Advertisement
E-Paper

মন্দির-শুদ্ধিতে সত্যের সঙ্গী ফৈয়জ, ডেভিসরা

মহাপ্লাবন রেহাই দেয়নি কেরলের পালক্কড় জেলার গ্রাম কালপড্ডমের হিন্দু মন্দিরটিকে। বন্যার যত আবর্জনা জলস্রোতে ভেসে জমে উঠেছিল সেই মন্দিরে। সেই জঞ্জাল সরিয়ে সেটিকে দেবতার বাসযোগ্য করে তুলতে সত্যকুমারদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছেন সাফি ফৈয়জ, কেএ ডেভিস-রা। বুধবার ইদ-উজ-জোহায় সে-ভাবে মেতে ওঠার সুযোগ পাননি ফৈয়জরা। তাঁরাও ব্যস্ত ছিলেন মন্দির-শুদ্ধিতে।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৮ ০৪:০২
সম্প্রীতি: একজোট হয়ে চলছে কাজ। —নিজস্ব চিত্র।

সম্প্রীতি: একজোট হয়ে চলছে কাজ। —নিজস্ব চিত্র।

ঘরবাড়ি, খেতের শস্য, মানুষের কমবেশি সঞ্চয় গিলে ফেলেছে করাল প্লাবন। তবে সে যে মানুষের অন্তরের ঐশ্বর্য, সম্প্রীতির সম্পদ ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারেনি, তার জলজ্যান্ত প্রমাণ কেরলের ছোট্ট গ্রাম কালপড্ডম।

মহাপ্লাবন রেহাই দেয়নি কেরলের পালক্কড় জেলার গ্রাম কালপড্ডমের হিন্দু মন্দিরটিকে। বন্যার যত আবর্জনা জলস্রোতে ভেসে জমে উঠেছিল সেই মন্দিরে। সেই জঞ্জাল সরিয়ে সেটিকে দেবতার বাসযোগ্য করে তুলতে সত্যকুমারদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছেন সাফি ফৈয়জ, কেএ ডেভিস-রা। বুধবার ইদ-উজ-জোহায় সে-ভাবে মেতে ওঠার সুযোগ পাননি ফৈয়জরা। তাঁরাও ব্যস্ত ছিলেন মন্দির-শুদ্ধিতে। ফৈয়জ-ডেভিস-সত্যদের সম্মিলিত স্পর্শে আবার ভরা হচ্ছে মন্দিরের মঙ্গলঘট। আর এ ভাবেই ফের শিরোনামে কালপড্ডম।

কোচি থেকে সড়কপথে ঘণ্টা চারেক দূরের গ্রাম কালপড্ডমে মন্দির, মসজিদ, গির্জার সহাবস্থান। সেখানকার বাসিন্দাদের মনও যে পরস্পরের গলা জড়াজড়ি করে দিন যাপন করে, তার নজির অজস্র। একই দিনে মুসলিম ও হিন্দুদের বড় উৎসব পড়ে গিয়েছিল গত বছর। দুই ধর্মের লোকজন যাতে পরস্পরের উৎসবে যোগ দিতে পারেন, তার জন্য হিন্দুরা এক দিন পিছিয়ে দেন তাঁদের অনুষ্ঠান। উদারতায় পিছিয়ে নেই মুসলিমেরাও। হিন্দুদের পূজাপার্বণে প্রসাদ বিতরণ করেন তাঁরাও।

পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নেলিপুঝা নদী এ বার ভাসিয়ে দিয়েছে গোটা কালপড্ডমকেই। বাড়িঘর জলের গ্রাসে চলে যাওয়ায় বাসিন্দারা ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেন। বৃষ্টি কমতে ফিরেছেন নিজগৃহের ধ্বংসস্তূপে। ওই গ্রামেরই সত্যকুমার ফোনে বললেন, ‘‘ফিরে এসে শুধু নিজেদের বাড়ি নয়, আমাদের আয়াপ্পা মন্দিরের বিধ্বস্ত দেখে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। নেলিপুঝা নদীতে ভেসে আসা জঞ্জালের স্তূপ, কাদামাটিতে ভরে গিয়েছে মন্দির। কী ভাবে পরিষ্কার করে ফের পুজো হবে, ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছিলাম না।’’

আরও পড়ুন: মসজিদে নমাজ পড়তে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে ফারুক

সত্যকুমারের দুর্ভাবনা দূর করে পাশে দাঁড়ান মুসলিম, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষজনও। ওই গ্রামেরই যুবক সাফি ফৈয়জ ‘সমাস্থা কেরালা সুন্নি স্টুডেন্ট ফেডারেশন’ নামে একটি সংগঠনের সদস্য। সাফি ফোনে বললেন, ‘‘আপদে-বিপদে সব সম্প্রদায়ের মানুষের পাশে দাঁড়ানোই আমাদের সংগঠনের কাজ। আমি সংগঠনের কয়েক জনকে ডেকে আনলাম। মন্দির কমিটির অনুমতি নিয়েই হাত লাগালাম দেবস্থান সাফাইয়ে।’’ শুধু বাইরের চত্বর নয়, মন্দিরের ভিতরেও কাদামাটি, কয়েক টন প্লাস্টিক জমে গিয়েছিল। মন্দিরের ভিতর থেকে সাপও বেরিয়েছে। ‘‘ওই কাদামাটি ধুতে প্রচুর জলের দরকার ছিল। বন্যার পরে গ্রামে জলের সমস্যা তৈরি হয়। ভাগ্যিস, মন্দিরের পাশে একটা নলকূপ চালু ছিল! সেখান থেকে বালতি বালতি জল নিয়ে মন্দির সাফসুতরো করেছি।’’

সহায়সম্বল সবই ভেসে যাওয়ায় বকরিদের পরবে মেতে উঠতে পারেননি কালপড্ডমের মুসলিমেরা। মসজিদে বিশেষ প্রার্থনাতেও যেতে পারেননি অনেকে। সত্যকুমার বলেন, ‘‘বন্যায় ওদেরও বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকেই টাকাপয়সা, মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়েছেন। ওদের দুঃখের সঙ্গী আমরাও।’’ সব হারানোর হাহাকারের মধ্যেই রহমান-ফৈয়জরা মন্দিরকে তার স্বরূপে ফিরিয়ে দিতে হাত লাগিয়েছেন।

দু’দিনের সাফাইয়ের পরে মন্দির অনেকটাই আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে। কালপড্ডমের বাসিন্দা কেএ ডেভিস একটি পর্যটন সংস্থার গাড়ি চালান। বন্যায় ওই সংস্থা আপাতত বন্ধ। ‘‘গ্রামে আমাদের গির্জার তেমন ক্ষতি হয়নি। কয়েক দিন ধরে মন্দির সাফাইয়ে ব্যস্ত ছিলাম। আমি জানি, বন্যায় গির্জার কোনও ক্ষতি হলে ওরা সকলে মিলে সংস্কারে নেমে পড়ত। আমাদের গ্রামের এটাই তো প্রথা।’’

সেই প্রথা বহমান রেখেই কালপড্ডমকে ভারততীর্থ করে তুলেছেন ফৈয়জ-সত্য-ডেভিসরা।

Kerala Floods Kerala Temple Hindu Muslim কেরল
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy