Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

মোদীর জন্য নয়া বিপদবার্তা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যনের

কিন্তু একই সঙ্গে নতুন সাবধানবাণী শোনালেন, ‘‘বৃদ্ধিতে আরও কিছু দিন মন্দার জন্য তৈরি থাকুন!’’

অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন। —ফাইল চিত্র।

অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:০৭
Share: Save:

নোট বাতিল নিয়ে ‘নির্মম ধাক্কা’ দিয়েছিলেন। বই প্রকাশের মঞ্চে আপাত ‘সদয়’ হয়েও নতুন বিপদের বার্তা দিলেন অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন। এ দিন মোদী সরকারের প্রাক্তন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা বললেন, ‘‘নোট বাতিলের ফলে আর্থিক বৃদ্ধির হার খুব বেশি কমেনি, কমলেও তার সব দায় নোট বাতিলের উপরে চাপানো যায় না।’’ কিন্তু একই সঙ্গে নতুন সাবধানবাণী শোনালেন, ‘‘বৃদ্ধিতে আরও কিছু দিন মন্দার জন্য তৈরি থাকুন!’’

শুধু এ-ই নয়। কৃষিক্ষেত্রের দুরবস্থা, জিডিপি মাপার পদ্ধতির বিশ্বাসযোগ্যতা, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বোর্ডের রাজনীতিকরণ, জিএসটি রূপায়ণ এবং প্রাথমিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে যথেষ্ট নজর না দেওয়া নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলে সরকারের অস্বস্তি সাকুল্যে বাড়িয়েই দিলেন অরবিন্দ।

আগেই জানা গিয়েছিল, নোট বাতিলকে তাঁর বইতে সুব্রহ্মণ্যন ‘নির্মম ধাক্কা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। লোকসভা ভোটের আগে তা বিরোধীদের নতুন অস্ত্র হয়ে উঠেছে। অস্বস্তিতে পড়েছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। কারণ বইয়ের প্রচ্ছদে জেটলির সঙ্গেই সুব্রহ্মণ্যনের ছবি। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রশ্নের মুখেও জেটলিকে পড়তে হয়েছিল বলে সূত্রের খবর। এ দিন দিল্লিতে জেটলি তথা সরকারকে কিছুটা মুখরক্ষার সুযোগ দিতেই যেন সুব্রহ্মণ্যন বলেন, ‘‘এক ধাক্কায় ৮৬ শতাংশ নগদ টাকা তুলে নেওয়াকে কঠোর, নির্মম পদক্ষেপই বলা যায়। কিন্তু দু’টো ধাঁধা রয়েছে। এক, তা হলে উত্তরপ্রদেশে মানুষ নোট বাতিলের পক্ষে ভোট দিলেন কেন? দুই, নোট বাতিলের পরে বৃদ্ধির হার কমেছে ঠিকই। কিন্তু তার জন্য জিএসটি, চড়া অশোধিত তেলের দাম, চড়া সুদের হারও দায়ী। কোনটার কতখানি প্রভাব, তা গবেষণার বিষয়।’’

আরও পড়ুন: মমতা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্য, দাবি যশবন্তের

এ কথা শুনে মোদী সরকারের মুখে হাসি ফুটতে পারে ঠিকই। কিন্তু সুব্রহ্মণ্যনের পরের পাঁচ দফা সমালোচনা সে হাসি কেড়ে নিতে বাধ্য। দেশ জুড়ে চাষিদের বিক্ষোভে ইতিমধ্যেই বিব্রত কেন্দ্রের অস্বস্তি বাড়িয়ে অরবিন্দর প্রশ্ন, ‘‘ফসলের দাম এত কেন পড়ে গিয়েছিল? নগদের অভাব? নগদের অভাব চাষে অনেক বেশি ধাক্কা দেয়!’’ অর্থাৎ সুব্রহ্মণ্যন বুঝিয়ে দিলেন, বৃদ্ধির হার যদি তেমন না-ও কমে থাকে, নোট বাতিল কৃষিক্ষেত্রকে বড় ধাক্কাই দিয়েছিল। তাঁর মতে, জিএসটি রূপায়ণের আগেই নোটবন্দি চাষির বোঝা দ্বিগুণ করেছিল!

এখন যা পরিস্থিতি, তাতে গোটা দেশের চাষিরা দিল্লিতে উজিয়ে এসে সংসদ মার্গে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। অন্য দিকে প্রধানমন্ত্রী ২০২২-এ চাষিদের আয় দ্বিগুণ করে দেওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন! সুব্রহ্মণ্যনের অভিযোগ, কিছু ফসলের চাষি ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে বেশি সমাদর পান। বাকিদের সেই রাজনৈতিক প্রভাব নেই। আয় দ্বিগুণ করতে গিয়ে হুট করে উৎপাদন বাড়াতে গেলে চলবে না। শুধু ফসলের বেশি দাম ঘোষণা করলেও হবে না। চাষিরা তা না পেলে নগদ ভর্তুকির কথা ভাবতে হবে।

আরও পড়ুন: উপলক্ষ সনিয়া, আজ দিল্লিতে বিরোধী বৈঠকে মমতাও, সবার চোখ আগামিকালের ফলে

জিডিপি-র হিসেব বদলে দেওয়ার পর, মনমোহন-জমানার বৃদ্ধির হার কমিয়ে দিয়ে নীতি আয়োগ ও পরিসংখ্যান মন্ত্রক মিলে হিসেব প্রকাশ করেছে। এ দিন তার ‘তদন্ত’ দাবি করেছেন সুব্রহ্মণ্যন। তাঁর দাবি, ‘‘ভারতে কী ভাবে জিডিপি-র হিসেব কষা হয়, তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এখনই বিশেষজ্ঞদের হাতে ব্যাপারটা ছেড়ে দেওয়া হোক।’’ নীতি আয়োগের কর্তাদের নিজেদের বিশেষজ্ঞ বলে দাবি করাটা তাঁর মতে ‘বাগাড়ম্বর’। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভাঁড়ারের অর্থ সরকারি কোষাগারে পাঠানো নিয়ে উর্জিত পটেলের সঙ্গে অরুণ জেটলির বিবাদ তুঙ্গে উঠেছিল। সুব্রহ্মণ্যন নিজেও সেই ভাঁড়ারের অর্থ নেওয়ার পক্ষে। তবে তা শুধু সরকারি ব্যাঙ্কের পুঁজি জোগানের জন্য। ভোটের খয়রাতির জন্য ঘাটতি সামাল দিতে নয়!

একটা প্রশ্নের উত্তর যদিও এড়িয়েই গিয়েছেন। নোট বাতিলের সিদ্ধান্তর আগে কি তাঁর মত নেওয়া হয়েছিল? সুব্রহ্মণ্যন বইতে লিখেছেন, ‘‘সরকারি নিয়ম বলে, মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করাটা কারও কাছেই বাধ্যতামূলক নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

India Economic Growth Arvind Subramanian
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE