সপ্তাহের প্রথম দিনে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বহির্বিভাগ খোলা না পেয়ে হাসপাতালে বিক্ষোভ ও রাস্তা অবরোধ করলেন রোগী এবং তাঁদের পরিজনেরা। সোমবার সকালে ঝালদা ২ ব্লক সদর কোটশিলায় গ্রামীণ হাসপাতালের এই ঘটনায় পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে। তবে বিক্ষোভ চলতে থাকে। শেষে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক (বিএমওএইচ) শক্তিপদ মুর্মু বহির্বিভাগে বসায় গোলমাল থামে। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, এমন ঘটনা শুধু এ দিন নয়, প্রায়শয়ই ঘটে।
রবিবার এই হাসপাতালের বহির্বিভাগ বন্ধ থাকে। তাই সোমবার সকাল থেকে এই বিভাগে বেশি ভিড় হয়। এলাকায় কোনও নার্সিংহোম না থাকায় বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষ শুধু এই হাসপাতালের উপরেই নির্ভরশীল। বহির্বিভাগে আসা রোগী ও তাঁদের আত্মীয়দের অভিযোগ, এ দিন বিভাগ খোলার সময় পেরিয়ে গেলেও কোনও চিকিৎসকের দেখা মেলেনি। হাসপাতালের কর্মীদের জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীর সংখ্যাও বাড়তে থাকে। শেষে রোগী ও পরিজনেরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁদের অনেকেরই দাবি, এখানে এরকম ঘটনা নতুন নয়।
হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে পুরুলিয়া-রাঁচি রাস্তা অবরোধ করেন রোগীর পরিজনেরা ও এলাকার কিছু বাসিন্দা। ব্যস্ত সময়ে রাস্তার দু’দিকেই দাঁড়িয়ে পড়ে বেশ কিছু গাড়ি। পুলিশ পৌঁছে বুঝিয়ে-সুজিয়ে অবরোধ তুললেও ফের হাসপাতালে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। ঘেরাও করা হয় বিএমওএইচ শক্তিপদবাবুকে।
কোটশিলার বাসিন্দা সংগ্রাম সিংহ সর্দারের বক্তব্য, “দীর্ঘক্ষণ হয়ে গেল বহিবির্ভাগে কোনও চিকিৎসক নেই। এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এ ঘটনা নতুন নয়। তাই মানুষজন এতটা ক্ষুব্ধ হয়েছেন।” হাসপাতালে আসা এই ব্লকের বড়রোলা গ্রাম থেকে ফুলটুসি কুমার, মুটুকুড়া থেকে শুভাঙ্গী কুমারেরা বলেন, “সকাল থেকে বসে রয়েছি। ডাক্তার নেই। এখান থেকে তো সদর অনেক দূর!” অসুস্থ সন্তানকে নিয়ে এসেছিলেন নাগরা গ্রামের মেঘনাথ মাহাতো। তাঁর ক্ষোভ, “কাকে দেখাব? কোনও ডাক্তারই তো নেই!” ক্ষুব্ধ মানুষজন দাবি করেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে ঘটনাস্থলে আসতে হবে। খানিক পরে হাসপাতালে পৌঁছন ঝালদা ২ (কোটশিলা) যুগ্ম বিডিও শুভদীপ চৌধুরী। তাঁর কাছে ক্ষোভ জানাতে থাকেন রোগী ও তাঁদের আত্মীয়েরা। কোটশিলার বাসিন্দা সোনারাম ঝা বলেন, “সপ্তাহের প্রথম দিন বহিবির্ভাগে কোনও ডাক্তার থাকবেন না, এটা মেনে নেওয়া যায় না।” যুগ্ম বিডিও শুভদীপবাবু তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসলে পরিস্থিতি খানিকটা শান্ত হয়। পরে শুভদীপবাবু বলেন, “এই এলাকায় কোনও নার্সিংহোম নেই। মানুষজন তাই এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরেই নির্ভরশীল। কিন্তু এ দিন বহিবির্ভাগের দুই চিকিৎসকই না আসায় মানুষজনকে খানিকটা দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। পরে বিএমওএইচ নিজে বহির্বিভাগে রোগী দেখতে শুরু করেছেন।” তিনি আরও জানান, প্রতি দিন যাঁদের ডিউটি রয়েছে তাঁরা সময় মেনে কাজ করছেন কি না, সেই রিপোর্ট সপ্তাহ শেষে ব্লক অফিসে জমা করতে বলা হয়েছে বিএমওএইচ-কে।
বিএমওএইচ শক্তিপদবাবু বলেন, “এ দিন দুই চিকিৎসক বিশ্বনাথ বালা ও স্বরূপকুমার সাধুর বহিবির্ভাগে ডিউটি ছিল। তাঁদের এক জন আমাকে না বলে চলে গিয়েছেন। অন্য জনের এ দিনই আসার কথা ছিল। তিনি কেন অনুপস্থিত আমার জানা নেই। ফোন করেছিলাম, ওঁরা ধরেননি।” বহিবির্ভাগ সামাল দেন বিএমওএইচ এবং হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক স্বাতী নিয়োগী। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, “দুই চিকিৎসক গরহাজির থাকায় এমনটা ঘটেছে। স্বভাবতই, মানুষজন ক্ষুব্ধ হয়েছেন। কেন ওই দুই চিকিৎসক আসেননি তা জানতে চেয়ে তাঁদের শো-কজ করা হচ্ছে।”
অস্বাভাবিক মৃত্যু
কীটনাশক খেয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। মৃত সমীর কুম্ভকারের (৪৮) বাড়ি বান্দোয়ান বাজারে। স্থানীয় সূত্রের খবর, আশঙ্কাজনক অবস্থায় সমীরবাবুকে রবিবার রাতে বান্দোয়ান স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছিল। সোমবার সকালে তিনি মারা যান পুলিশ জেনেছে, সমীরবাবু অসুস্থতায় ভুগছিলেন। অবসাদে তিনি কীটনাশক খেতে পারেন বলে পুলিশের ধারণা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy