ছ’মাস বয়সেই ধরা পড়েছিল মেয়েটি থ্যালাসেমিয়ার বাহক। সেই ছোটবেলা থেকেই বেঁচে থাকার জন্য মেয়েটিকে নিয়মিত রক্ত দিতে লাগে। টানা আট বছর ধরে সেই রুটিন সমানে চলছে। বৃহস্পতিবারও আদ্রা থেকে বছর আটেকের মেয়ে শ্রাবণীকে নিয়ে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে এসেছিলেন রমেশ ভাণ্ডারি ও রেখা ভাণ্ডারি। কিন্তু ব্লাড ব্যাঙ্কে মিলল না প্রয়োজনীয় ‘ও পজিটিভ’ গ্রুপের রক্ত। অথচ চিকিৎসক সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, মেয়েটির এ দিনই রক্ত লাগবে। কোথাও রক্ত না পেয়ে শ্রাবণীর বাবা-মা দ্বারস্থ হন হাসপাতালের ডেপুটি সুপারের। কিন্তু তিনিও ব্যর্থ হন মেয়েটির জন্য রক্ত জোগাড়ে। শেষমেশ থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত মেয়েটিকে নিজে রক্ত দিয়ে মানবিকতার পরিচয় দিলেন ডেপুটি সুপার শান্তনু মুখোপাধ্যায়।
আদ্রার সুভাষনগরের বাসিন্দা ওই ভাণ্ডারি দম্পতিও থ্যালাসেমিয়ার বাহক। শ্রাবণীর জন্মের পরেই বোঝা যায় মেয়েটিও ওই রোগে আক্রান্ত। রমেশবাবু জানান, আগে মেয়েকে এক-দেড় মাস অন্তর রক্ত দিতে হত। এখন তিন সপ্তাহ পরপরই এক ইউনিট করে রক্ত লাগে। সম্প্রতি রক্ত দেওয়ার নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে যাওয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়ে শ্রাবণী। তার চিকিৎসক তাই এ দিনই তাকে রক্ত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। শ্রাবণীর মা রেখাদেবীর কথায়, “পরিচিত আত্মীয়-স্বজনেরা বহুবার রক্ত দিয়েছেন। বারবার কি একই অনুরোধ করা যায়!” তাই ব্লাড ব্যাঙ্কে মেয়ের জন্য রক্ত সংগ্রহে এসেছিলেন। কিন্তু সেখানে শ্রাবণীর প্রয়োজনীয় গ্রুপের রক্তের জোগান ছিল না। রমেশবাবু বলেন, “আমি কর্মীদের ‘ব্লাড ডোনার্স’ কার্ড থেকে রক্ত দিতে অনুরোধ করি। কিন্তু ওঁরা জানিয়ে দেন, রক্তদাতা লাগবে। তখন অথৈ জলে পড়লাম।” পরিচিতদের বলে সুরাহা না হওয়ায় তাঁরা ছুটে যান ডেপুটি সুপারের কাছে। তত ক্ষণে ঘণ্টা তিনেক সময় পেরিয়ে গিয়েছে। শ্রাবণীর কষ্ট বাড়ছিল। সব জেনে শান্তনুবাবু নিজে রক্ত জোগাড়ের চেষ্টা করলেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে শেষমেশ নিজেই রক্ত দিতে এগিয়ে এলেন।
শান্তনুবাবু বলেন, “ওঁদের মেয়ের তখনই রক্ত লাগত। ওঁরা অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে পাগল পাগল অবস্থায় পড়ে ছিলেন। কোনও সুরাহা দেখতে না পেয়ে আমিই এগিয়ে এলাম। আমারও ‘ও পজিটিভ’ রক্ত।” হাসপাতালের থ্যালাসেমিয়া কন্ট্রোল ইউনিটের এক কর্মী জানালেন, শ্রাবণীর হিমোগ্লোবিনের মাত্রা অনেকটাই নীচে নেমে গিয়েছিল। তাই এ দিনই রক্ত দিতে হত।
রমেশবাবু বললেন, “শান্তনুবাবু আমার মেয়ের জন্য যেটা করলেন, তার ঋণ শোধ হওয়ার নয়।” অন্য দিকে, জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধক্ষ্য উত্তম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “চিকিৎসকের কাজ রোগীর সেবা করা। শান্তনুবাবু তারই উজ্জ্বল নজির গড়লেন।” শান্তনুবাবুর এই কাজ বাকিদেরও অনুপ্রাণিত করবে বলে তাঁর আশা।