—ফাইল চিত্র।
প্রতিবাদের প্যান্ডেলে এক-এক দফায় পালা করে ১০-১৫ জনের প্রতীকী প্রতিবাদেই আন্দোলনের ‘সেঞ্চুরি’ ছুঁল শাহিন বাগ। আজই একশো দিনে পড়ল এই প্রতিবাদ-আন্দোলন। ভগৎ সিংহের আত্মদানের স্মৃতিতে এই ২৩ মার্চ এমনিতেই পালন করা হয় শহিদ দিবস হিসেবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে এ দিন মঞ্চে ভিড় উপচে পড়ত বলে মনে করছেন আন্দোলনকারীরা। হয়তো হত বিশেষ সমাবেশও। আপাতত করোনার কামড় এবং তাকে রুখতে সরকারি নির্দেশিকার ফলে সে সবের প্রশ্ন নেই।
করোনার সংক্রমণ রুখতে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বার হতে নিষেধ করেছে কেন্দ্র। শুরু হয়েছে লকডাউন। ১৪৪ ধারা জারি করেছে দিল্লি সরকারও। যার মানে, কোথাও চার জন বা তার বেশি জড়ো হওয়াই এই মুহূর্তে বেআইনি। তা সত্ত্বেও কী ভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে শাহিন বাগ? অন্যতম আন্দোলনকারী প্রকাশ দেবী বলেন, “পৃথিবী জুড়ে করোনা যে ভয়ঙ্কর চেহারা নিচ্ছে, সে সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল। সেই কারণেই এক বারে ১০ থেকে ১৫ জনের বেশি প্যান্ডেলে বসেননি। একে অপরের সঙ্গে বিস্তর ফাঁক রেখেই বসেছেন। সকলের মুখে মাস্ক থাকছে। কিছু ক্ষণ পরপর হাতে দেওয়া হচ্ছে স্যানিটাইজ়ার।” গত পরশু পুরো প্রতিবাদস্থল স্যানিটাইজ় করা হয়েছে বলেও তাঁর দাবি।
কিন্তু গত কাল যেখানে পাঁচ জন করে প্যান্ডেলে বসছিলেন, সেখানে আজ ১০-১৫ জন কেন? প্রতিবাদীদের একাংশের দাবি, “ঠিক হয়েছিল, পাঁচ জনই বসবেন। কিন্তু গতকাল শাহিন বাগে ফের পেট্রল বোমা ছুড়েছে দুষ্কৃতীরা। পেট্রল বোমা ছোড়া হয়েছে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার ৭ নম্বর গেটের প্রতিবাদস্থলেও। এ সবের পরে নিরাপত্তার অভাব বোধ করা স্বাভাবিক নয় কি?” মূলত সেই কারণেই এ দিন তুলনায় বেশি জন বসেছেন বলে দাবি ওঁদের।
আরও পড়ুন: মহারাষ্ট্র জুড়ে জারি হল কার্ফু, স্টেজ টুতেই করোনা আটকাতে কড়া পদক্ষেপ
কিন্তু করোনা-সঙ্কটের এই সময়ে সরকারি নিয়ম না-মেনে জমায়েত চালিয়ে যাওয়া যুক্তিযুক্ত কি? উত্তরে জুনেদের মতো প্রতিবাদীরা বলছেন, “দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে বলেই আন্দোলন চালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছি আমরা। এখান থেকে সরে এলে মাথা গোঁজার ঠাঁই পর্যন্ত হারাতে হবে আমাদের।” আজ ভোর থেকে লকডাউন ঘোষণা হওয়ার আগে কাল রাতেই ১৪৪ ধারা জারি করেছিল সরকার। কোনও প্রতিবাদ কর্মসূচি চলবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল সেই নির্দেশিকাতেই। শাহিন বাগ তখনই প্রশ্ন তুলেছিল, “চাইলে তো এক জন বসেও আন্দোলন করতে পারেন। তাতে বাধা কেন?”
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী পীযূষ রায় যদিও জানাচ্ছেন, ১৪৪ ধারায় প্রশাসন চাইলে এক বা দু’জনের আন্দোলনেও নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে। এ বিষয়ে ২০১২ সালে সুপ্রিম কোর্টের আদেশও আছে। তা ছাড়া, লকডাউন ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পরে এক জনেরও প্রয়োজন ছাড়া বাইরে থাকার কথা নয়। অতএব? এক দিকে করোনার ভয়, অন্য দিকে করোনার সূত্র ধরে আন্দোলনের জমি হারিয়ে ফেলার ভয়। এই জোড়া আতঙ্কই শাহিন বাগে সঙ্গী একশো দিনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy