ছবি: সংগৃহীত।
লোকসভা নির্বাচনে অবিবেচকের মতো বিজেপিকে ভোট দেওয়ার খেসারত দিতে হচ্ছে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের মাধ্যমে। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি)-কে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে এ ভাবেই আক্রমণ শানালেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম।
প্রায় সাত ঘণ্টার ম্যারাথন বিতর্কের পর সোমবার মধ্যরাতে লোকসভায় পাশ হয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। লোকসভার ৩১১ জন সাংসদই এর পক্ষে সায় দিয়েছেন। বিলের তীব্র বিরোধিতা করলেও তা আটকাতে ব্যর্থ হয়েছেন কংগ্রেস, তৃণমূল, মুসলিম লিগ বা সিপিএম-সহ নানা বিরোধী দলের সাংসদরা। তবে তা সত্ত্বেও এই বিলকে ‘স্পষ্টতই অসাংবিধানিক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন চিদম্বরম। এ দিন সকালে সংসদে ঢোকার পথে তিনি বলেন, ‘‘একটি দলকে এমন অবিবেচকের মতো নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিলে তার খেসারত এ ভাবেই দিতে হয়, যা দিয়ে রাষ্ট্র এবং জনগণের ইচ্ছাকে পদদলিত করার জন্য ব্যবহার করে ওই দল।’’
আরও পড়ুন: নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে উত্তাল উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি, চলছে ১১ ঘণ্টার বনধ
বিরোধীদের অভিযোগ, লোকসভার পর রাজ্যসভায় এই বিল পাশ হলে তা হবে এ দেশের প্রথম বিল যা ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব নির্ধারণ করে। এই বিল সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারার পরিপন্থী বলেই মত বিরোধী-সহ দেশের নাগরিক সমাজের একাংশের। ওই ধারা অনুযায়ী, রাষ্ট্র কখনই নাগরিককে সমানাধিকার বা আইনি সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত করবে না। এবং কোনও নাগরিকের ধর্ম, জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ বা জন্মস্থানের ভিত্তিতে রাষ্ট্র কখনই তাঁর সঙ্গে বৈষম্যমূলক ব্যবহার করবে না। তবে এই সংশোধনী বিলে বলা হয়েছে, পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে ধর্মীয় নিপীড়ণের জেরে বিতারিত হয়ে আসা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টান জনগোষ্ঠী শরণার্থীদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী, অন্তত ১১ বছর ভারতে থাকলে তবেই কোনও ব্যক্তিকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। নয়া বিলে ওই সংস্থান কমিয়ে পাঁচ বছর করা হয়েছে। এবং সেখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কথা বাদ দেওয়া হয়েছে।
CAB is unconstitutional. Parliament passes a Bill that is patently unconstitutional and the battle ground shifts to the Supreme Court.
— P. Chidambaram (@PChidambaram_IN) December 10, 2019
Elected Parliamentarians are abdicating their responsibilities in favour of lawyers and judges!
লোকসভার পাশাপাশি এই বিলের বিরুদ্ধে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিশেষ করে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে তুমুল বিরোধিতার মুখে পড়েছে মোদী সরকার। দ্য নর্থ ইস্ট স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন (এনইএসও)-র মতো ছাত্র সংগঠনের ডাকে এ দিন ভোর ৫টা থেকে অসম, অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয়, মিজোরাম এবং ত্রিপুরা— এই ছয় রাজ্যে ১১ ঘণ্টার বন্ধ শুরু হয়েছে। তাতে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলির একাংশের সমর্থন রয়েছে।
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে গুয়াহাটিতে এনইএসও-র সদস্যদের প্রতিবাদ। ছবি: এএফপি।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে এক হাজারেরও বেশি বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ এই বিলের বিপক্ষে খোলা বিবৃতি দিয়েছেন। তাঁদের মতে, ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব বণ্টন করা ‘খুবই উদ্বেগজনক’। এ ছাড়া, এ দিন সংসদ ভবনের সামনেও বিক্ষোভ-প্রতিবাদের কর্মসূচি নিয়েছেন বিরোধী সাংসদেরা।
আরও পড়ুন: নাগরিকত্ব বিলে সমর্থন নিয়ে জেডিইউ-এর সমালোচনায় প্রশান্ত কিশোর
আরও পড়ুন: অটোয় পরিত্যক্ত সুটকেসে তরুণীর মুণ্ডহীন দেহ, ৩০ ঘণ্টার মধ্যে বাবা গ্রেফতার
তবে বিরোধিতা সত্ত্বেও লোকসভার পর রাজ্যসভায় এই বিল পাশ হয়ে গেলে তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আইনি লড়াই হবে বলে জানিয়েছেন অসমের কংগ্রেস নেতা গৌরব গগৈ। এ নিয়েও চুপ থাকেননি চিদাম্বরম। তাঁর দাবি, ‘‘সিএবি হল অসাংবিধানিক। সংসদে এমন একটা বিল পাশ হয়েছে যা স্পষ্টতই অসাংবিধানিক এবং লড়াইয়ের ময়দানটা এখন সুপ্রিম কোর্টে সরে গিয়েছে। এতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা আইনজীবী ও বিচারকদের পক্ষে নিজেদের দায়িত্ব এড়াচ্ছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy