রাহুল গাঁধী
মন্দির-হিন্দুত্বের রাজনীতি থেকে টেনে এনে নরেন্দ্র মোদীকে কৃষকদের নিয়ে কথা বলতে বাধ্য করছেন রাহুল গাঁধী। আর সে কারণেই রাহুলকে কী ভাবে মোকাবিলা করা যাবে, তা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন মোদীর সেনাপতিরা।
হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যে ক্ষমতায় এলে দশ দিনের মধ্যে কৃষিঋণ মাফের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন রাহুল। কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার মাত্র দু’দিনেই তা করে দেখিয়েছে। দেখাদেখি মোদীর নিজের রাজ্য গুজরাতে গ্রামীণ বিদ্যুৎ বিল মকুব করেছে বিজেপি সরকার। বিজেপিশাসিত অসম কৃষিঋণে ভর্তুকি ঘোষণা করেছে। তার পরেই রাহুল টুইট করে খোঁচা দিয়েছেন মোদীকে। বলেছেন, অসম ও গুজরাতে মুখ্যমন্ত্রীদের ঘুম ভেঙেছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ঘুমোচ্ছেন। তাঁকেও ঘুম থেকে তোলা হবে।
সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর গায়ে আঁচ লাগায় আজ অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল, অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা-সহ দলের পদাধিকারীদের দিল্লিতে উড়িয়ে এনে বিজেপির সদর দফতরে সাংবাদিক সম্মেলন করানো হয়। সেখানে অসমে বিজেপির মাথারা দাবি করলেন, তাঁদের রাজ্যে কৃষিঋণ মাফ হয়নি। ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিলে ২৫ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়া হবে মাত্র, যেটি শিল্প ক্ষেত্রে দেওয়া হয়। সুদেও বাড়তি ভর্তুকি দেওয়া হবে। এবং এটি স্থায়ী ব্যবস্থা। রাহুলের মতো কয়েক বছর পরপর কৃষিঋণ মাফের এককালীন পদক্ষেপ নয়।
যেহেতু আক্রমণটি সরাসরি মোদীকে করা হয়েছিল, তাই সোনোয়াল-বিশ্বশর্মাকে দিয়ে রাহুলকেও তুলোধনা করানো হল। সোনোয়াল বললেন, ‘‘রাহুল গাঁধী যতই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখুন, কোনও দিনও হবে না। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সৎ, যোগ্য, নিষ্ঠাবান। ২৪ ঘন্টায় ১৮-২০ ঘণ্টা মেহনত করেন। রাহুল গাঁধীর এ সবের কোনও যোগ্যাতাই নেই। ৬০ বছর ধরে অসমকে লুটেছে তাঁর দল। কৃতিত্ব নিতে হলে সেই লুঠ আর দুর্নীতির কৃতিত্ব নিন রাহুল।’’
একই সুরে বিশ্বশর্মাও বুক দাপিয়ে বলেন, গোটা উত্তর-পূর্বে এখন আর একটিও রাজ্য কংগ্রেসের দখলে নেই। স্বাধীনতার পর এই প্রথম। সম্প্রতি পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপি ভাল ফলেও কংগ্রেসের বিরুদ্ধে জনমত ফুটে উঠেছে।
প্রশ্ন হল, কৃষকদের জন্য স্থায়ী ব্যবস্থাই অসমে করা হচ্ছে, তা হলে শুধু অসম কেন? ‘কংগ্রেস-মুক্ত’ হওয়া উত্তর-পূর্বের অন্য রাজ্যেও নয় কেন? বিশ্বশর্মা এখানেও রাহুলকে আক্রমণ করে বলেন, ‘‘১৮৯৪ সালে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে কৃষকদের আন্দোলনের ১২৫ বছর উপলক্ষে এই ঘোষণা করেছে অসম সরকার। সে কারণেই গত বাজেটে তা ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু রাহুল গাঁধীর এই ইতিহাস জানার কথা নয়।’’
পাল্টা জবাব দিতে রাহুল গাঁধীর দল আজ সামনে আনে বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেওয়া কৃষক মোর্চার প্রধান নানা পাটোলেকে। তিনি বলেন, ‘‘আমরাও স্বীকার করি, কৃষিঋণ মাফ এককালীন ব্যবস্থা। কিন্তু কৃষক সমস্যার স্থায়ী সমাধানেরও চেষ্টা করছি। তবে নরেন্দ্র মোদী যত দিন না কৃষিঋণ মাফ করছেন, রাজ্যে রাজ্যে আন্দোলন হবে। জানুয়ারি মাস থেকেই রাহুল গাঁধীকে ধন্যবাদ জানিয়ে মোদীর ঘুম ভাঙানোর লড়াই শুরু হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy