Advertisement
১১ মে ২০২৪

সবাইকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, কিন্তু নিজেই সম্পত্তির হিসেব দেননি প্রধানমন্ত্রী

৯ জুলাই পর্যন্ত পাওয়া পরিসংখ্যানের হিসেবে, ৩ জন ক্যাবিনেট মন্ত্রী, ২ জন স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী এবং ২ জন প্রতিমন্ত্রী নিজেদের সম্পত্তির হিসেব দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।—ছবি পিটিআই।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।—ছবি পিটিআই।

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৯ ০৪:১৭
Share: Save:

প্রথম বার ক্ষমতায় এসেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, ফি-বছর নিজেদের সম্পত্তির হিসেব জানাতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর দফতরে তা জমা দিলে সঙ্গে সঙ্গে সেটি প্রকাশ্যে আনা হবে। এ বার মোদী সরকারের দ্বিতীয় দফায় দেড় মাস কেটে গিয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ৫৮ জন মন্ত্রীর মধ্যে মাত্র সাত জনই এখনও পর্যন্ত নিজেদের সম্পত্তির খতিয়ান দিয়েছেন। নিজের তৈরি নিয়মে পিছিয়ে রয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রীই। তিনি-সহ সরকারের শীর্ষ মন্ত্রীরাই এখনও সম্পত্তির তথ্য জানাননি।

৯ জুলাই পর্যন্ত পাওয়া পরিসংখ্যানের হিসেবে, ৩ জন ক্যাবিনেট মন্ত্রী, ২ জন স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী এবং ২ জন প্রতিমন্ত্রী নিজেদের সম্পত্তির হিসেব দিয়েছেন। ক্যাবিনেট মন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রী থেবরচন্দ গহলৌত এবং পেট্রোলিয়াম ও ইস্পাত মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ, বিমান ও আবাসন মন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী নিজেদের সম্পত্তি ঘোষণা করেছেন। আর ২ জন প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্বে থাকা অনুরাগ ঠাকুর ও কৃষি মন্ত্রকের পুরুষোত্তম রূপালাই সম্পত্তির তথ্য দিয়েছেন।

এস জয়শঙ্কর প্রায় ১৪ কোটি টাকার সম্পত্তি ঘোষণা করেছেন। অনুরাগ ঠাকুর ৫ কোটি টাকার বেশি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ২৫ জন ক্যাবিনেট মন্ত্রী, ৯ জন স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও ২৪ জন প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে এখনও কেন সিংহভাগই নিজেদের সম্পত্তি ঘোষণা করলেন না? সরকারের এক মন্ত্রীর যুক্তি, “সবেমাত্র ভোট শেষ হয়েছে। ভোটের সময়ই প্রত্যেক প্রার্থীকে নিজেদের সম্পত্তি ঘোষণা করে হলফনামা দিতে হয়েছে নির্বাচন কমিশনকে। ফলে রাতারাতি সম্পত্তির কোনও পরিবর্তন হয়নি। এটি একটি নিছক প্রক্রিয়া। খুব শীঘ্রই জমা দেওয়া হবে।” তবে প্রথম বার সরকারের সদস্য হয়েছেন এমন এক প্রতিমন্ত্রীর কথায়, তিনি এখনও জানেনই না এ ধরনের নিয়ম রয়েছে!

প্রশ্ন হল, প্রথমবার মন্ত্রী, বিজেপির সদস্য ও রাজ্যসভার সাংসদ হয়ে বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্করই বা কী করে জানলেন এমন এক প্রক্রিয়ার কথা? ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হয়ে মোদী যখন এই ব্যবস্থা চালু করেছিলেন, সেই সময় তাঁর নির্দেশ ছিল, প্রতি বছর মন্ত্রীদের সম্পত্তির খতিয়ান দিতে হবে। যাতে সাধারণ মানুষ স্পষ্ট জানতে পারেন, তাঁদের সম্পত্তি কী হারে বৃদ্ধি হচ্ছে? কোনও দুর্নীতি হচ্ছে কি না? দুর্নীতির উপর লাগাম কষার জন্যই এই ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। মোদীর দফতরই সেই তথ্য প্রধানমন্ত্রীর সরকারি ওয়েবসাইটে আপলোড করে। সাধারণত প্রধানমন্ত্রী নিজেই এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু এ বার সাত মন্ত্রী নিয়ম মানলেও পিছিয়ে রয়েছেন খোদ মোদীই।

সদ্য হওয়া লোকসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী গুজরাতের গাঁধীনগরে একটি আবাসিক প্লট-সহ আড়াই কোটি টাকার সম্পত্তি ঘোষণা করেছিলেন। তাঁর সম্পত্তি নিয়ে কংগ্রেস সেই সময় প্রশ্ন তুলেছিল। অমিত শাহের সম্পত্তি তিন গুণ বেড়ে যাওয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। ২০১৬ সালে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস’ (এডিআর) মোদীর মন্ত্রীদের সম্পত্তি বিশ্লেষণ করে দেখে, সেই সময় ৭৮ জন মন্ত্রীর মধ্যে ৭২ জনই কোটিপতি। তাঁদের সম্পত্তি গড়পড়তায় প্রায় ১৩ কোটি টাকা করে। নিরঞ্জন জ্যোতি, অজয় টামটার মতো কয়েকজন ছিলেন, যাঁদের সম্পত্তি লক্ষ টাকায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Central Government Asset
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE