Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

গাঁধী সব থেকে ব্রাত্য গুজরাতেই, বলছেন রামচন্দ্র

কলকাতা, দিল্লি-সহ উপমহাদেশের বৃহত্তর পটভূমিতে গাঁধীর ভূমিকা দেশ ভাগ-পরবর্তী হিংসা ঠেকাতে অনেকটাই সফল বলে রামচন্দ্রের অভিমত।

আলোচনা: কলকাতা লিটেরারি মিটে রামচন্দ্র গুহ (বাঁ দিকে) এবং গোপালকৃষ্ণ গাঁধী। মঙ্গলবার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল চত্বরে। নিজস্ব চিত্র

আলোচনা: কলকাতা লিটেরারি মিটে রামচন্দ্র গুহ (বাঁ দিকে) এবং গোপালকৃষ্ণ গাঁধী। মঙ্গলবার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল চত্বরে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:৩৪
Share: Save:

দেশ ভাগের যন্ত্রণাদীর্ণ নোয়াখালির প্রান্তরে তিনি হাজির হয়েছিলেন। কিন্তু হিংসা ঠেকাতে কি আদৌ সফল হয়েছিলেন মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী?

এই প্রশ্নের মুখে কিছুটা সময় নিলেন রামচন্দ্র গুহ এবং গোপালকৃষ্ণ গাঁধী। তার পরে গাঁধী-জীবনীকার ও ইতিহাসবিদ রামচন্দ্রের পাল্টা প্রশ্ন: সদ্য-বিপত্নীক এক নিঃসঙ্গ, ক্লান্ত, রিক্ত বৃদ্ধের স্পর্ধাটা ভাবুন! নেহরু, পটেল, জিন্না, অম্বেডকর, সাভারকর— কেউ যা ভাবেননি, রবাহূত, অনাহূত গাঁধী সেই চেষ্টাতেই ঝাঁপ দিলেন ঘোর বিপদে। জাতি-সংঘর্ষের পটভূমিতে বিশ্বের আর কোন তাবড় নেতা এই সাহস দেখিয়েছেন? পারা, না-পারাটা মাপবেন কোন নিক্তিতে?

কলকাতা, দিল্লি-সহ উপমহাদেশের বৃহত্তর পটভূমিতে গাঁধীর ভূমিকা দেশ ভাগ-পরবর্তী হিংসা ঠেকাতে অনেকটাই সফল বলে রামচন্দ্রের অভিমত। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে নোয়াখালিতে একলা গাঁধীর সহচর নিরঞ্জন সিংহ গিল, যিনি আজাদ হিন্দ ফৌজে সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গী ছিলেন। গাঁধীর পৌত্র গোপালকৃষ্ণ বললেন, ‘‘দেশ ভাগ ঠেকাতে না-পারলেও তার বিষের ঝাঁঝ অনেকটা কমাতে পেরেছিলেন গাঁধী। নিজের ভিতরে কিছুটা সুভাষ, কিছুটা তাঁর গুরুদেব (রবীন্দ্রনাথ)-কেও বহন করছিলেন।’’

আরও পড়ুন: ভোটের প্রচারে রাহুলের আগেই ‘মাঠ দখল’ বিজেপির

পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল, সুলেখক গোপালকৃষ্ণকে তাঁর গাঁধী-চর্চার ভাঁড়ারঘর বলে থাকেন ‘ইন্ডিয়া আফটার গাঁধী’র লেখক রামচন্দ্র। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যিনি বাংলার সঙ্গে গাঁধীর অম্লমধুর জটিল সম্পর্কের কথা বলে মজা করে নানা বিতর্ক উস্কে দিতে চাইছিলেন। ভিক্টোরিয়ার বাগানে সাহিত্য উৎসবের আসরে দুই গাঁধী-বিশেষজ্ঞের আলোচ্য: ‘গাঁধী ইন বেঙ্গল’। গাঁধীর প্রতি সুভাষ-ভক্তদের অভিমান বা বোমা-বাঁধা বাঙালির অহিংস গাঁধীকে নিয়ে অবজ্ঞার বহুচর্চিত কাসুন্দি ঘাঁটায় আলোচনা আটকে থাকেনি।

গাঁধী ও বাঙালির সম্পর্ক জটিল, বহুমাত্রিক! গাঁধীভক্ত সতীশচন্দ্র দাশগুপ্ত গাঁধী-বিদ্বেষী বাঙালির জন্য আক্ষেপ করেছেন অনেক। অমর্ত্য সেন রসিকতা করেছেন, বাঙালি আসলে গাঁধীকে অপছন্দ নয়, বিতর্ক পছন্দ করে!

গাঁধী-রবীন্দ্রনাথ বা গাঁধী-সুভাষ সম্পর্কের নানা পরত উঠে আসে আলোচনায়, মতানৈ ক্য যেখানে শ্রদ্ধাকে ম্লান করতে পারে না। ‘‘রবীন্দ্রনাথের বিশ্ববীক্ষাকে আত্মস্থ করতে চাইতেন, সবটা পারেননি জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে জড়িয়ে থাকা গাঁধী,’’ বললেন গোপালকৃষ্ণ। রামচন্দ্র মনে করালেন আজাদ হিন্দ ফৌজের গাঁধী ব্রিগেড, নেহরু ব্রিগেডের কথা। গাঁধীর ‘মহাত্মা’ ও ‘জাতির জনক’ অভি‌ধা দু’‌টিও বাংলার অবদান। যথাক্রমে রবীন্দ্রনাথ ও সুভাষচন্দ্রের কাছ থেকেই পাওয়া।

আরও পড়ুন: ডিএ বাড়বে, আশ্বাস দিয়ে ভোট চাইলেন অমিত

গাঁধীর পৌত্র অকপট: ‘‘পশ্চিমে ডান্ডির পরে নোয়াখালি-অভিযানই গাঁধীকে গাঁধী করেছে। বাংলার কাছে গাঁধীর ঋণ অপরিশোধ্য। গুজরাত গাঁধীর জন্মভূমি ঠিকই, কিন্তু বাংলাকে বাদ দিয়ে গাঁধীর গল্পটা বলাই যাবে না!’’ আর গাঁধীর জীবনীকারের আক্ষেপ, গাঁধী এখন গুজরাতেই সব থেকে প্রত্যাখ্যাত! সভার পরে রামচন্দ্র বললেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের গুজরাত গাঁধীর সম্প্রীতি, পরিবেশ-সচেতনতা-শালীনতা— সব কিছু থেকেই দূরে হটছে।’’

এর বিপ্রতীপেই দাগ কাটছে গাঁধী ও বাংলার সম্পর্ক। আততায়ীর গুলিতে লুটিয়ে পড়ার পরে গাঁধী মাথা রেখেছিলেন ঘনিষ্ঠ আত্মীয়া, বঙ্গকন্যা আভা চট্টোপাধ্যায়ের কোলে। গোপালকৃষ্ণের মতে, ‘‘এতে আছে এক প্রতীকী ব্যঞ্জনা। বিবেকানন্দ-অরবিন্দ-রবীন্দ্রনাথে মুগ্ধ গাঁধীকে শেষ মুহূর্তেও আক্ষরিক অর্থেই লালন করেছে বাংলা।’’

ইতিহাসবিদদের মতে, গাঁধী নিখুঁত, ভ্রান্তিহীন ছিলেন না কখনও। তবে আত্মসমালোচনা, আত্মসমীক্ষায় ছিলেন দ্বিধাহীন। বাংলার প্রতি এই অকপট মুগ্ধতা সেই গাঁধী-সংস্কৃতিরই ছাপ রেখে গেল এ দিনের সভায়। আজ, বুধবার সুভাষ-জয়ন্তীতে তাঁর বাসভবনে স্মৃতি-বক্তৃতায় দেশের নেতৃত্বদান নিয়ে বলবেন গাঁধীর পৌত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE