Advertisement
E-Paper

লটারির অ্যাম্বুল্যান্স চালু মেডিক্যালে

নবজাতক কোন অ্যাম্বুল্যান্সে বাড়ি ফিরবে, তা ঠিক করা হচ্ছে লটারিতে। প্রসূতি এবং নবজাতকের বাড়ি ফেরা নিশ্চিত করতে এই পন্থাই নিলেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সুমন ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৪ ০৮:১৮
লটারির মাধ্যমে বাছাই হচ্ছে অ্যাম্বুল্যান্সের নম্বর। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

লটারির মাধ্যমে বাছাই হচ্ছে অ্যাম্বুল্যান্সের নম্বর। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

নবজাতক কোন অ্যাম্বুল্যান্সে বাড়ি ফিরবে, তা ঠিক করা হচ্ছে লটারিতে।

প্রসূতি এবং নবজাতকের বাড়ি ফেরা নিশ্চিত করতে এই পন্থাই নিলেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, এর ফলে নবজাতককে কোলে নিয়ে আর হন্যে হয়ে মাকে অ্যাম্বুল্যান্স খুঁজতে হবে না। দালালদের খপ্পরে পড়ে নিখরচার পরিবহণ পরিষেবা পেতে টাকাও খরচ হবে না। হাসপাতাল সুপার যুগল কর বলেন, “এই অ্যাম্বুল্যান্স যেতে রাজি হচ্ছে না, ওই অ্যাম্বুল্যান্স টাকা চাইছে, আগে হামেশাই এমন অভিযোগ আসত। অ্যাম্বুল্যান্সের সংখ্যা বাড়ানোর সঙ্গে লটারি চালু করে দেওয়ার পর তেমন অভিযোগ আর নেই।”

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে কিছুদিন আগেও মাত্র ৬টি অ্যাম্বুল্যান্সে ‘নিশ্চয় যান’ পরিষেবা মিলত। ‘জননী শিশু সুরক্ষা’ কার্যক্রমে এই পরিষেবার জন্য কোনও পরিবহণ খরচ লাগে না। টাকা দেয় সরকার। প্রথম ১০ কিলোমিটারের জন্য ১৫০ টাকা, ১০-২০ কিমির জন্য ২৫০ টাকা, ২০-৩০ কিমির জন্য ৩৫০ টাকা, ৩০-৫০ কিমির জন্য ৪৫০ টাকা। তারপর থেকে কিলোমিটার পিছু ৮ টাকা। এই কম দূরত্বের ভাড়া নিয়ে যেতেই আপত্তি ছিল অ্যাম্বুল্যান্স মালিকদের। প্রসূতি-নবজাতককে নিয়ে ওয়ার্ড থেকে বেরোচ্ছে দেখলেই অ্যাম্বুল্যান্স মালিকরা খোঁজ নিয়ে নিতেন তাঁদের বাড়ি কোথায়। কম দূরত্বের দেখলেই সকলে পালিয়ে বেড়াতেন। বাধ্য হয়ে দালাদের খপ্পরে পড়ে দ্বিগুণ ভাড়ায় অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করতে বাধ্য হত রোগীর পরিবার। আবার অনেক অ্যাম্বুল্যান্স মালিক এই প্রকল্পের আওতায় নাম নথিভুক্ত করিয়ে রাখলেও ভাড়া পেলেই কম টাকায় কোনও ভাঙাচোরা গাড়ি ভাড়া করে পাঠিয়ে দিতেন। আর নিজের অ্যাম্বুল্যান্স বেসরকারি ভাবে বেশি ভাড়ায় খাটাতেন। অবশ্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগও আসত। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা বাইরের ঘটনা বলে দায় এড়াতেন। তাঁদের যুক্তি ছিল, হাসপাতালের ভেতরে হলে নিশ্চয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এরপরই লটারির কথা মাথায় আসে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। প্রতিটি নথিভুক্ত অ্যাম্বুল্যান্সকে হাসপাতালে রাখতে হবে বলে শর্ত আরোপ করা হয়। কাগজের টুকরোয় গাড়ির নম্বর লিখে একটি পাত্রে রাখা হয়। পাত্র থেকে কখনও কাগজের টুকরো তুলে নেন রোগীর আত্মীয়েরা, কখনও বা রোগী সহায়তা কেন্দ্রে থাকা লোকজন। যে নম্বর উঠল সেই গাড়িতেই রোগীকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তে খুশি অ্যাম্বুল্যান্স মালিকরাও। শেখ সাইদুল, মাকসুদ আলিদের কথায়, “১০-১৫ কিলোমিটার দূরত্বের ভাড়া গেলে কম আয়। তাই কেউ ওই ভাড়া নিতে রাজি হত না। এখন লটারিতে যার নাম উঠবে তাকেই যেতে হবে। ফলে নিজেদের মধ্যে কোনও বিতর্ক নেই।” রোগী সহায়তা কেন্দ্রেই লটারি হয়। রোগী সহায়তার দায়িত্বে থাকা চণ্ডী হাজরার কথায়, “আগে দালাল ভাড়া দেওয়ার পর অ্যাম্বুল্যান্সের মালিকের কাছ থেকে ২০০-৩০০ টাকা নিত। সেই টাকা তো রোগীর কাছ থেকেই ওরা তুলত। ফলে নিখরচার পরিষেবা পেতে সাধারণ মানুষকে টাকা খরচ করতে হত। লটারির পর এই সমস্যা আর নেই।” খুশির সুর অনেক রোগীর পরিবারের সদস্যদের গলাতেও। যেমন, গড়বেতার বিকাশ মাইতি বলেন, “আগেও এই হাসপাতালে এসে অ্যাম্বুল্যান্স পেতে নাজেহাল হতে হয়েছে। এ বার কিন্তু ছবিটা অনেক বদলে গিয়েছে।”

বর্তমানে হাসপাতালে অ্যাম্বুল্যান্সের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৪। ফলে অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে হয় না ঠিকই, তবে এখনও কিছু ক্ষেত্রে বাইরে নিয়ে গিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সের পরিবর্তে অন্য গাড়ি পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ থেকেই গিয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে কেউ লিখিতভাবে কোনও অ্যাম্বুল্যান্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানালে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

new born ambulance lottery medinipur hospital suman ghosh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy