Advertisement
E-Paper

রোগের তথ্য নেই, টিকা নিয়ে সমীক্ষাই বিপাকে

পরিষেবার পরিকাঠামো তো নেই-ই। নেই বিগত বছরগুলিতে উত্তরবঙ্গে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের সংক্রমণ সংক্রান্ত তথ্যও। তাই রোগ রুখতে আগামী বছরের জন্য টিকাকরণ কর্মসূচির পরিকল্পনা তৈরির কাজে নেমে বিপাকে পড়েছে কেন্দ্র। এ বারেই প্রথম নয়। গত দু’তিন বছরেও ওই মারণ রোগ ছড়িয়েছিল উত্তরবঙ্গে বিভিন্ন এলাকায়। কিন্তু কোথায় কবে সংক্রমণ ছড়িয়েছিল, ক’জন আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ক’জনের রক্ত পরীক্ষা করে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু মিলেছিল, সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর স্বাস্থ্য দফতরের কাছে সেই তথ্য নেই। তথ্য নেই স্বাস্থ্য ভবনেও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৪ ০২:৫৮
এক বছরের ছেলেকে হারিয়ে মহম্মদ ওয়াজেদ আলি। জলপাইগুড়িতে সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

এক বছরের ছেলেকে হারিয়ে মহম্মদ ওয়াজেদ আলি। জলপাইগুড়িতে সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

পরিষেবার পরিকাঠামো তো নেই-ই। নেই বিগত বছরগুলিতে উত্তরবঙ্গে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের সংক্রমণ সংক্রান্ত তথ্যও। তাই রোগ রুখতে আগামী বছরের জন্য টিকাকরণ কর্মসূচির পরিকল্পনা তৈরির কাজে নেমে বিপাকে পড়েছে কেন্দ্র।

এ বারেই প্রথম নয়। গত দু’তিন বছরেও ওই মারণ রোগ ছড়িয়েছিল উত্তরবঙ্গে বিভিন্ন এলাকায়। কিন্তু কোথায় কবে সংক্রমণ ছড়িয়েছিল, ক’জন আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ক’জনের রক্ত পরীক্ষা করে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু মিলেছিল, সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর স্বাস্থ্য দফতরের কাছে সেই তথ্য নেই। তথ্য নেই স্বাস্থ্য ভবনেও। এ বার উত্তরবঙ্গে ব্যাপক সংক্রমণের পরে আগামী বছর ওই অঞ্চলের কোথায় কোথায় টিকাকরণ কর্মসূচি চালানো হবে, তার সমীক্ষায় নেমে সেই জন্যই সমস্যায় পড়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।

সমস্যা বেশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার। কারণ, ওই সমীক্ষার কাজে তাদেরই সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। ২১ দিনের মধ্যে তাদের রিপোর্ট তৈরি করে পাঠাতে হবে দিল্লিতে। তার ভিত্তিতেই তৈরি হবে আগামী বছরের পরিকল্পনা। কিন্তু রিপোর্ট তৈরি করতে গিয়েই হোঁচট খাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। উত্তরবঙ্গের ছ’টি জেলার স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে বলা হয়েছে, গত পাঁচ বছরে কোথায় কোথায় কলেরা থাবা বসিয়েছিল, ক’জন তাতে আক্রান্ত হন, তার পরিসংখ্যান রয়েছে। কিন্তু জাপানি এনসেফ্যালাইটিস বা ডেঙ্গির কোনও তথ্যই নেই তাদের কাছে।

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, হাসপাতালে আসা রোগীদের ক’জনের রক্তে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু মিলেছে, তার তথ্য রয়েছে। কিন্তু গত দু’তিন বছরে উত্তরবঙ্গের কোথায় ক’জন আক্রান্ত হয়েছিলেন, ক’জনের মৃত্যু হয়েছিল, সেই পরিসংখ্যান ওই নেই। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সঙ্গে যুক্ত জীবাণুবিজ্ঞানীরা বলছেন, কোনও সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের প্রথম পাঠই হল সংশ্লিষ্ট এলাকায় রোগটি কবে, কখন, কী ভাবে ছড়িয়েছিল, ক’জন আক্রান্ত হয়েছিলেন, চিকিৎসা-পদ্ধতি কী ছিল, তার খতিয়ান নেওয়া। কিন্তু অনেক রাজ্যই সেই তথ্য রাখে না। রাখেনি পশ্চিমবঙ্গও। অসমে এ বার এনসেফ্যালাইটিসের টিকাকরণ খুবই সফল হয়েছে বলে জানাচ্ছেন জীবাণুবিজ্ঞানীরা। তাঁদের বক্তব্য, অসম সংক্রমণের পরিসংখ্যান দিল্লিতে পাঠিয়েছিল। সাফল্যের কারণ সেটাই।

অসম পারলে পশ্চিমবঙ্গ সরকার পরিসংখ্যান পাঠাতে পারছে না কেন?

তথ্যের অভাবের কথাই বলছেন উত্তরবঙ্গের জেলা স্বাস্থ্য দফতরগুলির অনেক কর্তা। তাঁদের বক্তব্য, এ বছর জাপানি এনসেফ্যালাইটিস ছড়াচ্ছে জানুয়ারি থেকে। কিন্তু কোথাও ঠিকঠাক নথি রাখা হয়নি। জলপাইগুড়ির এক স্বাস্থ্যকর্তার মন্তব্য, এখানকার হাসপাতালগুলিতে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু নির্ণয়ের কোনও কিটই নেই। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের পরিকাঠামোও যথাযথ নয়। একেবারে প্রথম দিকে রক্তের নমুনা পাঠানো হয়নি সেখানে। কারণ, পরিস্থিতি বোঝা যায়নি। পরে পাঠানো হয়। কিন্তু অনেক নমুনার কোনও রিপোর্ট আসেনি। ফলে রোগ-চিত্রটাই পরিষ্কার হয়নি। এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত সকলের রক্ত এবং সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড পরীক্ষা করা গেলে বিশ্বাসযোগ্য কোনও পরিসংখ্যান তৈরি করা যেত।

তথ্যের অভাবের ব্যাপারে কী বলছেন স্বাস্থ্যকর্তারা?

তথ্য না-থাকার কথা অস্বীকার করেছেন স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “কে বলল তথ্য নেই? সমস্ত তথ্য রয়েছে। কেন্দ্রীয় দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ওঁরা তো খুব খুশি।” সুশান্তবাবুর মতে, সমস্যা ছিল শুধু একটা ক্ষেত্রেই। সেটা হল অকারণ রেফার করা হয়েছে রোগীদের। কোচবিহারে আইটিইউ ছিল। তা সত্ত্বেও সেখান থেকে রোগীকে অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে ছ’সাত ঘণ্টা দূরের ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে। “আপাতত এটা বন্ধ করতে পেরেছি আমরা,” বললেন ওই স্বাস্থ্যকর্তা।

কিন্তু কিটের ঘাটতি থেকেই গিয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের খবর, শুধু জুলাইয়ে উত্তরবঙ্গের ছ’টি জেলা হাসপাতাল থেকে সপ্তাহে গড়ে ১৫০ জনের রক্তের নমুনা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু পরীক্ষার জন্য। সেই হিসেবে শুধু জুলাইয়ে অন্তত ৯০০টি রক্তের নমুনা পৌঁছেছে মেডিক্যালে। কিন্তু পরীক্ষা হয়েছে বড়জোর ৪০০টি নমুনার। পর্যাপ্ত কিট না-থাকায় সমস্যা জটিল হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন যা কিট রয়েছে, তাতে খুব বেশি হলে ২০০টি রক্তের নমুনা পরীক্ষা করা যাবে। বাকিদের পরীক্ষা কবে হবে, তা অনিশ্চিত। সরকারের কাছে আরও কিট চেয়েছে মেডিক্যাল কলেজ। পরীক্ষার জন্য আসা রক্তের নমুনাগুলির যথাযথ সংরক্ষণ হচ্ছে কি না, উঠছে সেই প্রশ্নও। স্বাস্থ্য অধিকর্তা অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, রবিবারের মধ্যে প্রয়োজনীয় কিট পৌঁছে যাবে।

Japanese Encephalitis north bengal medical college shiliguri jalpaiguri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy