খাঁ খাঁ বহির্বিভাগ। শনিবারের মেয়ো হাসপাতাল। নিজস্ব চিত্র।
ঘোড়া না কিনেই গাড়ি সাজিয়ে ফেললে যা হয়, মেয়ো হাসপাতালেরও তেমনই হাল।
প্রথম দিন সেখানে মেরেকেটে ৪৫ জন রোগী এসেছিলেন। এক দিনের মধ্যে সংখ্যাটা অর্ধেক হয়ে শনিবার দাঁড়িয়েছে ২৪। রোগী না আসার মূল কারণ, মেয়োতে নিখরচায় ওষুধ-ইঞ্জেকশন-অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা না-করেই আউটডোর চালু করা হয়েছে। পেটিবন্দি ওষুধ এখনও পড়ে রয়েছে হাসপাতালের করিডরে। তা খুলে ফার্মেসিতে সাজিয়ে রাখা পর্যন্ত হয়নি। প্রশ্ন উঠেছে, কাকে ‘খুশি’ করতে বিনা পরিকাঠামোয় তড়িঘড়ি এই আউটডোর চালু করে দেওয়া হল?
রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তর দেন, “কাউকে খুশি করার প্রশ্ন উঠছে না। প্রথম কয়েক দিনেই ২৪ লক্ষ লোক চলে আসবে, এমন হয় না। এই হাসপাতাল দীর্ঘদিন বন্ধ হয়ে ছিল। এই সরকার এটিকে ফেলে না রেখে চালু করার চেষ্টা করছে। সীমিত ক্ষমতার মধ্যে চেষ্টার ত্রুটি রাখছে না। দু’-এক দিনের মধ্যে ওষুধের ব্যবস্থাও হয়ে যাবে। এই ভাল প্রচেষ্টা আপনাদের চোখে পড়ছে না। শুধু খুঁত ধরছেন!”
কেন মেডিক্যালের মূল ক্যাম্পাসের ভিড় কমাতে সেখানকার রোগীদের মেয়োর আউটডোরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে না? সুশান্তবাবু বলেন, “ওই ভাবে হঠাত্ কাউকে অন্য জায়গায় যেতে বলা যায় না। তা ছাড়া, আমরা তো সেই রোগীকে মেয়োতে নিয়ে যাওয়ার অ্যাম্বুল্যান্স এখনও দিতে পারছি না। সেখানে বলব কী করে? একটু অপেক্ষা করুন। ঠিক রোগীরা যাবেন।” কিন্তু কলকাতা মেডিক্যাল কলেজেরই অনেকের মতে, “বহির্বিভাগে বিনা-পয়সায় ওষুধ, ইঞ্জেকশন না মিললে রোগীরা যাবেন কেন? মেডিক্যাল থেকেও বা কোন মুখে চিকিত্সকেরা রোগীদের মেয়ো ক্যাম্পাসে পাঠাবেন?”
কেন এখনও ওষুধ বা ইঞ্জেকশন দেওয়া যাচ্ছে না? মেডিক্যাল সূত্রের খবর, মেয়োর ফার্মেসিতে এড্স বিভাগের ওষুধ রাখা ছিল। তা সময়মতো সরানো হয়নি। তার আগেই আউটডোর চালু করে দেওয়া হয়েছে। পরিকাঠামো ছাড়া আউটডোর শুরু করলে অব্যবস্থার চূড়ান্ত হবে বলে আশঙ্কা ছিলই। মেয়োর আউটডোর চালুর পরে সেই আশঙ্কা শুধু সত্যি হল তা-ই নয়, সমস্যা এতটাই বাড়ল যে, দু’দিন যেতে না যেতে রোগীরাই এখন মেয়োমুখী হতে চাইছেন না।
সরকারি মেডিক্যাল কলেজের আউটডোরে গড়ে চার-পাঁচ হাজার রোগী প্রতিদিন আসেন। মেয়ো হাসপাতালও মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস। সেখানে সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র। রোগীর সংখ্যা এক দিনে ২৪! আউটডোর টিকিট কাউন্টারের তিন কর্মী থেকে শুরু করে চিকিত্সক-নার্স সকলেরই শনিবার কাটল কার্যত গালে হাত দিয়ে রোগীর প্রতীক্ষায়। চিকিত্সকদের রসিকতা, “এর পরে তো মেয়োর ডিউটি নিতে কাড়াকাড়ি পড়ে যাবে। এমন আরামের কাজ, সকাল থেকে শুধু চা খাচ্ছি আর গল্প করছি।” কিন্তু এই ভাবে এত বড় একটি জায়গা আর এত চিকিত্সক-কর্মীকে শুধু শুধু ফেলে রাখার অর্থ কী, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে। বিশেষত স্বাস্থ্য দফতরে যখন লোকের ঘাটতি।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে চিকিত্সক-নার্সদের এনে মেয়ো হাসপাতালের বহির্বিভাগ চালু করা হয়েছে। মেডিক্যালে প্রত্যেক দিন হাজার-হাজার রোগীর ভিড় সামলাতে গিয়ে হিমসিম খান স্বাস্থ্যকর্মীরা। মেয়োর এ দিনের ছবিটা দেখে তাঁদের অভিযোগ, “যে হাসপাতালে রোগী নেই, কাজ নেই, সেখানে লোকবলের চূড়ান্ত অপব্যবহার করা হচ্ছে। আর আমরা ভিড় সামলাতে নাকানিচোবানি খাচ্ছি।” এক শিক্ষক-চিকিত্সকের আক্ষেপ, “এর থেকে যদি মেয়ো হাসপাতাল ভবনকে ছাত্র-হস্টেল করা হত, তা হলে অতিরিক্ত ১০০ আসনের জন্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের অনুমতি পাওয়া অনেক সহজ হত।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy