Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

একাধিক রাজ্যের বহু জায়গায় ঘুরেছেন ইতালির পর্যটকরা, করোনা সংক্রমণ বাড়তে পারে আরও

একটি ট্যুর অপারেটর গ্রুপের মাধ্যমে গত ২১ ফেব্রুয়ারি ১২ দিনের জন্য ভারতে বেড়াতে এসেছিলেন ওই পর্যটকরা।

হোটেল থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইতালির পর্যটকদের। ছবি: পিটিআই

হোটেল থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইতালির পর্যটকদের। ছবি: পিটিআই

সংবাদ সংস্থা
জয়পুর শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২০ ১৮:১৭
Share: Save:

শুধুই কি ইতালির ১৬ পর্যটক? ওই পর্যটকরা যাঁদের সংস্পর্শে এসেছেন তাঁদের কি নোভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমণের সম্ভাবনা নেই? উড়িয়ে দিচ্ছেন না চিকিৎসকরা। প্রমাণও মিলেছে। ওই দলের সঙ্গে থাকা এক ট্যুর গাইডও করোনায় আক্রান্ত। ওই পর্যটকরা যে একাধিক রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকায় ঘুরে বেড়িয়েছেন সেখানকার এক বা একাধিক ব্যক্তি আক্রান্ত হলেও আশ্চর্যের কিছু নেই। এমন আশঙ্কা করে আরও অন্তত ১০০ জনকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

একটি ট্যুর অপারেটর গ্রুপের মাধ্যমে গত ২১ ফেব্রুয়ারি ১২ দিনের জন্য ভারতে বেড়াতে এসেছিলেন ওই পর্যটকরা। গুজরাত, রাজস্থান, দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়িয়েছেন তাঁরা। থাকা-খাওয়া, বেড়ানো মিলিয়ে গত ৯-১০ দিনে শতাধিক লোকের সংস্পর্ষে এসেছেন। সেই সব হোটেল, রেস্তোরাঁ বা পর্যটনকেন্দ্রের লোকজনেরও সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

২১ ফেব্রুয়ারি ভারতে আসার পর গুজরাতের দ্বারকায় বেড়ানোর পর একটি বিলাসবহুল হোটেলে মধ্যাহ্নভোজ সারেন। ওই দিনই দ্বারকা থেকে যান রাজস্থানের মাণ্ডোয়াতে। সেখানকার একটি হোটেলে থেকে পরের দিন মাণ্ডোয়ার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখেন। তার পর যান বিকানেরে। ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকানেরে জুনাগড় দুর্গ ঘোরার পাশাপাশি স্থানীয় বাজারে কেনাকাটা করেন।

২৩-২৫ ফেব্রুয়ারি তাঁদের ভ্রমণের তালিকায় ছিল জয়সালমের। জয়সালমের দুর্গ, গাদিসার লেক ঘুরে দেখার পর সেখানেও কেনাকাটা করেন তাঁরা। ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি জোধপুরের মেহরানাগড় দু্র্গ-সহ স্থানীয় বেড়ানোর জায়গাগুলিতে যান। ২৬ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি ঘুরে দেখেন উদয়পুর সিটি প্যালেস।

আরও পড়ুন: বাজেট অধিবেশন থেকে সাসপেন্ড ৭ কংগ্রেস সাংসদ, ক্ষোভ অধীরের

ইতালির পর্যটকদের ওই দলটির নেতৃত্বে ছিলেন এক দম্পতি। মূলত তাঁদের উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনাতেই ভারতে বেড়াতে এসেছিলেন ওই পর্যটকরা। ২৮ ফেব্রুয়ারি জয়পুরে গিয়ে প্রথম কাশি ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা শুরু হয় পর্যটক দলের উদ্যোক্তার। তাঁকে ভর্তি করা হয় ফোর্টিস হাসপাতালে। তাঁর স্ত্রী হাসপাতালেই তাঁর সঙ্গে থেকে যান। বাকি পর্যটকরা যান আগ্রায়। পরের দিন ওই ব্যক্তিকে জয়পুরের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, যেখানে ‘আইসোলেশন’ বা আলাদা করে রাখার ব্যবস্থা আছে।

অন্য দিকে বাকি পর্যটকরা ১ ও ২ মার্চ আগ্রায় তাজমহল ও সংলগ্ন এলাকায় ঘোরাঘুরি করেন। সেখান থেকে তাঁরা পৌঁছে যান দিল্লিতে। অসুস্থ ব্যক্তির স্ত্রীর করোনা ভাইরাস টেস্ট হয়। তবে নেগেটিভ, অর্থাৎ সংক্রমণ ধরা পড়েনি। ২ মার্চ ওই দলটি দিল্লির জামা মসজিদ, কুতুব মিনার পরিদর্শনের পর একটি হোটেলে ওঠেন।

সেখানেই প্রথম তাঁরা জানতে পারেন করোনা সংক্রমণের কথা। হোটেল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়, জয়পুরে তাঁদের যে সঙ্গী হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, তাঁর দেহে করোনার সংক্রমণ হয়েছে। তাঁদের বলা হয়, নিজের নিজের ঘরে থাকতে এবং ঘর থেকে না বেরোতে।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

আরও পড়ুন: নয়া চ্যালেঞ্জ, বলছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী, ভাইজাগে ৫ জনের দেহে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা

পরের দিন অর্থাৎ ৩ মার্চ তাঁদের ফেরার টিকিট ছিল। ইতালি ফেরার বিমান ধরতে তাঁরা দিল্লির ইন্দিরা গাঁধী বিমানবন্দরেও পৌঁছন। কিন্তু সেখানে তাঁদের আটকে দেওয়া হয়। করোনার সংক্রমণ সন্দেহে বিমানে ওঠার অনুমতি দেয়নি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রায় দু’ঘণ্টা বিমানবন্দরে আটকে থাকার পর ট্যুর অপারেটর সংস্থার সঙ্গ যোগাযোগ করে দিল্লির বসন্তকুঞ্জ এলাকার একটি বিলাসবহুল হোটেলে ফিরে আসেন তাঁরা। সেখান থেকে পাঠানো হয় নজফগড়ে আইটিবিপির ‘আইসোলেশন’-এর সুবিধাযুক্ত হাসপাতালে।

৪ মার্চ পরীক্ষায় ধরা পড়ে, জয়পুরে আক্রান্ত ব্যক্তির স্ত্রী তো বটেই ওই পর্যটক দলের আরও ১৪ জন করোনা আক্রান্ত। তাঁদের গুরুগ্রামের মেদান্ত মেডিসিটি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আবার ট্যুর গাইডের শরীরেও করোনা সংক্রমণের প্রমাণ মিলেছে। তিনি চিকিৎসাধীন দিল্লির সফদর জং হাসপাতালে। তবে যাঁদের সংক্রমণ হয়নি, তাঁদের ইতালির দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

করোনা সংক্রমণ রুখতে বড় জমায়েত বা সমাবেশে নিষেধ করছেন বিশেষজ্ঞরা। হাওয়ার মাধ্যমে সংক্রমণের সম্ভাবনা না থাকলেও সংস্পর্শে এলে সংক্রমণের সম্ভাবনা প্রবল। এই পর্যটকদের ঘুরে বেড়ানোর মানচিত্র থেকে স্পষ্ট, বিপুল সংখক লোকজনের সরাসরি সংস্পর্শে এসেছেন তাঁরা। পর্যটনকেন্দ্র, বাজারের মতো জনবহুল এলাকায় গিয়েছেন। ওয়াকিবহাল মহলের অনুমান, সেই সংখ্যাটা অন্তত ১০০। তাঁদের অনেকেই যে সংক্রামিত হতে পারেন, তেমন আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে দেশে করোনার সংক্রমণ আরও বড় আকার নিতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Italy Tourist
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE