Advertisement
E-Paper

দুষ্টু লোককে ভোট নয়, ডাক মুকুল-গলিতে

বন্ধু গিরিধারী, রতনদের সঙ্গে যে চত্বরে পূ্র্বজন্মের হোলিখেলা চলত, তার কয়েক গজ দূরেই দোকানটি। ‘মুকুল স্টোন শপ’!  ভিতরে সাজানো সোনার পাথরবাটি! 

অগ্নি রায় 

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:০১
অস্ত্র ‘নোটা’: আন্দোলন সোনার কেল্লায়। নিজস্ব চিত্র

অস্ত্র ‘নোটা’: আন্দোলন সোনার কেল্লায়। নিজস্ব চিত্র

বন্ধু গিরিধারী, রতনদের সঙ্গে যে চত্বরে পূ্র্বজন্মের হোলিখেলা চলত, তার কয়েক গজ দূরেই দোকানটি। ‘মুকুল স্টোন শপ’! ভিতরে সাজানো সোনার পাথরবাটি!

“এই ত্রিকূটগড় দেখতে তো আগে কাকপক্ষীও উঁকি মারত না। এটি সোনার কেল্লা হয়ে উঠতেই বদলে গেল শহরটা”, জানাচ্ছেন দোকানটির যুবা মালিক অশোক সিংহ ভাটি। দোকানের এই নামকরণ যে শ্রদ্ধার্ঘ্য নয়, বরং বিপণন কৌশল, আলাপের দু’মিনিটের মধ্যেই জানালেন অকপটে। “আশপাশের দোকানের তুলনায় এখানে বাঙালি পর্যটকেরা যে বেশি ঢোকেন, তা এই নামের জন্যই!”

‘শহর’ অর্থাৎ কেল্লার ভিতর হাজার চারেক বসবাসকারী (দশ-বারো প্রজন্মবাহিত), শ’-আড়াই হোটেল, কয়েকশো দোকান। কমিশনের লোক সম্প্রতি ভিতরেই বসিয়ে দিয়ে গিয়েছে ভোটগ্রহণ কেন্দ্র। আর যে গলিতে নকল হাজরার স্বরূপ চিনতে পেরে ছুট লাগিয়েছিল মুকুল, তার অনতিদূরেই গমগম করছে ‘নোটা’ (নান অব দ্য অ্যাবাভ) আন্দোলনকারীদের কেন্দ্র। রাজস্থানের রাজনীতি ‘দুষ্টু লোকে’ ভরে গিয়েছে— কেল্লার বাতাসে এমনটাই গুঞ্জন। রাজস্থানী পাগড়ি, গোঁফের ছবির পাশাপাশি ‘ভোট ফর নোটা’ লেখা রঙবাহারি টি শার্ট বিকোচ্ছে খুব। কর্ণধার বিমল কুমার গোপ বলছেন, “কেল্লার ভিতরেই আমাদের শ’দুয়েক আন্দোলনকারী রাতদিন কাজ করছেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝানো হচ্ছে, জাতপাতের রাজনীতি থেকে সরে উন্নয়ন আর সাম্যের রাস্তায় চলতে গেলে ব্যবস্থাকে ধাক্কা দিতে হবে। আপাতত নোটা দিয়ে শুরু হোক।” যাঁরা এই আন্দোলনে শামিল, তাঁরা প্রত্যেকেই পেশাদার অথবা ছাত্র।

“নোটা দিয়ে যে শেষ পর্যন্ত কিছু করা যাবে না এটা জানা-ই আছে। কিন্তু একটা আওয়াজ তো তোলা যাবে। আসলে এই শহরের জন্য কেউ কিছু করেনি গত দশ পনেরো বছরে।” বলছেন নোটা টি-শার্ট পরা কেল্লার পোশাকব্যবসায়ী গোকুল ব্যাস। “এখানে এই প্রবণতাটা নতুন। আর শুধু নোটা আন্দোলনের বাড়বাড়ন্তই নয়, জনতা যে পরিবর্তনও চাইছে, তা কেল্লায় কান পাতলেই বুঝবেন।” ঝরঝরে বাংলায় বললেন যোধপুর পার্কের প্রাক্তন বাসিন্দা কিশোর পারেখ। এই মুকুল-বাড়িতে (এটাই গাইড-চলতি নাম) রয়েছেন ’৮৯ সাল থেকে। ক্রিস্টাল, রূপো আর রকমারি পাথরের এক চিলতে কিন্তু রমরমে দোকানের মালিক। “সিনেমাটা যখন এল হাইস্কুলে পড়ি। উল্টোরথ থেকে নম্বর জোগাড় করে তার পর মাঝেমধ্যেই সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে কথা বলতাম ফোনে। উনিও ছেলেমানুষী কৌতূহলকে প্রশ্রয় দিতেন।”

আরও পড়ুন: ফসল বিমায় দুর্নীতি! মোদীর বিরুদ্ধে নতুন তোপ দাগলেন রাহুল

বারবার ছবিটা দেখতে দেখতে মাথায় ভূতচাপা কিশোর কার্যত বাড়ি থেকে পালিয়ে কেল্লায় চলে এসেছিলেন কলেজ পাশ করেই! ‘ফেলুদা-র পঞ্চাশ বছর’ শীর্ষক তথ্যচিত্রটিতে সম্প্রতি অকপটে জানিয়েওছেন সে সব কথা। কেল্লায় এসে অতীতের স্মৃতি খুঁজে না পেলেও তাঁর ভবিষ্যত যে উড়াল দিয়েছে, তা দোকানের ভিড় দেখেই বোঝা যাচ্ছে! তবুও পারেখ পরিবর্তনের পক্ষেই কথা বলছেন। কারণ, “গত দু’বছর কোনওক্রমে ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছি আমরা বহু টাকা লোকসান করে। কেন্দ্র কর চাপানোয় লাভও কমে আসছে। মানুষ হাত খুলে খরচ করতে ভয় পাচ্ছে এখনও।”

তা হলে সব মিলিয়ে কি দাঁড়াচ্ছে তোপসে ?

এক, আর্থিক চোট এবং পর্যটকদের পকেটে টান। দুই, গত পাঁচ বছরে কেল্লাবাসীদের দায়দফায় রাজ্য সরকারের মুখটিও দেখতে না পাওয়া। তিন, (এটা নিচু স্বরে বলছেন স্থানীয় রাজপুতদেরও একটা অংশ) গেরুয়া রংধারী রক্তগরম রাজপুতদের বিজেপি প্রশাসনের অতিরিক্ত প্রশ্রয় এবং তার ফলে স্থানীয় হিংসার বাড়বৃদ্ধি। কেল্লা সমস্বর — সরকারের পরিবর্তন হোক, সেই সঙ্গে অশোক গহলৌতের কংগ্রেসকেও বার্তা দেওয়া হোক।

কেল্লার ভিতরে নোটা নিছকই সোনার পাথরবাটি নয় এখন!

Rajasthan Assembly Election 2018 Assembly Elections 2018 None of the above NOTA
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy