Advertisement
E-Paper

উচ্চবর্ণের মন পেতে ১০ শতাংশ সংরক্ষণ, ভোটে ‘কল্পতরু’ মোদী

মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, রাজস্থানের ভোটে ইঙ্গিত মিলেছে, উচ্চবর্ণের ভোট বিজেপির থেকে সরে যাচ্ছে। বিজেপি নেতৃত্বের আশা, মোদীর এই সিদ্ধান্ত ভোটে তুরুপের তাস হয়ে উঠবে। উচ্চবর্ণের ভোট ফের বিজেপির পক্ষে এককাট্টা হবে।  অন্য দিকে মোদীর ‘গরিব দরদি’ ভাবমূর্তি নিয়ে প্রচারে নামা যাবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:৪৬
উচ্চবর্ণের গরিবদের জন্য সংরক্ষণের পদক্ষেপ মোদীর।—ছবি পিটিআই।

উচ্চবর্ণের গরিবদের জন্য সংরক্ষণের পদক্ষেপ মোদীর।—ছবি পিটিআই।

উনিশের লোকসভা ভোটকে নজরে রেখে উচ্চবর্ণ বা ‘জেনারেল ক্যাটিগরি’-র পিছিয়ে পড়া অংশের জন্য সরকারি চাকরি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১০ শতাংশ সংরক্ষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা শ্রেণির নতুন সংজ্ঞাও নির্ধারিত করেছে মোদী সরকার। পরে সুপ্রিম কোর্টে এই সিদ্ধান্ত খারিজ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকলেও শীঘ্রই এ বিষয়ে সংবিধান সংশোধনী বিল আনতে পারে সরকার।

মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, রাজস্থানের ভোটে ইঙ্গিত মিলেছে, উচ্চবর্ণের ভোট বিজেপির থেকে সরে যাচ্ছে। বিজেপি নেতৃত্বের আশা, মোদীর এই সিদ্ধান্ত ভোটে তুরুপের তাস হয়ে উঠবে। উচ্চবর্ণের ভোট ফের বিজেপির পক্ষে এককাট্টা হবে। অন্য দিকে মোদীর ‘গরিব দরদি’ ভাবমূর্তি নিয়ে প্রচারে নামা যাবে। ২০১৯-এ উত্তরপ্রদেশে এসপি-বিএসপি জোটে যোগ না দিলে নানা জায়গায় কংগ্রেস প্রার্থী দেবে। লক্ষ্য বিজেপির উচ্চবর্ণের ভোটব্যাঙ্কে ভাগ বসানো। হিন্দু আবেগে ঢেউ তুলতে রামমন্দির ম্যাজিক কাজ করবে কি না, তা নিয়েও বিজেপি ধন্দে।

এই পরিস্থিতিতেই উচ্চবর্ণের গরিবদের জন্য সংরক্ষণের পদক্ষেপ মোদীর। যাকে হাতিয়ার করে আজ রাফাল-দুর্নীতি, কৃষকদের অসন্তোষ, চাকরির অভাব, নোট বাতিল নিয়ে বিতর্কের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে বিজেপি। এই দলের নেতারা মনে করছেন, কোনও বিরোধী দলের পক্ষেই এই সংরক্ষণের বিরোধিতা করা সম্ভব নয়। উচ্চবর্ণের মধ্যে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষদের জন্য সংরক্ষণের দাবিতে গুজরাত-রাজস্থান-মহারাষ্ট্রে পাতিদার, জাঠ, গুজ্জর, মরাঠারা আন্দোলন করেছেন। তাঁরাও একে স্বাগত জানাবেন। সে দিক থেকে বিজেপির অঙ্ক কিছুটা মিলে গিয়েছে। কংগ্রেসের কোর গ্রুপের বৈঠক করে নীতিগত ভাবে সংরক্ষণের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা না করে সরকারের আসল উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাহুল। কেন সাড়ে চার বছর পেরিয়ে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিল, তা-ও জানতে চেয়েছে কংগ্রেস।

তবে বিরোধী নেতা থেকে প্রবীণ আইনজীবীদের অনেকেরই ধারণা— সংরক্ষণের এই সিদ্ধান্ত আদালতে খারিজ হয়ে যাবে। কারণ, সুপ্রিম কোর্টের রায় বলেছে— সংরক্ষণের ঊর্ধ্বসীমা ৫০ শতাংশের বেশি হতে পারে না। তা শুনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, সংবিধানের ১৫ ও ১৬-তম অনুচ্ছেদ সংশোধন করতে সংসদে বিল আনা হবে। বিল পাশের পরে সুপ্রিম কোর্টে তা চ্যালেঞ্জ হলে, পরে দেখা যাবে। আগে তো ভোট কাটুক! এখানেই বিরোধীদের অভিযোগ, ভোটের আগে গরিব মানুষের সামনে খুড়োর কল ঝোলাচ্ছে মোদী সরকার। গুজরাতের পাতিদার আন্দোলনের নেতা হার্দিক পটেল একে ‘ভোটের আগে ললিপপ’ আখ্যা দিয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন, বছরে আড়াই লক্ষ টাকা আয় হলেই যদি ‘গরিব নয়’ সংজ্ঞায় আয়কর নেওয়া হয়, সংরক্ষণের প্রশ্নে ৮ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ের লোক কী করে ‘গরিব’ হন?

মঙ্গলবারই সংসদের চলতি অধিবেশনের শেষ দিন। তার পরে শুধু বাজেট অধিবেশন বাকি।

একটি সূত্রের খবর, আগামিকালই সংবিধান সংশোধনী বিলটি আনার চেষ্টা হতে পারে। সংবিধান সংশোধনী বিল পাশ করতে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন।

ঘটনা হল, মন্ত্রিসভায় সংরক্ষণ নিয়ে সিদ্ধান্ত হলেও সরকারি ভাবে এর কোনও ঘোষণা হয়নি। কোনও ক্যাবিনেট মন্ত্রী এ নিয়ে মুখ খোলেননি। বিজেপির হয়ে শিবরাজ সিংহ চৌহান, কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শিবপ্রতাপ শুক্ল, শরিক দলের মন্ত্রী রামদাস আঠওয়ালে এর পক্ষে সওয়াল করেন। সরকারি সূত্রের দাবি, এই সিদ্ধান্তে অন্তত ৫.৫ কোটি পরিবার উপকৃত হবেন। এখন সিংহভাগ সরকারি চাকরিই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে। সেখানে গরিবদের ভিড় বেশি। ফলে তাঁরা লাভবান হবেন। তবে কংগ্রেসের বক্তব্য, ২৪ লক্ষ পদ খালি পড়ে রয়েছে। সেখানে নিয়োগ না-করে সংরক্ষণের কথা বলছে সরকার।

এখন সরকারি চাকরির নিয়োগে তফসিলি জাতির জন্য ১৫%, তফসিলি জনজাতির জন্য ৭.৫% এবং ওবিসি-দের জন্য ২৭% আসন সংরক্ষিত রয়েছে। সব মিলিয়ে ৪৯.৫%। তার পরেও মনমোহন সিংহের জমানায় সরকারি কমিটি আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষের জন্য ১০% আসন সংরক্ষণের সুপারিশ করেছিল। হরিয়ানার মতো রাজ্যেও এই চেষ্টা হয়েছে। দলিত নেত্রী মায়াবতীও এই দাবি তুলেছেন।

সব ক্ষেত্রেই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্টের ইন্দ্রা সাহনে মামলার রায়। মণ্ডল কমিশনের সুপারিশ মেনে ওবিসিদের জন্য সংরক্ষণ নিয়ে ক্ষোভ ধামাচাপা দিতে পি ভি নরসিংহ রাও সরকার আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকাদের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলেন। তা খারিজ করে দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বলে, কোনও ভাবেই সংরক্ষণ ৫০%-এর বেশি হতে পারবে না। অথচ মোদী সরকারের আজকের সিদ্ধান্তে মোট সংরক্ষিত আসনের হার ৪৯.৫%-র সঙ্গে ১০% যোগ হয়ে ৫৯.৫%-এ পৌঁছচ্ছে।

Reservation General Caste Narendra Modi Lok Sabha Election 2019 লোকসভা ভোট ২০১৯
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy