Advertisement
E-Paper

৯ গ্লাস জলে ‘হিংরেজি’ ভোট-ভাষণ পীযূষের

স্পিকার গ্যালারিতে বসা মহিলাটির দিকে অনেকেরই নজর যাচ্ছে। সাংবাদিক, সাংসদদেরও। লোকসভা থেকেই স্মৃতি ইরানি তাঁকে ইশারায় ‘হাই’ বলছেন। কে তিনি?

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৩৯
প্রস্তুত: বাজেট পেশ করতে যাচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রী পীযূষ গয়াল। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।

প্রস্তুত: বাজেট পেশ করতে যাচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রী পীযূষ গয়াল। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।

কখনও হাসিমুখ, কখনও টেনশন, কখনও উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি।

স্পিকার গ্যালারিতে বসা মহিলাটির দিকে অনেকেরই নজর যাচ্ছে। সাংবাদিক, সাংসদদেরও। লোকসভা থেকেই স্মৃতি ইরানি তাঁকে ইশারায় ‘হাই’ বলছেন। কে তিনি?

সীমা গয়াল। তাঁর স্বামীই জীবনে প্রথম বার বাজেট পড়ছেন। ৫৪ বছরের পীযূষ গয়াল— যিনি বিজেপির ভাঁড়ার সামলান, দেশের ভাঁড়ারের ভারও তাঁর হাতে। গত পাঁচ বার অরুণ জেটলির বাজেট পেশের সময়ে তাঁর স্ত্রী সঙ্গীতা বসতেন এই গ্যালারিতে। আজ প্রথম এলেন সীমা। মা-বাবাকে নিয়ে।

বাজেট পেশ করে পীযূষও দু’হাত তুলে স্ত্রী ও শ্বশুর-শাশুড়ির শুভেচ্ছা কুড়োলেন। গত বছর পীযূষের পাশাপাশি সীমার বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিল কংগ্রেস।কিন্তু বাজেট কেমন লাগল? ‘সব ভাল’ বলে দ্রুত পালালেন সীমা। তাঁর বাবা কিছু একটা বলতে চাইছিলেন। কড়া চোখে নিষেধ করলেন মেয়ে।

টেনশন ছিল পীযূষেরও। ৯ গ্লাস জল খেয়ে ফেললেন বাজেট পড়তে গিয়ে। তাড়াহুড়োয় লোকসভায় আসার সময়ে বাজেট বক্তৃতার প্রথম পাতাটাই আনতে ভুলে গিয়েছিলেন। আমলাকে বললেন, ‘‘জলদি আনুন, আমার ঘরে পড়ে আছে।’’ বাজেট লেখা হয়েছিল ‘হিংরেজি’তে— মানে, হিন্দি আর ইংরেজি মিশিয়ে। বিরোধীদের মতে, যা কি না ভোটের জন্য মোদীরই লিখে দেওয়া।

আর তার মধ্যেও পেন দিয়ে আরও কিছু রাজনৈতিক কথার আঁকিবুঁকি। পীযূষ এক-একটি অনুচ্ছেদ পড়ছেন, আর তার রাজনৈতিক ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। আর তত বারই কংগ্রেস সাংসদেরা খোঁচা দিচ্ছেন, ‘‘আরে মশাই! বাজেটটা পড়ুন না। আপনার ভাষণ কে শুনতে চাইছে?’’ একটা কবিতাও শোনালেন, যেটা বাজেট বক্তৃতায় নেই।

বাজেটের কপি আগেই লোকসভার সচিবালয়ে পাঠানো হয়। অফিসাররাও মেলাতে পারছেন না। লিখিত বাজেটের বাইরে গিয়েই বলছেন মন্ত্রী। পরে খোঁচা দিলেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমও: ‘‘এ কেমন বাজেট! অর্ধেক হিন্দি, বাকি ইংরেজি! যাঁরা শুধু হিন্দি জানেন, অর্ধেক বাজেট বুঝবেন। যাঁরা শুধু ইংরেজি বোঝেন, তাঁরাও অর্ধেক। সরকার বোধ হয় এক দিনের জন্য সকলকে বিভ্রান্তই করে রাখতে চেয়েছে।’’

বাজেট দিয়ে যেন-তেন-প্রকারে ভোট কাড়ার চেষ্টায় পদে পদে ঠোক্কর খেতে হল ভারপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রীকে। বিশেষ করে তৃণমূলের কাছে। সংসদে বসেই ইদ্রিশ আলি গেয়ে উঠলেন, ‘‘ঝুট বোলে কৌয়া কাটে।’’ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তুললেন, ‘‘(ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে) ১৫ লাখ কবে পাব? জয় শাহের কী হল?’’ আবার তৃণমূল সাংসদদের সঙ্গে বসেই দল থেকে বহিষ্কৃত হয়ে সদ্য বিজেপিতে যাওয়া সৌমিত্র খাঁ স্লোগান দিলেন, ‘‘জয় শ্রীরাম’’।

সৌগত রায় বললেন, ‘‘এ তো সব রাষ্ট্রপতির বক্তৃতায় বলা হয়ে গিয়েছে।’’ কেউ বললেন, ‘‘লাই ডিটেক্টর পরীক্ষা হোক মন্ত্রীর, সব মিথ্যে বলছেন।’’ শেষে পীযূষকে থামাতে ইদ্রিশ-কল্যাণ একযোগে অট্টহাসি করে উঠলেন, ‘‘হা-হা-হা’’ ‘‘হো-হো-হো’’। তাঁদের দেখে মুচকি হাসছিলেন রাহুল গাঁধী।

বাজেট পড়া শেষ। নরেন্দ্র মোদী উঠে এলেন নিজের আসন থেকে। পীযূষের পিঠ চাপড়ে দিলেন। পা ছুঁলেন পীযূষ। একে একে প্রণাম করলেন রাজনাথ সিংহ, সুষমা স্বরাজ, লালকৃষ্ণ আডবাণী, নিতিন গডকড়ীকেও।

Piyush Goyal Budget 2019 Union Budget
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy