বন্ধ পড়ে বোহার স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন ভবন। —নিজস্ব চিত্র।
প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন ভবন তৈরি হয়ে উদ্বোধনও হয়ে গিয়েছে, অথচ চিকিৎসকের কাছে সে খবরই নেই। জিজ্ঞেস করা হলে মেমারির বোহার স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ওই চিকিৎসক পিয়ালি সাহু বলেন, “যতদূর জানি, ওই ভবনের উদ্বোধন পরে হবে।”
অথচ বর্ধমানের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণবকুমার রায় জানিয়েছেন, জেলার বোহার-সহ চার জায়গায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের শয্যাসংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। নবনির্মিত ভবনে শয্যা পেতে রোগী ভর্তিও শুরু হয়ে গিয়েছে।
গত ৯ জুলাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঝিঙ্গুটিতে যে ৩৭টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তার মধ্যেই বোহার-সহ ওই চার স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন ভবন নির্মাণ ও শয্যাসংখ্যা বাড়ানোর কথা ছিল। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণববাবুও জানান, মেমারি ২ ব্লকের বোহার, রানিগঞ্জের বক্তারনগর, পূর্বস্থলী ১ ব্লকের নোয়াপাড়া ও জামালপুরের নবগ্রাম প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন ভবন গড়া হয়েছে। তিনি বলেন, “ওই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে আপাতত ছ’টি করে শয্যা রয়েছে। সেগুলিকে ১০ শয্যায় পরিণত করা হবে। নবনির্মিত ভবনগুলিতে শয্যা পেতে রোগী ভর্তি নেওয়া শুরুও হয়ে গিয়েছে।” এর ফলে প্রতিটি এলাকাতেই প্রায় ৫০ হাজার মানুষ উপকৃত হবেন বলে দাবি করে হয়েছে সরকারি প্রচার পত্রে।
কিন্তু স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির দাবি, তাদের পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স এবং কর্মী নেই। একজন করে চিকিৎসক ও দু’জন করে নার্স রয়েছেন। বর্হিবিভাগ সামলাতেই হিমশিম খেতে হয়। সেখানে রোগী ভর্তির সংখ্যা বাড়লে সমস্যা আরও বাড়বে। তাদের দাবি, শয্যাসংখ্যা বাড়লে দু’জন করে চিকিৎসক ও তিন জন করে নার্স থাকার কথা। তবে চিকিৎসক ও কর্মী নিয়োগ কবে হবে, তার নিশ্চয়তা দিতে পারেননি সিএমওএইচ প্রণববাবু। তিনি বলেন, “অগস্টে জেলায় বেশ কিছু চিকিৎসক নিয়োগ করা হবে। তাঁদের মধ্যে থেকে ওই অভাব মেটানো হবে।”
তবে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বললেও এক কোটি এক লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত বোহার স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন ভবন শুক্রবারও চালু হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা রবীন ঘোষ বলেন, “হাসপাতালের নতুন ভবন এখনও চালু হয়নি। তবে মাঝে একদিন অনেক ফুলমালা দিয়ে সাজানো হয়েছিল। আমরা ভেবেছিলাম মন্ত্রী এসে উদ্বোধন করবেন। মন্ত্রী এলেন না। কিছুক্ষন পরে ফুলমালা খুলে নেওয়া হয়। এখন শুনছি, ওখানে ১০ শয্যার হাসপাতাল চালু হবে। তবে কবে কেউ জানে না।”
পিয়ালি সাহু নামে একমাত্র চিকিৎসক যিনি রয়েছেন, তিনি বলেন, “আমাদের এখানে দু’জন নার্স রয়েছেন। একজনের বদলির অর্ডার এসেছে। কোনও চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নেই। কোনও ঝাড়ুদারও নেই।” এছাড়া একজন ফার্মাসিস্ট থাকলেও সপ্তাহে চারদিন আসেন তিনি। বাকি দু’দিন স্বাস্থ্য দফতরের তরফেই তাঁকে আরেকটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডিউটি করতে বলা হয়েছে বলে জানান পিয়ালিদেবী। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ৬ শয্যা থাকার কথা বলা হলেও ওই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনও অন্তর্বিভাগ নেই। চিকিৎসক জানান, বহির্বিভাগে প্রতিদিন দু’শো থেকে আড়াইশো রোগী আসেন। জ্বর, পেটের অসুখ, কাশি ইত্যাদি নিয়ে বেশিরভাগ রোগী আসেন। তবে কাউকে ভর্তি করাতে হলে ২০ কিলোমিটার দূরের কালনা মহকুমা হাসপাতাল ছাড়া উপায় নেই। ওই চিকিৎসকের দাবি, “ওই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১০টি শয্যা হলে তা ঠিক মতো চালাতে অন্তত চারজন চিকিৎসক ও সাতজন নার্স প্রয়োজন। এছাড়া ঝাড়ুদার, সর্বক্ষণের ফার্মাসিস্টও দরকার।’’
তবে হাসপাতালের নতুন ভবনের কথা শুনে খুশি গ্রামবাীসরা। বোহারের বাসিন্দা শেখ আলাউদ্দিন বলেন, “এই হাসপাতালের উপর এলাকার প্রায় ২০টি গ্রামের মানুষ নির্ভর করেন। নতুন একটি বড় ঘর তৈরি হয়েছে শুনছি। ওখানে ১০ শয্যার নতুন হাসপাতাল হলে খুবই ভাল হবে।” তাঁর দাবি, “এখানে রোগীর ভর্তির ব্যবস্থা নেই। রাতে প্রসবের ব্যথা উঠলেও প্রসূতিকে নিয়ে ছুটতে হয় কালনা, বর্ধমানে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy