Advertisement
E-Paper

রক্ত নিতে অপেক্ষা সাত ঘণ্টা, পথে হাতির সামনে

ডাক্তারের অপেক্ষায় ঠায় পাঁচ ঘণ্টা থেকে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছিল এখানে। মর্মান্তিক সেই ঘটনার এক মাসও পেরোয়নি, বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালের ছবিটা একই থেকে গিয়েছে। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত প্রতিবন্ধী মেয়েকে ওই হাসপাতালে রক্ত নেওয়ার জন্য এনেছিলেন বাবা। ডাক্তার না পাওয়ায় সাত ঘন্টা বসে থাকতে হয় তাঁদের। সন্ধ্যার পরে যখন বাড়ি ফিরছেন, তখন আবার জঙ্গলের পথে হাতির দলের সামনে পড়তে হয় বাবা-মেয়েকে।

স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৪ ০১:৪৪
বুধবার বিকেল। তখনও হাসপাতালের শয্যায় রক্ত নেওয়ার অপেক্ষায় মিতালি। ছবি: শুভ্র মিত্র

বুধবার বিকেল। তখনও হাসপাতালের শয্যায় রক্ত নেওয়ার অপেক্ষায় মিতালি। ছবি: শুভ্র মিত্র

ডাক্তারের অপেক্ষায় ঠায় পাঁচ ঘণ্টা থেকে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছিল এখানে। মর্মান্তিক সেই ঘটনার এক মাসও পেরোয়নি, বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালের ছবিটা একই থেকে গিয়েছে। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত প্রতিবন্ধী মেয়েকে ওই হাসপাতালে রক্ত নেওয়ার জন্য এনেছিলেন বাবা। ডাক্তার না পাওয়ায় সাত ঘন্টা বসে থাকতে হয় তাঁদের। সন্ধ্যার পরে যখন বাড়ি ফিরছেন, তখন আবার জঙ্গলের পথে হাতির দলের সামনে পড়তে হয় বাবা-মেয়েকে।

বাঁকুড়ার জয়পুর থানার ক্ষীরাইবনি গ্রামের বাসিন্দা নিমাই নন্দী তাঁর প্রতিবন্ধী মেয়েকে সাইকেলে চাপিয়ে বুধবার সকালে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। বাড়ি থেকে হাসপাতালের দূরত্ব সাত-আট কিলোমিটার। নিমাইবাবুর ক্ষোভ, “রক্ত নেওয়ার জন্য সকাল সাড়ে ন’টায় মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করি। হাসপাতালের কর্মীদের অনেক বার বোঝানেরা চেষ্টা করি, আমাদের গ্রামে হাতিদের উপদ্রব চলছে। রাস্তাঘাটেও হাতির দল বেরোচ্ছে। তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে। কিন্তু, কেউ কথা শুনল না। ডাক্তার এলেন সেই বিকেল চারটেয়।” তার পরে মেয়েটিকে রক্ত দিতে দিতে আরও সময় লাগে। স্বাভাবিক ভাবেই বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়। গ্রামে ঢোকার আগে গোঁসাইপুর গ্রামে পৌঁছে দেখেন, হাতির দল রাস্তা পেরিয়ে যাচ্ছে দ্বারকেশ্বর নদের দিকে। পিছনে হুলা পার্টি। বছর আঠারোর মেয়ে মিতালিকে নিয়ে পড়িমড়ি করে সাইকেল ঘুরিয়ে উল্টো দিকে অনেকটা চলে যান নিমাইবাবু। দুরুদুরু বুকে সেখানেই প্রায় আধ ঘণ্টা অপেক্ষার পরে তাঁরা বাড়ির পথ ধরেন। তাঁর কথায়, “যে ভয়টা করছিলাম, সেটাই হল! আর একটু এগোলেই একেবারে হাতির দলের সামনে পড়ে যেতাম।”

এই ভোগান্তির জন্য বিষ্ণুপুর হাসপাতালের অব্যবস্থাকেই দায়ী করেছেন নিমাইবাবু। গত ১৬ জুন এই হাসপাতালেই দীপঙ্কর দত্ত নামে একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রের মৃত্যু হয়েছিল। ওই ঘটনাতেও থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত মৃত ছেলেটির পরিবার অভিযোগ করেছিল, দীর্ঘক্ষণ হাসপাতালে পড়ে থাকলেও কোনও চিকিৎসক দীপঙ্করকে দেখেননি। তার বাবা যখন নিরুপায় হয়ে কোলে করে দীপঙ্করকে রাউন্ডে থাকা চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান, ততক্ষণে সব শেষ। ওই ঘটনার পরেও এই অব্যবস্থা কেন, জানতে চাইলে বিষ্ণুপুর হাসপাতালের সুপার সুভাষচন্দ্র সাহা বলেন, “এই হাসপাতালে আলাদা করে থ্যালাসেমিয়া ইউনিট নেই। ডাক্তারের সংখ্যাও কম। প্রায় ২০০ জন ভর্তি রোগীকে দেখতে গিয়ে থ্যালাসেমিয়া রোগীদের রক্ত দিতে মাঝেমাঝে দেরি হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে রোগীদের রাতে থেকে যেতে বলা হয়। উনি (নিমাইবাবু) দেরি হওয়ায় হাতির সমস্যা জেনেও ফিরলেন কেন বুঝতে পারছি না।”

যদিও নিমাইবাবুর দাবি, “রাতে রোগীকে হাসপাতালে রাখা যাবে, এমন কথা আমাকে একবারও বলা হয়নি। বরং মেয়েকে রক্ত দেওয়ার পর তাড়াতাড়ি হাসপাতাল ছাড়তে বলা হয়।” নিমাইবাবু অবশ্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কোথাও অভিযোগ করেননি। তবু এই ঘটনার কথা জেনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ওই হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য, বিষ্ণুপুর পুরসভার কাউন্সিলর দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “আলাদা থ্যালাসেমিয়া ইউনিট যেহেতু নেই, সে কারণে এই ধরনের রোগীদের রক্ত দেওয়ার কাজটি গুরুত্ব দিয়ে আগে সারা যেতে পারে। বিষয়টি নিয়ে আমি সুপারের সঙ্গে কথা বলব।” দিব্যেন্দুবাবুর দাবির সঙ্গে সহমত পোষণ করে বিষ্ণুপুর স্বেচ্ছা রক্তদাতা সমিতির কার্যকরী কমিটির সদস্য কালীপদ ঘোষ এবং বিষ্ণুপুর থ্যালাসেমিয়া গার্জেন সোসাইটির সম্পাদক প্রবীর সেন বলেন, “আলাদা থ্যালাসেমিয়া ইউনিট চালুর দাবি আমরা দীর্ঘদিন জানিয়ে আসছি। যেহেতু তা হয়নি, সেক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এই রোগীদের আগে রক্ত দেওয়ার কাজটি অন্তত চিকিৎসকেরা করুন। তা হলেও কিছুটা সুরাহা হয়।”

বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য জেলা আধিকারিক সুরেশ দাস জানান, দীপঙ্করের মৃত্যুর ঘটনার তদন্তের কাজ এখনও শেষ হয়নি। এই অবস্থায় কেন এখনও এ ধরনের গাফিলতির অভিযোগ উঠছে, তা তিনি সুপারের কাছে জানতে চাইবেন। বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালের মর্যাদা পাওয়ায় এখানে থ্যালাসেমিয়া ইউনিট দ্রুত গড়ে তোলার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

blood bishnupurhospital elephant swapanbandopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy