Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
Farm Bill 2020

কৃষি-বিক্ষোভে নিজের নিয়ন্ত্রণ চাইছে তৃণমূল

দলীয় সূত্রের মতে, কৃষক আন্দোলনের বিষয়টি নিয়ে মমতা খুবই স্পর্শকাতর।

পাঞ্জাবে কৃষক আন্দোলন।—ছবি পিটিআই।

পাঞ্জাবে কৃষক আন্দোলন।—ছবি পিটিআই।

অগ্নি রায় 
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৫:৫৭
Share: Save:

সংসদের অধিবেশন শেষ হওয়ার পরে কৃষি বিল সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে অন্যান্য বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতে চেয়েছিলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। উদ্দেশ্য, জোটবদ্ধ ভাবে এই আন্দোলনকে সংসদের বাইরে নিয়ে যাওয়া। সূত্রের খবর, তাতে রাজি হননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিরোধীদের প্রতি তাঁর পাল্টা পরামর্শ, যে যার রাজ্যে নিজেদের মতো করে তিন সপ্তাহ অন্তত আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিক। সূত্রের মতে, কংগ্রেসের হাতে নেতৃত্ব ছেড়ে দিতে চান না মমতা। এই কৃষক আন্দোলনকে হাতিয়ার করে মোদী-বিরোধী রাজনৈতিক ঐক্য তিনি গড়তে চাইছেন ঠিকই, কিন্তু রাশ নিজের হাতেই রাখতে চান। কংগ্রেস সেখানে থাকুক ডিএমকে অথবা এনসিপি বা এসপি-র মতো করে— এই কৌশলই নিয়েই এগোতে চাইছে তৃণমূল।

দলীয় সূত্রের মতে, কৃষক আন্দোলনের বিষয়টি নিয়ে মমতা খুবই স্পর্শকাতর। সংসদে জোর করে বিল পাশ করানোর ঘটনাটিকে একুশের ভোটের আগে তিনি বৃহত্তর আন্দোলনের রূপ দিতে চান। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের স্মৃতি উস্কে দেওয়া তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে কার্যকরী হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কৃষি বিলকে কেন্দ্র করে এখনও পর্যন্ত বিরোধীদের নিজেদের মধ্যে বড় কোনও তিক্ততা তৈরি হয়নি। তবে কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, মমতা আসলে সরাসরি জাতীয় স্তরে মোদী-বিরোধিতাকে তীব্র করতে চাইছেন না। মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ সংঘর্ষে গিয়ে মমতা ভোটের আগে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার চাপ নিজেদের উপর বাড়াতে চান না— এই অভিযোগ বেশ কিছু দিন ধরেই করে আসছে কংগ্রেস এবং বামেরা। কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের বৈঠকে বসার আমন্ত্রণ তৃণমূল নেত্রী ফিরিয়ে দেওয়ার পরে এই অভিযোগ আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে। তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবশ্য বক্তব্য, “এই ধরনের অভিযোগ অমূলক। সংসদ অধিবেশনের বিষয় নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক বৈঠক করছেন, এমন ঘটনা বিরল। একমাত্র মমতাই সেটা করেছেন। তিনি বাংলার মাটি থেকে কৃষক আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। কৃষকদের বিষয়ে ওঁর স্পর্শকাতরতার কথা অবিদিত নয়।”

তৃণমূল নেতৃত্বের মতে, গোড়ায় তৃণমূল নেতৃত্ব একই সঙ্গে কংগ্রেস এবং বিজেপিকে আক্রমণ করার পন্থা নিয়ে বাদল অধিবেশন শুরু করেছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই অবস্থানের বদল ঘটে কৃষি বিলটি নিয়ে সার্বিক প্রতিবাদ গড়ে ওঠায়। কৃষি বিলের প্রতিবাদে অকালি নেতা হরসিমরত কৌর বাদলের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের পরে আরও বেশি করে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, পঞ্জাবের অপেক্ষাকৃত ধনী কৃষকদের কাছে যদি এটি প্রতিবাদের বিষয় হয়, তা হলে নিঃসন্দেহে দরিদ্রতর কৃষকদের কাছে তা মরা-বাঁচার প্রশ্ন হয়ে উঠতে চলেছে। আর দেরি না-করে মমতা বিষয়টিকে নিজের হাতে নিয়ে নেন। কংগ্রেসকে মাথায় না-চড়তে দিয়ে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে তৃণমূলের সুবিধা হয়েছে দু’টি কারণে। প্রথমত, সনিয়া গাঁধী ও রাহুল এ বার সংসদে ছিলেন না। দ্বিতীয়ত, বেশ কিছু বিষয় নিয়ে কংগ্রেসের রাজ্যসভা ও লোকসভার সংসদীয় দলের মধ্যে চলছে মতান্তর ও ফাটল। মমতার নির্দেশে সেটিকে কাজে লাগিয়েছেন রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, কংগ্রেস-সহ প্রায় ১৫টি বিরোধী দলকে একত্রে নিয়ে সংসদে এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে নিঃসন্দেহে তৃণমূল-ই। পোস্টারের বয়ান ঠিক করা, বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় তা লেখা, ধর্নার কর্মসূচি স্থির করা, রাষ্ট্রপতি ভবনে যাওয়ার প্রশ্নে ছোট দলগুলির প্রতি উদারতা দেখিয়ে নিজেরা সরে আসা (পরে অবশ্য শুধুমাত্র বিরোধী দলনেতাই যান), সংসদ চত্বরে গোটা রাতের অভূতপূর্ব অবস্থান এবং দোলা সেন-সহ তৃণমূল সাংসদদের গান— সবেতেই ছিল মমতার ছায়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Farm Bill 2020 TMC Farmers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE