Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
India China Clash

ভারতের ১০০ বনাম চিনের ৩৫০ সেনা! গলওয়ানে সে দিন ৩ ঘণ্টা চলেছিল সংঘর্ষ

পেট্রোলিং পয়েন্ট ১৪য় চিনা বাহিনী ভারতীয় ভূখণ্ডে অস্থায়ী কাঠামো তৈরি করেছিল। ভারতীয় সেনা কাঠামো ভাঙতে শুরু করায় শুরু হয় হাতাহাতি।

গলওয়ান উপত্যকা এলাকার উপগ্রহ চিত্র। ছবি: এএফপি

গলওয়ান উপত্যকা এলাকার উপগ্রহ চিত্র। ছবি: এএফপি

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০২০ ১৯:০৩
Share: Save:

গলওয়ান উপত্যকায় ১৫ জুন রাতে ঠিক কী হয়েছিল? আগ্নেয়াস্ত্র না থাকা সত্ত্বেও ভারত-চিন সেনার মধ্যে এমন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সৃষ্টি হল? নানা জল্পনা, নানা মত থাকলেও সেনা বা সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি। এই পরিস্থিতিতে সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর একটি প্রতিবেদনে দাবি করল, গলওয়ান উপত্যকার ওয়াই পয়েন্টে ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে অস্থায়ী কাঠামো তৈরি করেছিল। বিবাদের সূত্রপাত সেটা নিয়েই। প্রতিবেদনে দাবি, পরিকল্পিত ভাবেই হামলা চালিয়েছিল চিনা সেনা। তারা অপেক্ষাকৃত উঁচু অবস্থানে ছিল। ভারতের পক্ষে ছিল ১০০ অফিসার-জওয়ান। চিন জড়ো করেছিল প্রায় ৩৫০ সেনা। সংঘর্ষ স্থায়ী হয়েছিল প্রায় তিন ঘণ্টা।

১৫ জুন সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত গলওয়ান উপত্যকার পেট্রোলিং পয়েন্ট ১৪ (পিপি-১৪)-এ ভারত-চিন সংঘর্ষে ভারতের দিকে বিহার রেজিমেন্টের এক কর্নেল ও ১৯ জন জওয়ানের মৃত্যু হয়। চিনের দিকেও হতাহত অনেকে। চিন হতাহতের কথা স্বীকার করলেও এখনও সঠিক সংখ্যা জানায়নি। ওই সংঘর্ষের পর থেকেই দু’দেশের সম্পর্কে তীব্র উত্তেজনা। সর্বদলীয় বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রবিবারই প্রতিরক্ষামন্ত্রী সেনার তিন বাহিনীকে চিনা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন। কিন্তু ওই দিন প্রকৃত ঘটনা ঠিক কী হয়েছিল বা কী ভাবে হয়েছিল, তার এখনও স্পষ্ট ছবি পাওয়া যায়নি।

সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর একটি প্রতিবেদনে সেটাই উঠে এল। সেনা সূত্র উদ্ধৃত করে ওই প্রতিবেদনের বর্ণনা অনুযায়ী, ওই পিপি-১৪ চিন সেনা দখল নেওয়া থেকেই ঘটনার সূত্রপাত। সেখান থেকে চিনের সেনা সরাতে ১৫ জুন রাতে পূর্ব লাদাখের শিয়ক ও গলওয়ান নদীর সংযোগস্থলে ওয়াই পয়েন্টে দু’দেশের সামরিক পর্যায়ের বৈঠক ডাকা হয়েছিল। তাতে যোগ দিয়েছিলেন ৩ নম্বর ডিভিশনের কমান্ডার ও অফিসাররা। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ভারতীয় ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে ওই পিপি-১৪ থেকে সরে যাবে চিনা সেনা। ১৬ বিহার রেজিমেন্টের উপর দায়িত্বভার বর্তায় ওই পিপি-১৪-এ গিয়ে চিনের সেনাকে সরে যেতে বলার জন্য। সেই অনুযায়ী বিহার রেজিমেন্টের একটি ছোট টহলদারি দলকে ওই পয়েন্টে পাঠানো হয়।

আরও পড়ুন: সীমান্তে চিনের উপর নজরদারি বাড়ল, দরকারে বলপ্রয়োগের পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হল তিন বাহিনীকে

কী করল ওই পেট্রোলিং পার্টি? প্রতিবেদনের বয়ান অনুযায়ী, বিহার রেজিমেন্টের জওয়ানরা ওই ১৪ নম্বর পয়েন্টে গিয়ে দেখেন ১০-১২ জন চিনা সেনা সেখানে অস্থায়ী কাঠামো তৈরি করে পাহারা দিচ্ছে। বিহার রেজিমেন্টের জওয়ানরা তাঁদের সরে যেতে বলেন। কিন্তু তাঁরা এলাকা ছাড়তে রাজি হননি। তবে তখন আর বাদানুবাদ না করে ওই জওয়ানরা ইউনিটে ফিরে যান সেই খবর দিতে। কিন্তু চিনা বাহিনী আন্দাজ করেছিল যে, ইউনিটে গিয়ে খবর দিলে ফের ভারতীয় সেনা বড় বাহিনী নিয়ে ফিরতে পারে। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি শুরু করে দেয় তারা। পিপি-১৪-এর কিছুটা উপরের দিকে জড়ে হয় প্রায় ৩৫০ সেনা জওয়ান। মজুত করা হয় অস্ত্রশস্ত্রও।

আরও পড়ুন: ‘সারেন্ডার মোদী’ বলে ফের বিজেপির তোপের মুখে রাহুল

এএনআই-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিন সেনার এই নাছোড় মনোভাবের খবর পৌঁছনোর পর বিহার রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার সন্তোষ বাবুর নেতৃত্বে ৫০ জনের একটি দল ওই পেট্রোলিং পয়েন্টে পৌঁছয়। চিনা বাহিনীকে এলাকা ছাড়তে বলায় শুরু হয় বাদানুবাদ। বিহার রেজিমেন্টের জওয়ানরা তখন ওই অস্থায়ী কাঠামো ভাঙতে শুরু করে দেন। তাতেই শুরু হয় হাতাহাতি ও মারপিট। কিন্তু চিন আগে থেকেই অস্ত্র মজুত করেছিল। তুলনামুলক উঁচু অবস্থানে থেকে শুরু করে পাথরবৃষ্টি। খবর পেয়ে ভারতের পক্ষের পিপি-১৫ এবং পিপি পিপি-­১৭এ থেকে আরও জনা পঞ্চাশেক সেনা জওয়ান পরে যোগ দেন।

দু’পক্ষের মধ্যে প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে গভীর রাত পর্যন্ত সংঘর্ষ হয়েছিল বলে এএনআই-এর ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। পাশাপাশি উল্লেখ করা হয়েছে, চিনের বহু সেনা আহত অবস্থায় সারা রাত পড়ে ছিল ওই এলাকায়। অনেকে মারা গিয়েছিলেন। পরের দিন সকালে পরিস্থিতি শান্ত হলে তাঁদের চিনা বাহিনীর হাতে তুলে দেয় ভারতীয় সেনা।

সেনা সূত্র উদ্ধৃত করে এএনআই-এর দাবি, শেষ পর্যন্ত অবশ্য ওই ১৪ নম্বর পেট্রোলিং পয়েন্ট দখলমুক্ত করতে পেরেছে ভারত। তবে সেনা সরিয়ে ১৪, ১৫ ও ১৭-এ পেট্রোলিং পোস্ট এবং সংলগ্ন এলাকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় স্থিতাবস্থা ফেরাতে ফের দু’দেশের সেনা পর্যায়ের বৈঠকের পরিকল্পনা চলছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই দু’দেশের লেফেটেন্যান্ট জেনারেল পর্যায়ের বৈঠক হবে বলে সেনা সূত্রে খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE