Advertisement
০৪ মে ২০২৪

মেঝেতে রোগী, হাসপাতাল পরিদর্শনে ক্ষুব্ধ মহকুমাশাসক

হাসপাতালের বেড খালি, অথচ মেঝেয় শুয়ে রোগী! মুখ্যমন্ত্রী ঘোষিত রামপুরহাট জেলা হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে এই বেহাল চিত্র দেখে কার্যত ক্ষোভ প্রকাশ করলেন হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা রামপুরহাট মহকুমা শাসক উমাশঙ্কর এস।

এই দৃশ্য দেখেই ক্ষোভ। রামপুরহাট হাসপাতালে তোলা নিজস্ব চিত্র।

এই দৃশ্য দেখেই ক্ষোভ। রামপুরহাট হাসপাতালে তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৪ ০২:১৪
Share: Save:

হাসপাতালের বেড খালি, অথচ মেঝেয় শুয়ে রোগী!

মুখ্যমন্ত্রী ঘোষিত রামপুরহাট জেলা হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে এই বেহাল চিত্র দেখে কার্যত ক্ষোভ প্রকাশ করলেন হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা রামপুরহাট মহকুমা শাসক উমাশঙ্কর এস। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে বলার পাশাপাশি তিনি স্যানিটেশন নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হাসপাতালের পরিকাঠামো গত ত্রূটি লক্ষ্য করে তিনি হাসপাতালের দায়িত্ব প্রাপ্ত পূর্ত দফতরের সিভিল বিভাগের সাব অ্যাসিন্টান্ট ইঞ্জিনিয়রকে ডেকে দ্রুত ত্রুটি গুলি ঠিক করার নির্দেশ দেন।

বৃহস্পতিবার দুপুর বারোটার পর হঠাত্‌ করেই রামপুরহাট হাসপাতালে পরিদর্শনে ঢুকে পড়েন মহকুমা শাসক উমাশঙ্কর এস। হাসপাতালের জরুরী বিভাগের সামনে অবৈধ ভাবে দুটি গাড়ি দাঁড় করানো দেখে, নেমে পড়েন গাড়ি থেকে। দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িগুলির কাগজপত্র চেয়ে পুলিশকে ডেকে গাড়িগুলি সরিয়ে নিয়ে বাজেয়াপ্ত করার জন্য নির্দেশ দেন।

এর পর হাসপাতাল চত্ত্বরে অবৈধ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা যাবতীয় গাড়ি, বেসরকারী অ্যাম্বুলেন্স সরিয়ে দেওয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন। ততক্ষণে অবশ্য খবর চলে গিয়েছে হাসপাতলের ভিতরে। উমাশঙ্করবাবু চলে যান শিশু বিভাগে। সেখানে দেখেন হাসপাতালের শিশু বিভাগের ছাদে ফাটল ধরেছে। যে কোনও সময় ছাদের কিছু অংশ ভেঙে পড়তে পারে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি হাসপাতালের সুপারকে দায়িত্বপ্রাপ্ত বাস্তুকারকে ডাকতে নির্দেশ দেন। বাস্তুকার ভৈরব ওঝাকে ফাটল দেখিয়ে দ্রুত ঠিক করে দেওয়ার কথা বলেন।

হাসপাতালের চারতলাতেই পুরুষ বিভাগে গিয়ে দেখেন হাসপাতালের মেঝেতে শুয়ে আছেন একজন রোগী। কার্যত এই দৃশ্য দেখেই ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি সুপারের কাছে জানতে চান, সামনে বেড খালি অথচ এভাবে মেঝেতে রোগী পড়ে আছে কেন। তিনি বলেন, “কি করছেন? এক্ষুনি রোগীকে বেড দিন।”

পুরুষ বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, হাসপাতালের রোগী ভর্তির খাতায় মাথায় আঘাত নিয়ে অজ্ঞাত পরিচয় ওই যুবকটিকে কে বা কারা বুধবার দুপুর দুটোর সময় ভরতি করে চলে গিয়েছে। হাসপাতালের অ্যাসিন্টান্ট সুপার সুস্মিত ভট্টাচার্য্য অবশ্য দাবি করেন, সকালে যখন পুরুষ বিভাগে রাউন্ডে এসছিলাম তখন কোনও রোগীকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখা যায়নি। তিনি বলেন, “হতে পারে বিছানার শয্যা থেকে নিজেই নেমে গিয়ে মেঝেতে শুয়ে থাকতে পারেন।”

এদিকে পুরুষ বিভাগে কর্তব্যরত নার্সরা জানান, আগের যাঁরা ডিউটিতে ছিল তাঁরা এই ধরনের যে রোগী ভর্তি আছে সে সম্বন্ধে কিছু বলে যায়নি। উমাশঙ্করবাবু বলেন, “রোগীটিকে যর্থাথ্য চিকিত্‌সার জন্য সুপারকে বলা হয়েছে। পাশাপাশি এই ভাবে কোনও রোগী ভবিষ্যতে বেড থাকতেও যেন মেঝেতে না পড়ে থাকে তার জন্য সুপারকে সতর্ক করা হয়েছে।” এ দিন দেখা যায় হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডের শৌচালয়, নিকাশি নালার দূরবস্থা, চত্ত্বরের মধ্যে জঞ্জাল, ভবন লাগোয়া বিস্তৃর্ণ এলাকা আগাছায় ভর্তি থাকা দেখে সুপার এবং অ্যাসিস্টান্ট সুপারের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন মহকুমাশাসক।

এ দিন মহকুমাশাসক জানান, হাসপাতালের স্যানিটেশন ব্যবস্থার হাল দেখার জন্য তিনি পরিদর্শন এসেছিলেন। তিনি বলেন, “স্যানিটেশন ব্যবস্থায় আরও জোর দেওয়ার জন্য অ্যাসিস্টান্ট সুপারকে কমিটি গঠন করে সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। সাত দিন দেখার পর যদি দেখা যায় স্যানিটেশন ব্যবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি, তাহলে আইনগত যা ব্যবস্থা নেওয়ার তা একজন প্রশাসনিক আধিকারিক হিসাবে আমি তা নেব।” হাসপাতালের সুপার সুবোধকুমার মণ্ডল বলেন, “মহকুমা শাসকের যা নির্দেশ তা কার্যকরী করার চেষ্টা করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE