Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

ভারত-আমেরিকা-ইটালিতে কিন্তু করোনার ছোঁয়াচ লেগেছিল প্রায় এক সময়ে

১৩০ কোটির দেশ ভারত জনঘনত্বের নিরিখে আমেরিকা-ইউরোপের বহু দেশের চেয়ে এগিয়ে। সেখানে করোনা একবার ঢুকে পড়লে, পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল।

করোনার প্রকোপে মৃত্যুমিছিল অব্যাহত বিশ্ব জুড়ে।

করোনার প্রকোপে মৃত্যুমিছিল অব্যাহত বিশ্ব জুড়ে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২০ ১৮:২৭
Share: Save:

পারলে ভারতই পথ দেখাতে পারবে, নোভেল করোনার প্রকোপে গোটা বিশ্ব যখন ধুঁকছে, সেইসময় এমন বার্তা দিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)।যুগান্তকারী কোনও আবিষ্কার করে সাড়া ফেলে দিতে না পারলেও, হু-র সেই প্রত্যাশা খানিকটা হলেও পূরণ করতে পারল ভারত। গত দু’মাসে আমেরিকা এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আক্রান্তের সংখ্যা যখন লাখের কোটায় ঘোরাফেরা করছে, সেইসময় আক্রান্তের সংখ্যা ২ থেকে ৩ হাজারের মধ্যেই বেঁধে রাখতে পারল ভারত।

১৩০ কোটির দেশ ভারত জনঘনত্বের নিরিখে আমেরিকা-ইউরোপের বহু দেশের চেয়ে এগিয়ে। সেখানে করোনা একবার ঢুকে পড়লে, পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু দু’মাস আগে এ দেশে করোনার প্রবেশ ঘটলেও, এখনও পর্যন্ত তা মহামারি হয়ে উঠতে পারেনি। বরং ৩০ জানুয়ারি প্রথম করোনা আক্রান্তের হদিশ মেলা থেকে এখনও পর্যন্ত ভারতে ২ হাজার ৯০২ জন নোভেল করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। প্রাণ হারিয়েছেন ৬৮ জন।

বিদেশফেরতদের হাত ধরেই ভারতে করোনা ভাইরাসের প্রবেশ।তা যাতে গোষ্ঠী সংক্রমণের আকার ধারণ করতে না পারে তার জন্য গত ২৪ মার্চ থেকে দেশ জুড়ে ২১ দিনব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাতেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা গিয়েছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। ভারতের এই সিদ্ধান্তকে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়েছে হু। ভারত দ্রুত পদক্ষেপ করাতেই ফল মিলেছে বলে জানিয়েছে তারা।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আরও পড়ুন: লেবু, আপেলে থুতু লাগাচ্ছেন বিক্রেতা, ভাইরাল ভিডিয়ো কার এবং কবেকার জেনে রাখুন​

কিন্তুমজবুত অর্থনীতি, উন্নত স্বাস্থ্য পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও আমেরিকা ও ইউরোপের প্রথম বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলি সময় থাকতে করোনার মোকাবিলা করে উঠতে পারল না কেন? তার জন্য তাদের ঢিলেমিকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। বলা হচ্ছে, করোনার প্রকোপে চিনে প্রতিনিয়ত যখন মৃত্যুমিছিল চলছিল, তখনও প্রাণঘাতী এই ভাইরাসকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি আমেরিকা। যে কারণে জানুয়ারির শেষ দিকে সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা যখন ছিল ৫, মার্চের মাঝামাঝি তা এসে ঠেকে ১৭০০-তে।তার পরেও লকডাউন ঘোষণা বা জন সমাগম রুখতে তেমন কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি মার্কিন প্রশাসন। চিনের ঘাড়ে গোটা পরিস্থিতির দায় চাপিয়েও ক্ষান্ত থাকেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তাঁর সরকারের আমলারা। গত ১ এপ্রিল মৃত্যুসংখ্যার নিরিখে চিনকে যখন ছাপিয়ে যায় আমেরিকা, তখনই প্রথমবার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা যায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। সামনের দিনগুলি কঠিন হতে চলেছে এবং তার জন্য সকলকে প্রস্তুত থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। কিন্তু তত দিনে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। এই মুহূর্তে আক্রান্তের নিরিখে গোটা বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে আমেরিকা। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২ লক্ষ ৭৮ হাজার ৪৫৮। প্রাণ হারিয়েছেন ৭ হাজার ১৫৯ জন।

ইউরোপের মধ্যে ইটালিতেই করোনার প্রকোপ সবচেয়ে ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে। কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখনও পর্যন্ত ১৪ হাজার ৬৮১ জন প্রাণ হারিয়েছেন সেখানে। আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে ঠেকেছে ১ লক্ষ ১৯ হাজার ৮২৭-এ। অথচ ভারতের মতোই জানুয়ারির শেষ থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা কয়েক জন। তার পর সংখ্যাটা বাড়লেও, মার্চের গোড়ার দিক পর্যন্ত তা ১০০-র গণ্ডিও পেরোয়নি। কিন্তু মার্চের মাঝামাঝি একধাক্কায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ হাজার ৭০০-য় গিয়ে ঠেকে।

তবে ইটালির এই পরিস্থিতির জন্য দেশের বয়স্ক জনসংখ্যার অনুপাতকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। ইটালির মোট জনসংখ্যা ৬০ কোটি ৪ লক্ষ ৬১ হাজার। তার মধ্যে ২২.৮ শতাংশের বয়সই ৬৫ বা তার চেয়ে বেশি। যে কারণে তাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কম। আবার দেশের উত্তরে যেখানে করোনার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি, সেখানে পরিবারের প্রবীণ এবং নবীন সদস্যরা একসঙ্গে থাকেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই একজনের থেকে অন্য জনের শরীরে থাবা বসিয়েছে মারণ ভাইরাস। চেষ্টা সত্ত্বেও যা রুখতে পারেনি সে দেশের সরকার। আবার প্রবীণ নাগরিকের সংখ্যা বেশি হওয়ায়, সে দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবাও মুখ থুবড়ে পড়েছে।

আরও পড়ুন: বাইরে বেরলে ঘরে তৈরি মাস্ক পরুন, পরামর্শ স্বাস্থ্য মন্ত্রকের​

সেই তুলনায় পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চিনে। একসময় যে উহানে দিনে হাজারেরও বেশি মানুষের আক্রান্ত হওয়ার খবর আসছিল, গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে মাত্র ১৯ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রাণ হারিয়েছেন ৪ জন। গতবছর ডিসেম্বর থেকে সেখানে নোভেল করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮২ হাজার ৫৪৩ জন। প্রাণ হারিয়েছেন ৩ হাজার ৩৩০ জন।

ইউরোপ-আমেরিকা প্রাথমিক পর্যায়ে গুরুত্ব দেয়নি বলেই পরিস্থিতি হাতের বাইরে গিয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। ভারত সে ক্ষেত্রে প্রায় সঠিক সময়ে জরুরি পদক্ষেপগুলি করেছে। ফলে আক্রান্ত বা মৃতের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত ইউরোপ-আমেরিকার মতো লাগামছাড়া হয়নি। কিন্তু আত্ম সন্তুষ্টির কোনও জায়গা এখনও নেই। সতর্কতা থেকে বেরিয়ে এলে এখনও যে কোনও সময় পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নিতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE