Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

কোভিডেও পৌষমাস! ভারতে ৬ মাসে নতুন ১৫ বিলিওনিয়ার

ফোর্বসের বিলিওনিয়ারের তালিকায় মোট ১১৭ ভারতীয়। তাঁদের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৩০ হাজার কোটি ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ২২ লক্ষ কোটি।

করোনা-কালে ১০০ কোটি বিলিওনিয়ারের তালিকায় যোগ হলেন নতুন ১৫ জন।

করোনা-কালে ১০০ কোটি বিলিওনিয়ারের তালিকায় যোগ হলেন নতুন ১৫ জন।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৫:০৫
Share: Save:

জিডিপি গত ৪০ বছরের ইতিহাসে সর্বনিম্ন। কাজ হারিয়েছেন ৪১ লক্ষ মানুষ। কিন্তু তাতে কী? এই করোনা সঙ্কটের মধ্যেও গত ছ’মাসে দেশে নতুন ১৫ জন শত কোটিপতি (বিলিওনিয়ার) তৈরি হয়েছে। ‘ফোর্বস’-এর ‘রিয়েল টাইম বিলিওনিয়ার’তালিকায় আপাতত মোট ১১৭ জন ভারতীয়ের নাম রয়েছে।মার্চ মাসে যে সংখ্যাটা ছিল ১০২। অর্থাৎ, পাটিগণিতের হিসেবে ওই সংখ্যা বেড়েছে ১৫ জন। ওই ১১৭ জন ভারতীয়ের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৩০ হাজার কোটি ডলার। যাকে ধনী-গরিবের মধ্যে পার্থক্য আরও বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ হিসেবেই দেখছেন অর্থনীতিবিদরা।

বিশ্বের শত কোটিপতির তালিকায় ভারতের মুকেশ অম্বানী ৬ নম্বরে। ভারত তো বটেই, এশিয়ার মধ্যেও ধনীতম রিলায়্যান্স কর্ণধার। ১৮ সেপ্টেম্বরের হিসেব বলছে, তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৮,৮২০ কোটি। ভারতে দ্বিতীয় স্থানে এইচসিএল টেকনোলজিস-এর প্রতিষ্ঠাতা কর্ণধার শিব নাদার। ২,০৬০ কোটি ডলারের মালিক নাদার বিশ্বে ৬৪ নম্বরে। এর পর ভারতীয়দের তালিকায় ক্রমপর্যায়ে রয়েছেন আদানি গ্রুপের কর্ণধার গৌতম আদানি, কোটাক মহিন্দ্রা গ্রুপের কর্ণধার উদয় কোটাক, ডিমার্ট-এর কর্ণধার রাধাকৃষ্ণ দামানি ও তাঁর পরিবার, সিরাম ইনস্টিটিউটের কর্ণধার সাইরাস পুণাওয়ালার মতো ব্যবসায়ীরা।

ধরে নেওয়া যেতে পারে, ফোর্বস-এর তালিকায় নতুন যে ১০০ কোটি ডলারের মালিকরা ঢুকেছেন, তাঁরা তালিকার শেষের দিকেই থাকবেন। ভারতীয় শত কোটিপতিদের তালিকায় সবচেয়ে নীচে আপাতত ওয়েলস্প্যান গ্রুপের চেয়ারম্যান বালকৃষ্ণ গোয়েঙ্কা। ১৮ সেপ্টেম্বর তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ১০০ কোটি ডলার ছুঁয়েছে। তাঁর উপর ক্রমান্বয়ে রয়েছেন রাধেশ্যাম আগরওয়াল, রাধেশ্যাম গোয়েনকা, বিনি বনসল, মুরলীধর বিমল কুমার জ্ঞানচন্দানি। তাঁদের সম্পত্তির পরিমাণ ১০১ কোটি ডলারের আশেপাশে।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

কোভিড পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতি যে ভয়ঙ্কর মন্দার মুখে, তার প্রমাণ মিলেছিল কয়েক দিন আগেই। ২০২০-’২১ অর্থবর্ষে প্রথম ত্রৈমাসিকের জিডিপি সঙ্কুচিত হয়েছে ২৩.৯ শতাংশ। গত ৪০ বছরের ইতিহাসে জিডিপি পতনের এমন নজির নেই। লকডাউনের জেরে বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন। আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠন (আইএলও) এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের যৌথ সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, লকডাউনের জেরে অগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত ভারতে মোট ৪১ লক্ষ মানুষ কাজ হারিয়েছেন। পক্ষান্তরে, আর্থিক সঙ্কটের এমন ভয়াবহ ছবির মধ্যেও গুগল, ফেসবুক, সিলভার লেকের মতো অন্তত ১২টি সংস্থা বিপুল বিনিয়োগ করেছে মুকেশ অম্বানীর সংস্থা ‘রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’ (রিল)-এ। রিলের মতো না হলেও অন্য বহু সংস্থা ছোটখাটো বিনিয়োগ পেয়েছে। অনলাইন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলির মূলধন বেড়েছে। অনেক সংস্থা আবার অনলাইনের পথে হেঁটে সময়োপযোগী নতুন শাখা খুলেছে। শেয়ার বাজারও ঘুরে দাঁড়িয়ে করোনার আগের সময়ের প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে।

আরও পড়ুন: সংক্রমণ বৃদ্ধির মধ্যেই আশার আলো, এক দিনে সুস্থ হলেন ৮৭ হাজার

তা হলে করোনায় কি কিছুই ক্ষতি হয়নি?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লকডাউনের জেরে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি। সবচেয়ে বেশি মার খেয়েছে এমএসএমই সেক্টর অর্থাৎ ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প। অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকারের মতে, ‘‘বৃহৎ শিল্পের ক্ষেত্রে কার্যত তেমন ক্ষতি হয়নি। বরং বলা যায়, ধনীরা আরও ধনী হয়েছেন। গরিব আরও গরিব। অর্থনীতির বণ্টন বৈষম্য আরও বেড়েছে।’’ প্রায় একই অভিমত অপর অর্থনীতিবিদ দীপঙ্কর দাশগুপ্তেরও। ধনী-গরিবের বৈষম্য কেন বাড়ছে, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে দীপঙ্কর বলছেন, ‘‘মোটের উপর আর্থিক সঙ্কট তৈরি হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্র বিরাট লাভবান হয়েছে অতিমারির সময়ে। এই সময়টায় পড়াশোনা থেকে শুরু করে সমস্ত কিছু অনলাইন হয়ে গিয়েছে। ওয়ার্ক ফ্রম হোম এবং অনলাইন ক্লাসের জন্য ইলেকট্রনিক গ্যাজেটের বিক্রি ব্যাপক হারে বেড়েছে। এই সবের জন্য নতুন নতুন প্রযুক্তি যাঁরা তৈরি করছেন, তাঁদের ব্যবসা বাড়ছে। একই ভাবে মাস্ক, স্যানিটাইজার-সহ চিকিৎসাসামগ্রী তৈরির সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলিও তাদের ব্যবসা বাড়ানোর বিপুল সুযোগ পেয়েছে। সব মিলিয়ে অনেকগুলি রাস্তা খুলে গিয়েছে। নতুন নতুন সম্পদশালী তৈরি হচ্ছেন। কিন্তু গরিব মানুষ আরও গরিব হচ্ছেন।’’ অভিরূপ বলেন, ‘‘ব্যাঙ্কে জমানো টাকার উপর সুদও ক্রমেই কমছে। ফিক্সড ডিপোজিটে সুদের হার এমন নেমেছে যে, মানুষ বিকল্প বিনিয়োগের সন্ধান করছেন। বাধ্য হয়ে শেয়ার বাজারে টাকা খাটাচ্ছেন। অর্থাৎ, একপ্রকার জোর করেই তাঁদের শেয়ার বাজারে টাকা খাটানোর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। সাধারণ মানুষ শেয়ার বাজারে গেলে বড় বা প্রতিষ্ঠিত সংস্থাগুলির শেয়ার কিনবেন, এটাই স্বাভাবিক প্রবণতা। তাই এই সব সংস্থাগুলির শেয়ারের দাম বাড়ছে। ফলে সংস্থার মালিকরা আরও বড়লোক হচ্ছেন।’’

আরও পড়ুন: দু’হাজারের নোট ছাপাতে চাননি মোদী’

লকডাউনের জেরে অর্থনৈতিক সঙ্কটের মোকাবিলায় এই সব ‘সুপার রিচ’-দের উপর কর বাড়ানো বা অতিরিক্ত কর বসানোর দাবি উঠেছে। অভিরূপও বলছেন, ‘‘আমরা অর্থনীতিবিদরাও বিভিন্ন সময়ে সরকারকে একই পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু সরকার তা মানতে রাজি নয়।’’ তবে উচ্চ বিত্তশালীদের উপর কর চাপানোর বিষয়ে মতামত এড়িয়ে গিয়েছেন দীপঙ্কর। তাঁর কথায়, ‘‘সরকার কী করবে, সেটা আমি বলতে পারি না।’’

অর্থনীতির কচকচি বা ব্যাখ্যার বাইরে গিয়েও যা বলা যায়— করোনা-কালেও ভারতে জন্ম হয়েছে ১৫ জন নতুন শত কোটিপতির।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE