Advertisement
E-Paper

রাম-চাপে মোদী-যোগী! অযোধ্যা কাঁপাচ্ছে শিবসেনা-ভিএইচপি, উত্তেজনা চরমে

‘রাম এখনও বনবাসে। আর সরকার (কেন্দ্র) রয়েছে কুম্ভকর্ণের মতো সুদীর্ঘ নিদ্রায়।’ এরই ‘প্রতিবাদে’ শনিবার ‘রামজন্মভূমি’তে পা রাখছেন শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে ও আদিত্য ঠাকরে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৮ ১৩:৪৩
অযোধ্য়ামুখী ‘রামভক্ত’ শিবসেনা কর্মীরা। ছবি- পিটিআই।

অযোধ্য়ামুখী ‘রামভক্ত’ শিবসেনা কর্মীরা। ছবি- পিটিআই।

রাম নিয়ে বিজেপিকে টক্কর দিতে চাইছে শিবসেনা। তার জন্য বিশ্ব হিন্দু পরিষদের হাতে হাত মেলাচ্ছে উদ্ধব ঠাকরের দল। শিবসেনা আর বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)-এর পরপর দু’দিনের কর্মসূচি নিয়ে উত্তেজনায় থরথর করে কাঁপছে গোটা অযোধ্যা। তার আশপাশের এলাকাও। গোটা এলাকায় আগেভাগেই জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা। ফলে, আপাতত, উত্তরপ্রদেশের মুখ্য়মন্ত্রী আদিত্যনাথ যোগীর কপালে ভাঁজ ফেলেছেন রাম-ই!

‘রাম এখনও বনবাসে। আর সরকার (কেন্দ্র) রয়েছে কুম্ভকর্ণের মতো সুদীর্ঘ নিদ্রায়।’ এরই ‘প্রতিবাদে’ শনিবার ‘রামজন্মভূমি’তে পা রেখেছেন শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে ও আদিত্য ঠাকরে।

আর ‘পহলে মন্দির, ফির সরকার’, এই দাবিতে আগামী কাল, রবিবার অযোধ্যায় হাজার হাজার সাধুসন্তদের নিয়ে ‘ধর্ম সংসদ’-এর আয়োজন করেছে ভিএইচপি। হিন্দু সংগঠনটির দাবি, ’৯২-এর পর এত বড় মাপের ধর্ম সংসদ আর হয়নি অযোধ্যায়।

ভিএইচপি জানিয়েছে, রবিবার অযোধ্যায় তাদের ওই ‘ধর্মসভা’ হল ‘যুদ্ধের আগে শেষ দামামা।’ এর পরে সরাসরি মন্দির নির্মাণই লক্ষ্য। একই দিনে নাগপুর এবং বেঙ্গালুরুতেও সভা করবে তারা।

আরও পড়ুন- রামমন্দির কার, টক্কর ভিএইচপি ও সেনার​

আরও পড়ুন- কোন শর্তে রাফাল চুক্তি? তদন্ত চেয়ে মামলা দায়ের ফরাসি সংস্থার

গত আড়াই দশকে ‘রামজন্মভূমি’তে ভিএইচপির এত বড় মাপের আয়োজন, জমায়েতের শঙ্খধ্বনি অবশ্য শনিবারই বাজিয়ে দিচ্ছেন অধুনা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘ঘোর শত্রু’ বলে পরিচিত শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে। এ দিন রামজন্মভূমিতে প্রার্থনা করবেন উদ্ধব। তার পর সরযূ নদীর তীরে গিয়ে করবেন আরতি। কথা বলবেন স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে, এলাকার সাধুসন্তদের সঙ্গে। রামমন্দির নির্মাণ নিয়ে মোদী সরকারের ‘কুম্ভকর্ণের ঘুম’-এ তাঁদের ক্ষোভের পারদ মাপবেন শিবসেনা প্রধান। রাম-ভক্তির প্রমাণ দিতে পুণের শিবনেরি দুর্গ থেকে একটি পাত্রে মাটি নিয়ে অযোধ্যায় আসছেন উদ্ধব। রামের মূর্তি নির্মাণের জন্য সেই মাটি তিনি তুলে দেবেন সাধুসন্ত, মহন্তদের হাতে। ভক্তির আরও প্রমাণ দেবেন উদ্ধব, রবিবার। যাবেন অযোধ্যায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ডাকা ‘ধর্ম সংসদ’-এ। লক্ষ্য, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপিকে বুঝিয়ে দেওয়া, তাঁদের সঙ্গ ত্যাগের কথা ঘোষণা করলেও, রামের জন্য শিবসেনার হাত রয়েছে ভিএইচপির হাতেই!

পরপর দু’দিনে শিবসেনা ও ভিএইচপির দু’টি কর্মসূচি নিয়ে এখন চরম উত্তেজনা অযোধ্যায়। ২৬ বছর আগে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনাবলীর সেই দুর্বিষহ স্মৃতি তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। ‘রামভক্ত’দের ভয়ে তাই এখন কার্যত, ‘রামনাম’ জপছে অযোধ্যা!

লক্ষ্য, অযোধ্যা। ‘রামভক্ত’ শিবসেনা কর্মী, ট্রেনে। ছবি- পিটিআই।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অযোধ্যায় মোতায়েন করা হয়েছে ৪২ কোম্পানি প্রভিন্সিয়াল আর্মড কনস্ট্যাবুলারি (পিএসি), ৫ কোম্পানি র‌্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (র‌্যাফ), ৭০০ কনস্টেবল ও ১৬০ জন পুলিশ ইনস্পেক্টর। সঙ্গে মোতায়েন করা হয়েছে অ্যান্টি-টেররিজম স্কোয়্যাড (এটিএস)-এর কম্যান্ডো বাহিনী। নজরদারির জন্য রাখা হয়েছে প্রচুর ড্রোন ক্যামেরাও।

উদ্ধবের অযোধ্যা-যাত্রার প্রাক-মুহূর্তে শিবসেনার দলীয় মুখপত্র ‘সামনা’-র সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার এখনও গভীর নিদ্রায়। আমরা কুম্ভকর্ণকে জাগিয়ে তুলতে চাই। বলতে চাই, ঢের হয়েছে, এ বার জাগো। শুধু ভোট এলেই তোমাদের রামের কথা মনে পড়ে। কিন্তু আমরা রাম আর মন্দির নিয়ে রাজনীতি করতে চাই না। শুধুই মন্দির চাই।’’

ভিএইচপি-র সভায় রয়েছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)-এর সমর্থন। তাতে অন্তত ৫০-৬০ হাজার লোকের জমায়েত হবে বলে মনে করছে পুলিশ। এ দিকে শনিবার মধ্যরাতে ও রবিবার ভোরে দু’টি ট্রেনে প্রায় ৪ হাজার শিবসৈনিকের অযোধ্যা পৌঁছনোর কথা। দু’তরফেরই দাবি, মন্দির গড়ার আসল দাবিদার তারাই। এবং আজ দিনভর পাল্লা দিয়ে বিতর্কিত ও উস্কানিমূলক মন্তব্য এল দুই শিবির থেকেই।

ও দিকে, মন্দির তৈরিতে এত দিন সুর চড়িয়ে আসা সাক্ষী মহারাজ দাবি করেছেন, দিল্লির জামা মসজিদের সিঁড়ির নীচে দেবমূর্তি রয়েছে। উত্তরপ্রদেশের উন্নাওয়ের এই বিজেপি সাংসদ বলেছেন, ‘‘অযোধ্যা, মথুরা, কাশী ছেড়ে আগে দিল্লির জামা মসজিদ ভাঙুন। সিঁড়ির নীচে মূর্তি না-মিললে আমাকে ফাঁসি দিতে পারেন।’’

আর রাজ্যের বিতর্কিত বিজেপি বিধায়ক সুরেন্দ্র সিংহ হুমকি দিয়েছেন, রামমন্দির তৈরি করতে প্রয়োজনে ১৯৯২ সালের মতো আইন হাতে তুলে নিতে পারেন তাঁরা।

নরেন্দ্র মোদী সরকারকে কটাক্ষ করে শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউতের বক্তব্য, ‘‘১৭ মিনিটে বাবরি মসজিদ ভেঙেছিলাম। আইন তৈরি করতে কত সময় লাগে? রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে উত্তরপ্রদেশ পর্যন্ত বিজেপির সরকার রয়েছে। রাজ্যসভাতেও অনেকে পাশে দাঁড়াবেন। যাঁরা বিরোধিতা করবেন, তাঁদের এ দেশে থাকা মুশকিল হয়ে পড়বে।’’

মুখপত্রে শিবসেনা লিখেছে, ‘‘আমরা রামের নামে ভোটভিক্ষা করি না কিংবা ফাঁকা বুলি দিই না। যারা মসনদে বসে আছে, তারা রাম জন্মভূমিতে বাবরের রাজত্ব শেষ করা শিবসৈনিকদের নিয়ে গর্ববোধ করুক। বিজেপি অর্ডিন্যান্স আনুক এবং রামমন্দির নির্মাণের তারিখ বলুক।’’

পুলিশকর্তারা যদিও মনে করছেন, রবিবার কোনও পক্ষেরই অযোধ্যার বিতর্কিত জমির আশপাশে ধর্না বা অন্য কোনও কর্মসূচির পরিকল্পনা নেই। আগামিকাল সমস্ত স্কুল-কলেজ বন্ধ। উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব দাবি তুলেছেন, সেনা নামান মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ যোগী।

UP Ayodhya Shiv Sena Ram Mandir শিবসেনা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy