Advertisement
E-Paper

হদ্‌রোগের প্রকোপ বাড়ছে শহরের শিশুদের, বলছে সমীক্ষা

কলকাতার এক নামী বাংলামাধ্যম স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র স্বস্তিক বড়ুয়া। ছটফটে ছেলে। মাঝেমধ্যে একটু দুর্বল লাগা ছাড়া অন্য কোনও অসুবিধে ছিল না তার। অথচ মাসখানেক আগে তার স্বাস্থ্যপরীক্ষায় ধরা পড়ে, জন্ম থেকেই হৃদ্‌যন্ত্রে ছোট ফুটো রয়েছে!

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৪ ০১:৩৩

কলকাতার এক নামী বাংলামাধ্যম স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র স্বস্তিক বড়ুয়া। ছটফটে ছেলে। মাঝেমধ্যে একটু দুর্বল লাগা ছাড়া অন্য কোনও অসুবিধে ছিল না তার। অথচ মাসখানেক আগে তার স্বাস্থ্যপরীক্ষায় ধরা পড়ে, জন্ম থেকেই হৃদ্‌যন্ত্রে ছোট ফুটো রয়েছে!

স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন দক্ষিণ কলকাতার ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ছাত্রী অবন্তিকা মালির অভিভাবকেরাও। আপাত ভাবে কোনও শারীরির সমস্যা ছিল না অবন্তিকারও। কিন্তু হৃদ্‌যন্ত্র পরীক্ষায় জানা যায়, ওই পড়ুয়ার একটি হার্ট ভাল্‌ভের অবস্থা ভাল নয়। বছরখানেকের মধ্যে অস্ত্রোপচার দরকার। আচমকা অবন্তিকা বা স্বস্তিকের হদ্‌যন্ত্রের পরীক্ষা না-হলে সমস্যা হয়তো আরও অনেক দিন অজানা থেকে যেত এবং বড় বিপদ ডেকে আনত।

রাজ্য স্কুলশিক্ষা দফতরের সহযোগিতায় সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে কলকাতার ২৬টি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে একটি সমীক্ষা চালিয়েছে হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞদের সংগঠন ‘কার্ডিওলজিক্যাল সোসাইটি অব ইন্ডিয়া’র পশ্চিমবঙ্গ শাখা। গত বছর নভেম্বর মাস থেকে সমীক্ষা শুরু হয়েছিল। চলে গত জুলাই পর্যন্ত। এই পড়ুয়াদের হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার কী রকম এবং অদূর ভবিষ্যতে তাদের হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কত, তা দেখতেই এই সমীক্ষা।

১৪-১৫ বছরের প্রায় দেড় হাজার ছেলেমেয়েকে পরীক্ষা করা হয়। কথা বলা হয়েছে ৬০০-র বেশি অভিভাবকের সঙ্গে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, পড়ুয়াদের ৬%-এর হৃদ্‌যন্ত্রে গুরুতর সমস্যা আছে এবং অধিকাংশের ক্ষেত্রেই তা এতদিন অজানা ছিল। ২৪% ছাত্রছাত্রীর নিকট ভবিষ্যতে হৃদ্‌রোগজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। এরা কেউ হঠাত্‌ জ্ঞান হারায় বা অল্প পরিশ্রমেই তাদের মাথা ঘোরে, বমি পায়, হাঁফ ধরে। ২২% ছাত্রছাত্রীর স্বাস্থ্য সার্বিক ভাবে অত্যন্ত খারাপ। এই তথ্য পেয়ে চমকে গিয়েছেন হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞেরাও।

মা-বাবার অজ্ঞতা দেখেও অবাক চিকিত্‌সকেরা। অন্যতম সমীক্ষক হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ সৌমিত্র কুমারের কথায়, “কৈশোরেও যে হৃদ্‌যন্ত্র সংক্রান্ত সমস্যা হতে পারে বা বছরে অন্তত দু’বার যে সন্তানের শারীরিক পরীক্ষা দরকার, অধিকাংশ অভিভাবকই সে বিষয়ে সচেতন নন।” তাঁর আরও বক্তব্য, “জন্ম থেকেই হৃদ্‌যন্ত্রে সমস্যা থাকলেও সচেতনতার অভাবে তা চিহ্নিত হচ্ছে না। ধরা পড়ছে শেষ মুহূর্তে।” প্রসঙ্গত, মাস দু’য়েক আগে দক্ষিণ কলকাতার এক নামী স্কুলে রাজন্য সরকার নামে এক শিশুর আচমকা মৃত্যু হয়। তখনও বিভিন্ন মহল উদ্বেগ প্রকাশ করে জানায়, শিশুদের জন্ম থেকে হৃদ্‌যন্ত্রে কোনও সমস্যা আছে কি না, তা চিহ্নিত করার পরিকাঠামো অমিল।

কলকাতার স্কুলগুলি নিয়ে হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞদের এই রিপোর্ট ইতিমধ্যে জমা পড়েছে স্কুলশিক্ষা দফতরে। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সমীক্ষার ফলাফল নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত। তাঁর কথায়, “বিশেষ করে সরকারি স্কুলগুলিতে সব সময়ের চিকিত্‌সক ও প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী রেখে ছাত্রছাত্রীদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে পারলে ভাল হত। কিন্তু আমাদের টাকাপয়সার যা অবস্থা, তাতে হাত-পা বাঁধা। স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে আলোচনা করব।”

স্বাস্থ্য দফতরের স্কুলস্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার নৃপতি রায় জানান, সরকারি স্কুলে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত ছাত্রছাত্রীদের খুঁজে বার করে তাদের অস্ত্রোপচার করার প্রকল্প সরকারের আছে। ‘শিশুসাথী’ নামের এই প্রকল্পে প্রতিদিন ৮০-১০০ ছাত্রছাত্রীর স্ক্রিনিং হওয়ার কথা। প্রত্যেক মেডিক্যাল কলেজে এর জন্য গত মার্চে ৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্যকর্তারাই স্বীকার করছেন, চিকিত্‌সক ও নার্সের অভাবে স্ক্রিনিং চালানোই মুশকিল।

এখন প্রশ্ন হল, কলকাতায় কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে এত বেশি হৃদ্‌রোগ পাওয়া যাচ্ছে কেন? হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ ভবতোষ বিশ্বাস বলেন, “অনেকের মধ্যেই জন্ম থেকে ভাল্‌ভ খারাপ, ধমনী খারাপ, অনিয়মিত হৃদ্‌স্পন্দন, হার্টে ফুটোর মতো সমস্যাগুলি লুকনো থাকে। কে আর সমীক্ষা করে দেখে? দ্বিতীয়ত, শহরাঞ্চলে শিশু-কিশোরদের জীবন ধারায় আমূল পরিবর্তন এ জন্য দায়ী।”

heart diseases juvenile parijat bandyopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy