Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
বিশ্বকাপে অঙ্কেই টিকে বিশ্বসেরা

রোনাল্ডো ক্লাবে সুন্দর, দেশের জার্সিতে নয়

কলকাতার রাস্তায় বেরোলেই যেমন এখন দেখা যাচ্ছে আর্জেন্তিনা আর ব্রাজিলের পতাকায় ছয়লাপ। গোয়ায় ঠিক উল্টো। সেখানে শুধুই পর্তুগালের পতাকা। বেশির ভাগ বাড়ির ছাদে, রেস্তোরাঁয়, সমুদ্রসৈকতে বা রাস্তার পাশের পাব- সব জায়গায়। এমনিতেই আমার জন্মের শহর গোয়ার বাড়িগুলো বেশির ভাগই পর্তুগিজ মডেলের। সেখানে ওই পতাকাগুলো ওড়ায় মনে হয় যেন লিসবনে আছি। তা ছাড়া প্রতি বছর নানা ফেস্টিভ্যালে ওখানকার লোক-জন গোয়ায় আসে নিয়মিত। পুরনো স্মৃতির টানে।

অ্যালভিটো ডি’কুনহা
শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৪ ০৫:২৬
Share: Save:

পর্তুগাল ২ (নানি, ভ্যারেলা)
যুক্তরাষ্ট্র ২ (জারমেন, ডেম্পসি)

কলকাতার রাস্তায় বেরোলেই যেমন এখন দেখা যাচ্ছে আর্জেন্তিনা আর ব্রাজিলের পতাকায় ছয়লাপ। গোয়ায় ঠিক উল্টো। সেখানে শুধুই পর্তুগালের পতাকা। বেশির ভাগ বাড়ির ছাদে, রেস্তোরাঁয়, সমুদ্রসৈকতে বা রাস্তার পাশের পাব- সব জায়গায়।

এমনিতেই আমার জন্মের শহর গোয়ার বাড়িগুলো বেশির ভাগই পর্তুগিজ মডেলের। সেখানে ওই পতাকাগুলো ওড়ায় মনে হয় যেন লিসবনে আছি। তা ছাড়া প্রতি বছর নানা ফেস্টিভ্যালে ওখানকার লোক-জন গোয়ায় আসে নিয়মিত। পুরনো স্মৃতির টানে। আমার যত বন্ধু বা বান্ধবী আছে তাঁর নব্বই ভাগ ক্রিশ্চিয়ানোর দেশের সমর্থক। আমার মতো ওরাও সোমবার ভোর পর্যন্ত আশায় আশায় রাত জেগে এই ম্যাচ দেখেছে। সবাই ভেবেছিল টিমটা জিতবে।

কিন্তু পর্তুগালের পারফরম্যান্স দেখে ওরা এতটাই বিরক্ত, যাকেই ফোন করছি সে বলছেক্রিশ্চিয়ানো আর যাই হোক অধিনায়ক হওয়ার যোগ্য নয়। সবার এক কথা-- ও ক্লাবে যত সুন্দর, দেশের হয়ে যেন ততটাই খারাপ। টিমকে তাতানো দূরে থাক, নিজের একশো ভাগটাই যেন দিতে রাজি নয়। সরাসরি বলি, ও কিন্তু লিওনেল মেসি নয়। যে লোকটা একাই টিমটাকে শেষ ষোলোয় নিয়ে গেল দু’ম্যাচে দু’টো গোল করে। শুধু মেসি কেন বলব, যারাই এ বার বিশ্বকাপে অধিনায়ক হয়ে এসেছে সবাই নানা ভাবে তাতাচ্ছে টিমকে। রোনাল্ডোকে সেখানে দেখে মনে হচ্ছিল, অনিচ্ছুক এক ঘোড়া। একবারও দেখলাম না, ওর শরীরীভাষায় ফুটে উঠেছে তাতানোর কোনও চেষ্টা। যুক্তরাষ্ট্রের ডেম্পসির কথাই দেখুন। সে-ও তো অধিনায়ক। কি চেষ্টাটাই না করে গেল সারাক্ষণ। দুর্দান্ত একটা গোল করে এগিয়েও দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রকে। ক্লিন্সম্যানের টিমের দুর্ভাগ্য, শেষ চুয়ান্ন সেকেন্ড ২-১ এগিয়ে যাওয়াটা ধরে রাখতে পারল না। গোল খেয়ে গেল। গোলের বলটা অবশ্য ভ্যারেলাকে দিয়েছিল ক্রিশ্চিয়ানোই। ব্যাস এইটুকুই। একবার ওর ট্রেডমার্ক এরিয়ায় একটা ভাল বল পেয়েছিল, কিন্তু বলটা মারল কোথায়? পোস্ট থেকে অনেক দূরে!

বিশ্বের সেরা ফুটবলার নাকি রোনাল্ডো। ওর যোগ্যতা বা সাফল্য নিয়ে কোনও প্রশ্ন তুললে অনেকেই বাঁকা চোখে দেখতে পারেন। কটাক্ষ করতে পারেন আমাকে। আমি কিন্তু বলছি অন্য কথা। বলতে চাইছি, অ্যাটাকিং মিডিও কাম স্ট্রাইকারের যে জায়গাটায় রোনাল্ডো খেলে অন্তত দেশের জার্সিতে সেখানে সফল নয়। প্লে মেকার, গোল গেটার, মাঠে অধিনায়োকোচিত আচরণ, একা কাঁধে করে ম্যাচ বের করে নেওয়ার অসামান্য দক্ষতাসবমিলিয়ে মেসি একটা প্যাকেজ। রোনাল্ডো কিন্তু তা নয়। ওর পায়ে বল পড়লে ভয়ঙ্কর। কিন্তু মার্কার সরিয়ে বল তৈরি করে একা গোল করতে পারে না। একটা নির্দিষ্ট জায়গায় রোনাল্ডো সফল। ও প্লে মেকার নয়। রিয়ালে ওর পাশে যারা খেলে তারা ওকে বল জোগায়। পর্তুগালের এই টিমটায় নানি, আলভেজের মতো দু’একজন ছাড়া সে রকম ভাল ফুটবলার কোথায়? খুব সাধারণ মানের টিম। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার টিম নয়। আমার বন্ধুরা এখনও গোয়ায় বসে নানা রকম অঙ্ক শোনাচ্ছে। ভোরে হতাশার মধ্যে ইনজুরি টাইমে হঠাৎ-ই ভ্যারেলার গোলটা তাদের একটু হলেও আশা জুগিয়েছে মনে হচ্ছে। ওরা ভাবছে শেষ ম্যাচে জার্মানি বড় ব্যবধানে হারাবে যুক্তিরাষ্ট্রকে আর পর্তুগাল জিতবে ঘানার বিরুদ্ধে। অর্থাৎ রোনাল্ডোরা জিতলেও তাকিয়ে থাকতে হবে অন্য দলের দিকে। আমি অবশ্য একেবারেই আশাবাদী নই। আমার ধারণা বড় কোনও অঘটন না ঘটলে ঘানা আর জার্মানিই যাবে পরের রাউন্ডে।

ম্যাচ দেখতে বসার আগে আশা করেছিলাম ৪-৩-৩ ছকে দল নামানো পর্তুগাল কোচ পাওলো বেন্তো আরও আক্রমণাত্মক হবেন। ম্যাচটা জেতার জন্য। হয়তো সেটা রোনাল্ডোরাও চেয়েছিল। কিন্তু জার্মানি যে ভাবে রোনাল্ডোকে ডাবল কভারিং-এ আটকে দিয়েছিল, ক্লিন্সম্যানও সেটাই করলেন। ভাল ফুটবলাদের সব সময়ই মার্কিংয়ে পড়তে হয়। মার্কিং কেটে বেরিয়ে আসাই তো তারকার কাজ। সেটা রোনাল্ডো পারল না। ক্যাপ্টেন্স ব্যান্ড কি তা হলে বোঝা হয়ে যাচ্ছে রিয়াল-তারকার? মানছি চোটের জন্য বেশ কয়েক জন ফুটবলার দলে ছিল না। কিন্তু তা সত্ত্বেও পর্তুগালের খেলা আমার ভাল লাগেনি।

টিমের এক নম্বর প্লেয়ার ও অধিনায়ক রোনাল্ডোই যদি আটকে যায় তা হলে তো পুরো টিমের মনোবলই ভেঙে যাবে। সেটাই হল। যুক্তরাষ্ট্র অপারজেয় নয়। ওদের ঠিকঠাক স্ট্র্যাটেজি হলে হারানো সম্ভব ছিল। উল্টে ক্লিন্সম্যান তাঁর টিমকে এমন তাতিয়েছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র টিমটা সারাক্ষণ লড়ে গেল। ৪-৫-১ ফর্মেশনে তারা তাড়া করা ফুটবল খেলল। যুক্তরাষ্ট্রের কিপার হোয়ার্ড বিপক্ষের একটা নিশ্চিত গোল কোনওক্রমে বাঁচালেও সারাক্ষণ নড়বড় করছিল। যেমন করল পর্তুগাল ডিফেন্স। ২-১ পিছিয়ে পড়ার গোলটা তো রক্ষণের দোষেই।

মেসি ম্যাজিক চমকে দিচ্ছে ফুটবল বিশ্বকে। নেইমার গোল পাচ্ছে। তাকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছে ব্রাজিল। আর্জেন্তিনা শেষ ষোলোতে চলে গেছে। ব্রাজিলও যাওয়ার রাস্তায়। কিন্তু ফিফা ব্যালেন ডি’ওর পাওয়া ফুটবলার রোনাল্ডোর টিম যদি প্রাথমিক পর্বেই বিদায় নেয় তা হলে তো কাপের জৌলুসই অনেক কমে যাবে। তারকা চরিত্রই তো যে কোনও টুর্নামেন্টের ইউএসপি বাড়ায়। সেটা কমে গেলে আকর্ষণ হারিয়ে যায়। রোনাল্ডোর বিদায় তো মনে হচ্ছে শুধু সময়ের অপেক্ষা।

রোনাল্ডো বনাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

খেলেছেন ৯০ মিনিট গোল ০ গোলে শট ৭

গোলমুখী পাস ২ সঠিক পাস ৭৪%

কেন ভাসমান

• জার্মানি-যুক্তরাষ্ট্র ম্যাচ ড্র হলে ছিটকে যাবে পর্তুগাল।

• জার্মানি যদি ১ গোলে জেতে তবে ঘানাকে ৬-০ হারাতে হবে।

• যুক্তরাষ্ট্র যত বেশি গোলে হারবে, তত কম গোলে জিতলে চলবে।

গ্রুপের অবস্থা

জার্মানি ম্যাচ ২ পয়েন্ট ৪ গোলপার্থক্য ৪, যুক্তরাষ্ট্র ম্যাচ ২ পয়েন্ট ৪ গোলপার্থক্য ১, ঘানা ম্যাচ ২ পয়েন্ট ১ গোলপার্থক্য -১, পর্তুগাল ম্যাচ ২ পয়েন্ট ১ গোলপার্থক্য -৪

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

fifaworldcup fifa world cup portugal usa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE