Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ইলিশে বন্ধুত্বের কূটনীতি দুই বাংলার

বাংলাদেশের ডেপুটি হাই-কমিশনার তৌফিক হাসান তখন বোঝাচ্ছেন, ইলিশ হয়তো অনেক জায়গাতেই মেলে। কিন্তু লোকে বলে, বাংলাদেশের চাঁদপুরে তার ‘বাড়ি’।

ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথিশালার দুই শেফের সঙ্গে বাংলাদেশের ডেপুটি হাই-কমিশনার তৌফিক হাসান (ডান দিকে)। শনিবার কলকাতায়। নিজস্ব চিত্র

ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথিশালার দুই শেফের সঙ্গে বাংলাদেশের ডেপুটি হাই-কমিশনার তৌফিক হাসান (ডান দিকে)। শনিবার কলকাতায়। নিজস্ব চিত্র

অনমিত্র চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৯ ০১:৪৭
Share: Save:

মাথা নাড়েন জাপানের কনসাল জেনারেল মাসাউকি তাগা। হাসিমুখে বলেন, ‘‘একটা মাছকে নিয়ে বাঙালির এই আবেগ, আর কোথাও দেখিনি!’’ সাগর থেকে ইলিশের ঝাঁক কী ভাবে কোন দিক দিয়ে এসে কোন কোন নদীতে ডিম পাড়তে ঢোকে, হাতের স্মার্ট ফোন ঘেঁটে বুঝতে চেষ্টা করছেন ব্রিটিশ ডেপুটি হাই-কমিশনার ব্রুস বাকনেল। দেখে ফেলেছেন, মায়ানমারের ইরাবতী ও ওড়িশা-অন্ধ্রের নদীতেও দেদার ধরা পড়ে ইলিশ। কিন্তু সেখানে মানুষের এই আবেগ কেন নেই— ছুড়ে দেন প্রশ্ন। তার পরে সাহেবের মন্তব্য, ‘‘রিয়েলি ইট্স অ্যামেজ়িং!’’

বাংলাদেশের ডেপুটি হাই-কমিশনার তৌফিক হাসান তখন বোঝাচ্ছেন, ইলিশ হয়তো অনেক জায়গাতেই মেলে। কিন্তু লোকে বলে, বাংলাদেশের চাঁদপুরে তার ‘বাড়ি’। চাঁদপুর থেকে ভোলা পর্যন্ত এলাকায় যে মান ও মাপের ইলিশ পাওয়া যায়, তেমনটি আর কোথাও মেলে না। রূপনারায়ণের ইলিশ রূপোলি সাদা আর চাঁদপুরের
ইলিশের পিঠে লম্বালম্বি লাল দাগ। দুই ইলিশ হাতে নিয়ে পার্থক্য দেখিয়ে জানান, বাংলাদেশের মৎস্যজীবীরা জলের ওপর থেকে এই লাল দাগ দেখেই ইলিশের ঝাঁক বোঝেন। দু’দেশেই ইলিশ নিয়ে পাগলামি থাকলেও রান্নায় অনেক ফারাক। আর সেই ফারাক দেখাতেই ঢাকা থেকে তাঁরা নিয়ে এসেছেন রাষ্ট্রীয় অতিথিশালার দুই খাস পাচক
জামাল হোসেন আর আব্দুল হালিমকে। ইলিশকে নিষ্কন্টক ও ধোঁয়াতুর করে ‘স্মোক্ড হিলসা’ বানিয়ে জামাল তাক লাগিয়ে দেন, তো হালিমের হাতে প্রাণ পায় ইলিশের বিরিয়ানি। এ ছাড়া ভর্তা, স্যালাড, দোপেঁয়াজা, ল্যাজের টক-এর মতো এমন কিছু পদ এ দিন তাঁরা রাঁধলেন, এ বাংলায় যা খুবই অপরিচিত। টক্করে কলকাতার শেফ নিতাইচন্দ্র বারিক পেশ করেন কাঁটাছাড়া মাখন-ইলিশ, ইলিশের মাথা দিয়ে কচুশাকের ঘণ্ট, ভাপা ইলিশ। তবে ভাজা ইলিশ আর তার তেলে যে দেশ নির্বিশেষে সব বাঙালিই মাত, হেসে সায় দেন দু’বাংলার পাচকেরাই।

বাংলাদেশের আর এক কূটনীতিক শামসুল আরিফ বলছিলেন, ইলিশকে আঁকড়ে রাখার সরকারি প্রয়াসের কথা। প্রজননের সময়ে ইলিশ ধরা আর ২৩ সেন্টিমিটারের চেয়ে ছোট ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেও ফল মিলছিল না। সমীক্ষায় দেখা যায়, পেট চালাতেই ঝুঁকি নিয়েও আইন ভাঙছেন গরিব মৎস্যজীবীরা। এর পরে তাঁদের ছাগল ও মুরগি পালনের মতো বিকল্প জীবিকা আর বিশেষ রেশনের বন্দোবস্ত করে শেখ হাসিনার সরকার। কী তার ফলাফল? তৌফিক হাসান তথ্য দেন, ২০০৭-এ ধরা পড়েছিল আড়াই লক্ষ টন ইলিশ। ১১ বছর পরে সেটা দ্বিগুণ হওয়ায় সবাই এখন খুশি।

ইলিশের হাইফেনে ভারত-বাংলাদেশের এই ঐক্য প্রদর্শনীর অন্যতম আয়োজক হিসেবে বাংলাদেশের উপ-দূতাবাসের পাশে ছিল ভারত সরকারের বিদেশ ও পর্যটন মন্ত্রকও। কলকাতার কাছে একটি রিসর্টে এ দিনের অনুষ্ঠানে চাঁদপুরে বেড়াতে যাওয়ার হাতছানিও দিলেন তৌফিক হাসান।

কিন্তু পদ্মার ইলিশ কবে পাবে এ বাংলা? বাংলাদেশের কূটনীতিকদের কাছে তার উত্তর নেই। ঢাকার শীর্ষ মহলের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এটা। এই অনুষ্ঠানের জন্য ঢাকা থেকে ১২-১৪টি বড় মাছ সঙ্গে করে নিয়ে আসছিলেন ডেপুটি হাই-কমিশনারের স্ত্রী। সূত্রের খবর, বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয় সেই মাছও। ছাড়িয়ে আনতে কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে উপদূতাবাসকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hilsa Bangladesh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE