলগাছিয়া ভাগাড়ে, তাই ওই জায়গাটিকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল প্রথম খোঁয়াড় তৈরির জন্য। এ দিন সকালে তাই লোকলস্কর, গাড়ি-ঘোড়া নিয়ে ভাগাড়ের নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে যান ঠিকাদারের কর্মী ও পুরকর্মীরা। বিষয়টি দেখভালের জন্য হাজির ছিলেন হাওড়া পুরসভার মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল অপসারণ) গৌতম চৌধুরীও। ভিড় জমিয়েছিলেন স্থানীয় হরিজন বস্তির কয়েকশো বাসিন্দাও, যাঁদের অধিকাংশেরই ব্যবসা শুয়োর প্রতিপালন।

দুপুর দেড়টা। হাওড়ার সমস্ত জঞ্জাল যেখানে ফেলা হয়, সেই বেলগাছিয়া ভাগাড়ের একটি জায়গায় খোঁয়াড় তৈরির জোর প্রস্তুতি চলছে। মশারির মতো জাল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে সদ্য তৈরি খোঁয়াড়টি। চার দিকে লাগানো হয়েছে জোরালো হ্যালোজেন বাতি। মশার উপদ্রব আটকাতে খোঁয়াড়ের ভিতরে বসে গিয়েছে পেডেস্টাল ফ্যান। সবই হয়েছে। কিন্তু যাদের জন্য এত আয়োজন, তাদের আনবে কে?

প্রশ্ন ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই হাঁকডাক শুরু করে দিলেন গৌতমবাবু। “ডাবলা কোথায়? ওকে ওর শুয়োরগুলো আনতে বল! শুয়োরের বাকি মালিকদের খবর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা কোথায়?”

মেয়র পারিষদের ডাকাডাকিতে ছুটে এলেন পুরকর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। সঙ্গে সঙ্গে এলাকার যুবক ও বাচ্চাদের দল ছুটল শুয়োর খুঁজতে। মিনিট দশেকের মধ্যে ফিরেও এল। দেখা গেল, ৭-৮টি ছোট-বড় শুয়োর লাইন দিয়ে খাঁচার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পিছনে যুবক ও শিশুদের দলটি। খাঁচার দু’পাশে তখন উত্তেজিত জনতা। সকলেই নানা রকম আওয়াজ করে শুয়োরদের ডাকছেন। সম্ভবত তাতেই ঘাবড়ে গিয়েছিল বরাহ-বাহিনী। খাঁচায় না ঢুকে সটান উল্টো দিকে দৌড় দেয় তারা। ফের রে রে করে পিছনে ধাওয়া করে জনতা। কিন্তু কোথায় কে! আবর্জনার পাহাড়ে ততক্ষণে হারিয়ে গিয়েছে শুয়োরের দল। তাই ফের নতুন উদ্যমে শুরু হয়ে যায় শুয়োর ধরার চেষ্টা। এক বার এবং বারবার।

বিকেল সাড়ে তিনটে। পরিস্থিতি সরেজমিন খতিয়ে দেখতে ঘটনাস্থলে পৌঁছলেন মেয়র রথীন চক্রবর্তীও। সঙ্গে আর এক মেয়র পারিষদ শ্যামল মিত্র। একই সঙ্গে খোঁয়াড়ের ভিতর মশা মারার ওষুধ ছড়াতে কলকাতা থেকে সেখানে হাজির এক বেসরকারি সংস্থার কর্মীও। এত ক্ষণের যুদ্ধে অবশ্য ধরে-বেঁধে খাঁচায় পোরা গিয়েছে মাত্র ১৮টি শুয়োরকে।

কিন্তু এলাকায় তো ঘুরে বেড়াচ্ছে কয়েক হাজার শুয়োর। বাকিদের কী ভাবে খোঁয়াড়ে ঢোকানো হবে?

মেয়র বলেন, “এটা একটা বড় প্রশ্ন। শুয়োর ধরার পরিকাঠামো মনে হয় কোনও পুরসভারই থাকে না। তবে সকলের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিপালনকারীদের অনুরোধ করেছি শুয়োরদের এই খোঁয়াড়ে জমা করতে। আমরাই তাদের খাবার দেব। আশা করি শুয়োরের মালিকেরা ধীরে ধীরে বিষয়টা বুঝবেন।”

মেয়র এ কথা বললেও পুরসভার অন্য একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন পুলিশের তরফে ওই এলাকার ১৭ জন শুয়োর প্রতিপালকের তালিকা তৈরি করে তাঁদের সেখানে থাকতে বলা হয়েছিল। কিন্তু এ দিন তাঁদের কারওরই দেখা মেলেনি।

pig capture encephalitis japanese encephalitis howrah
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy