Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

‘অপরিচিত’ চিকিৎসকের চেষ্টায় আরব থেকে সন্তানের দেহ নিয়ে ফিরলেন কেরলের দম্পতি

মৃত্যুর পর থেকে বৈষ্ণবের দেহ আল আইনের আল তাওয়াম হাসাপাতালে পড়ে রয়েছে। তার পরিবার এখনও শোক প্রকাশ করার সময়ও পায়নি, চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দেশে ফেরার।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২০ ১৯:২৭
Share: Save:

করোনার অতিমারির এই কঠিন সময়ে মানুষ যেমন কখনও কখনও নিজেকে চূড়ান্ত অসহায় মনে করছেন, তেমন অনেক অচেনা অজানাদের কাছ থেকে অপ্রত্যাশিত সাহায্য তাঁদের কাছে আশীর্বাদ হয়ে উপস্থিত হচ্ছে। এমনই এক ঘটনা সামনে এল। কেরলের এক দম্পতির চার বছরের সন্তানের দেহ আরব থেকে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করলেন অসমের এক চিকিৎসক। এর আগে তাঁদের মধ্যে কোনও রকম পরিচয়ও ছিল না।

কেরলের কৃষ্ণদাস ও তাঁর স্ত্রী দিব্যা সাত বছর আগে কর্মসূত্রে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির শারজায় যান। ৮ মে তাঁরা তাঁদের চার বছরের সন্তান বৈষ্ণব-কে হারান। বৈষ্ণবের মাত্র দিন পনেরো আগে লিউকোমিয়া ধরা পড়ে। ঠিক করে চিকিৎসা শুরু হওয়ার আগেই মারা যায় সে।

কৃষ্ণদাস জানিয়েছেন, তাঁরা চেয়েছিলেন, ছেলের অন্ত্যেষ্টি যাতে পুরো রীতি মেনে কেরলেই হয়। তাই তাঁরা দ্রুত কেরল ফিরতে চাইছিলেন। কিন্তু করোনার জেরে বিদেশ থেকে ঘরে ফেরার হুড়োহুড়ি শুরু হয়। ফলে সুযোগ পাওয়া মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। যথাসাধ্য চেষ্টা করেও বন্দে ভারতের উড়ানের টিকিট জোগাড় করতে পারেননি কৃষ্ণদাসরা।

আরও পড়ুন: ১৪ ঘণ্টা বোট চালিয়ে গোটা শহরের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন সুপারমার্কেট মালিক

কৃষ্ণদাসের এই কাহিনি সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে চোখে পড়ে অসমের ডিব্রুগড়ের চিকিৎসক ভাস্কর পাপুকন গগৈয়ের। তিনি জানতে পারেন, মৃত্যুর পর থেকে বৈষ্ণবের দেহ আল আইনের আল তাওয়াম হাসাপাতালে পড়ে রয়েছে। তার পরিবার এখনও শোক প্রকাশ করার সময়ও পায়নি, চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দেশে ফেরার।

আরও পড়ুন: লকডাউনে রাস্তা ‘অবরোধ’ এক দল জাতীয় পাখির!

ভাস্কর তখন নিজের সাধ্যমতো চেষ্টা শুরু করেন অচেনা এই পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর। তিনি সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কৃষ্ণদাসের পরিবারের খবর সে দেশের এক প্রথম সারির সংবাদপত্রে প্রকাশ পায়। সেই সংবাদপত্রের সাংবাদিকের সঙ্গেও যোগাযোগ করেন ভাস্কর। তাঁর মাধ্যমে যোগাযোগ হয় কষ্ণদাসের সঙ্গেও। সেখান থেকে সব তথ্য সংগ্রহ করে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ভাস্কর। বিদেশমন্ত্রীর গোচরে আসার পর বিষয়টির দ্রুত সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন। ভাস্কর জানিয়েছেন, বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ১৩ মে যোগাযোগ হয়। পরের দিনই বিদশমন্ত্রকের তরফে জানানো হয়, ওই পরিবারকে ফিরিয়ে আনতে সব রকম ব্যবস্থা করা হয়েছে।

প্রচুর চাপ থাকা সত্ত্বেও বন্দে ভারত উড়ানের টিকিট পান কৃষ্ণদাস ও স্ত্রী, সন্তানের দেহ ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়। তাঁদের এই বিমান যাত্রার খরচ সরকারের তরফেই বহন করা হয়। অবশেষে ১৬ মে তাঁরা কোচিতে নামেন। কেরলেই তাঁদের সন্তানের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

কৃষ্ণদাস ও তাঁর পরিবার চিকিৎসক ভাস্কর গগৈ ও বিদশমন্ত্রীর প্রতি অকুণ্ঠ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। বলেন, এঁরা না থাকলে আজ তাঁদের সন্তানের দেহ নিয়ে বাড়ি ফেরা সম্ভব হত না। চার বছরের সন্তান হারানোর এই শোকের মধ্যে এটাই তাঁদের সান্ত্বনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Kerala UAE
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE