Advertisement
E-Paper

বুরারির মৃত্যুজট খুলতে আত্মীয়দের মনের ময়নাতদন্ত করবে পুলিশ

বুরারির ভাটিয়া পরিবারের মৃত্যু-রহস্য উন্মোচনে অনেকটা সেই ধাঁচেই পরিবারের ঘনিষ্ঠদের মনের কাটাছেঁড়া করবে পুলিশ। চিকিৎসা বিজ্ঞানে যার নাম ‘সাইকোলজিক্যাল অটোপসি’।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৮ ১৩:৪৪
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

মনের ময়নাতদন্ত। বুরারি গণ ‘আত্মহত্যা’ কাণ্ডের জট খুলতে এ বার এই পদ্ধতিরই প্রয়োগ করতে চলেছে পুলিশ। মৃত্যুর কারণ জানতে শরীরের কাটাছেঁড়া করে পুলিশ। বুরারির ভাটিয়া পরিবারের মৃত্যু-রহস্য উন্মোচনে অনেকটা সেই ধাঁচেই পরিবারের ঘনিষ্ঠদের মনের কাটাছেঁড়া করবে পুলিশ। চিকিৎসা বিজ্ঞানে যার নাম ‘সাইকোলজিক্যাল অটোপসি’।

কারণ, উদ্ধার হওয়া ডায়েরি এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে দিল্লি পুলিশের অনুমান, ভাটিয়া পরিবার ‘শেয়ারড সাইকোসিস ডিসঅর্ডার’ নামে এক বিরল মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিলেন। ঘনিষ্ঠ ভাবে মানসিক যোগ থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে এই সমস্যা দেখা যায়। শেয়ারড কারণ, ছোঁয়াচে রোগের মতো এই মনোবিকার আক্রান্ত মানুষের থেকে তাঁর ঘনিষ্ঠদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। আর জ্বর-সর্দির মতো শরীরে না ছড়িয়ে আক্রান্তদের মনে-মনে ছড়িয়ে পড়ে এই রোগ, তাই সাইকোসিস ডিসঅর্ডার । এতেই আক্রান্ত ছিলেন ভাটিয়া পরিবারের ওই ১১ সদস্য। রবিবারের পর থেকে তদন্ত চালিয়ে আপাতত এই অনুমানে পৌঁছেছে পুলিশ। কিন্তু ভাটিয়া পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা কোনওভাবেই এটা মানতে চাইছেন না যে, ললিত গুপ্তসাধন বা অতিপ্রাকৃতে বিশ্বাস করতেন, বা ললিতের মতো বাকি ১০ জনের মনেও এমন বিশ্বাস ছিল। ভাটিয়া পরিবারের বাকি সদস্যেরা বারবারই এটাকে গণ আত্মহত্যা না বলে খুন বলছেন। কিছু ক্ষেত্রে খটকা লাগলেও ময়নাতদন্তের রিপোর্টে ওই ১১ জনেরই দেহে জোরজবরদস্তির কোনও প্রমাণ পায়নি পুলিশ। ভাটিয়া পরিবারের অন্যান্য সদস্যেরা কিছু লুকোচ্ছেন কি না, তা নিশ্চিত করতেই সদস্যদের সাইকোলজিক্যাল অটোপসি করতে চাইছে পুলিশ।

সাইকোলজিক্যাল অটোপসি কী?

মানসিক রোগের চিকিৎসক দেবাঞ্জন পাল বলেন, ‘‘মূলত একজন মনোরোগ চিকিৎসকই ঘনিষ্ঠদের জেরা করবেন। বিভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমেই বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করবেন ভাটিয়া পরিবারের মৃত সদস্যদের মানসিক অবস্থা কেমন ছিল। প্রয়োজনে সাইকোমেট্রি পরীক্ষাও করাতে পারেন। যাতে প্রশ্নোত্তরের সময় ঘনিষ্ঠরা কতটা উদ্বিগ্ন, ভয় পাচ্ছেন কি না তা বোঝা যাবে, তাঁরা কিছু লুকোতে চাইলে এগুলো অ্যানালিসিস করেই অনেকটা বোঝা সম্ভব।’’

আর এক মানসিক রোগের চিকিৎসক অমিতাভ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ অপরাধীদের ক্ষেত্রে নার্কো অ্যানালিসির করা হয়। আর মানসিক রোগীদের ক্ষেত্রে সাইকোলজিক্যাল অটোপসি। তবে নার্কোর থেকে এটা একটু আলাদা। এখানে কোনও ওষুধের প্রয়োগ করা হয় না। পরিবর্তে একজন মানসিক রোগের চিকিৎসকের সামনে বসিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করে বুঝে নেওয়ার চেষ্টা হয় একজনের আচরণ।’’ কেউ অতিপ্রাকৃতে বিশ্বাস করেন কি না, বা আত্মহত্যার প্রবণতা আছে কিনা, এই পদ্ধতিকে আগাম তা জেনে ফেলা যায়। কিন্তু পুলিশ জানিয়েছে, যেহেতু ভাটিয়া পরিবারের সদস্যেরা মারা গিয়েছেন তাই তাঁদের পরিবারের ঘনিষ্ঠদের উপরই এই পদ্ধতির প্রয়োগ করা হবে। তবে এই পদ্ধতিতে ১০০ শতাংশ সঠিক ফলাফল পাওয়া সহজ নয়, জানান মানসিক রোগের চিকিৎসক অমিতাভবাবু।

আরও পড়ুন: বুরারির ঘটনায় মানসিক রোগের ইঙ্গিত

শনিবার রাতে আত্মহত্যার সময়ে মূলত ললিত ও তাঁর স্ত্রী টিনাই সকলের হাত-পা, মুখ বেঁধে দেন বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। দিল্লির বিদ্যাসাগর ইনস্টিটিউট অফ মেন্টাল হেল্থ অ্যান্ড নিউরো সায়েন্সের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে বেশ কয়েকটি বিষয় সামনে এনেছে পুলিশ। ১) হতে পারে, ললিত স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন। স্কিৎজোফ্রেনিক বলেই মৃত বাবাকে নিয়ে অলীক কল্পনা করতেন তিনি। আর তাঁর স্ত্রী টিনা আসলে শেয়ারড সাইকোসিস ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত। তাই স্বামীর অলীক কল্পনা স্ত্রী টিনার মধ্যেও খুব সহজে সঞ্চারিত হয়। খুব সহজে ললিতের কথায় বিশ্বাস করতে শুরু করেন তিনি। আর বাকি লোকেদেরও ক্রমশ তাতে বিশ্বাস করান তাঁরা। বা ২) জিনগত সমস্যার ফলে বাকিদের মধ্যেও ওই লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

আরও পড়ুন: ডায়েরিতে ‘বাবার স্বপ্নাদেশ’, হ্যালুসিনেশনের বলি বুরারির পরিবার?

তবে এসবের মধ্যে খুনের বিষয়টিও পুরোপুরি উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, ময়নাতদন্তে ১১ জনের মধ্যে কয়েক জনের পেটে তরল রাসায়নিক মিলেছে। তারও পরীক্ষা চলছে।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

Burari deaths Delhi Mass suicide বুরারি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy