Advertisement
E-Paper

‘ঈশ্বর আমি মরতে চাই না’, মৃত্যুর আগে লিখে গিয়েছিলেন চাউ

জীবন থেকে হঠাৎ হারিয়ে যাওয়ার আগে তাঁর লিখে যাওয়া শেষ নোটে চাউ লিখে গিয়েছিলেন, ‘‘ঈশ্বর, আমি মরতে চাই না।’’

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৮ ১৪:২২
জন অ্যালেন চাউ। চাউ-এর ইনস্টাগ্রাম অ্য়াকাউন্ট থেকে।

জন অ্যালেন চাউ। চাউ-এর ইনস্টাগ্রাম অ্য়াকাউন্ট থেকে।

অজানা, অচেনা মানুষকে ভালবাসতে গিয়ে, গোটা জগৎ থেকে বিচ্ছিন্নদের বুকে টানতে গিয়ে আদিবাসীদের ছোড়া তিরে যাঁর প্রাণ গেল আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে, সেই মার্কিন নাগরিক জন অ্যালেন চাউ জীবনকেই ভালবেসেছিলেন। মরতে চাননি। চেয়েছিলেন জীবনকে উপভোগ করতে। আর ঈশ্বরের আশীর্বাদ, ভালবাসাকে সব মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দিতে। ভাগ করে নিতে।

জীবন থেকে হঠাৎ হারিয়ে যাওয়ার আগে তাঁর লিখে যাওয়া শেষ নোটে চাউ লিখে গিয়েছিলেন, ‘‘ঈশ্বর, আমি মরতে চাই না।’’

ঈশ্বরের আশীর্বাদ, বার্তা, ভালবাসা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে বহু বার বহু অজানা, অচেনা জায়গায় গিয়েছেন ওয়াশিংটনের ভ্যাঙ্কুভারের ২৬ বছর বয়সী চাউ। একই উদ্দেশ্যে চাউ এই মাসে আন্দামানের নিউ সেন্টিনেল দ্বীপে গিয়েছিলেন গোটা জগৎ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন সেন্টিনেলিজ সম্প্রদায়ের আদিবাসীদের সঙ্গে দেখা করতে। তাঁদের সঙ্গে ভাব জমাতে, ভালবাসা বিলোতে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে, কারণ, ভারতীয় আইনে ওই নিউ সেন্টিনেল দ্বীপ ধরাছোঁয়ার বাইরে। তা আধুনিক মানুষের পা ফেলার ত্রিসীমানার মধ্যে পড়ে না। একটি স্থানীয় দৈনিক ‘আন্দামান শিক্ষা’র খবর, পুলিশ, উপকূলরক্ষী ও নৌবাহিনীর নজর এড়িয়ে সেন্টিনেলিজ দ্বীপে পা ফেলার জন্য মৎস্যজীবীদের ২৫ হাজার টাকাও দিয়েছিলেন চাউ। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, সেন্টিনেলিজদের খ্রিষ্ট ধর্মে দীক্ষিত করা।

আরও পড়ুন- আন্দামানের সংরক্ষিত দ্বীপে ঢুকে আদিবাসীদের হাতে প্রাণ হারালেন মার্কিন পর্যটক​

আরও পড়ুন- আন্দামানের এই দ্বীপে প্রবেশ নিষিদ্ধ, কেন জানেন?​

চাউয়ের লিখে যাওয়া শেষ ক’দিনের সেই সব নোট মার্কিন দৈনিক ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’-এর হাতে তুলে দিয়েছেন চাউয়ের মা। সেই নোটে সেন্টিনেলিজ আদিবাসীদের উদ্দেশ্যে চাউ লিখে গিয়েছিলেন, ‘‘আমার নাম জন। আমি তোমাদের ভালবাসি। ভগবান যিশুও তোমাদের ভালবাসেন। এসো, তোমাদের সঙ্গে আলাপ করি।’’ শুধুই নোট লিখে যাওয়া নয়, সমুদ্র থেকে মাছ ধরে আর কিছু উপহার নিয়ে সেন্টিনেলিজ আদিবাসীদের হাতে সেই সব তুলে দিতেও গিয়েছিলেন চাউ। মৎস্যজীবীদের নৌকা থেকে নেমে ওই সব উপহার দিতেই চাউ গিয়েছিলেন নিউ সেন্টিনেল দ্বীপে। তাঁকে শেষ বারের মতো মৎস্যজীবীরা দেখেছিলেন গত শুক্রবার। তার পর আর তাঁকে দেখা যায়নি। আদিবাসীদের দিকে হাত নাড়িয়ে যখন তাঁদের কাছে ডাকছিলেন চাউ, সেই সময়ই সেন্টিনেলিজ সম্প্রদায়ের এক আদিবাসী যুবার ছোড়া বিষাক্ত তিরে মৃত্যু হয় তাঁর। তাঁর হাতে ধরা বাইবেলও ফুঁড়ে দেয় আদিবাসীদের ছোড়া একের পর এক তির। ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি লম্বা আর গোটা মুখে হলুদ রং করা ওই আদিবাসীদের সঙ্গে সে দিন কথাও বলতে চেয়েছিলেন চাউ, তারা যে ভাষায় কথা বলে, সেই ভাষাতেই। এমনকি, গান গেয়ে, গির্জার গান গেয়ে তাদের মন ভোলাতেও চেষ্টা করেছিলেন চাউ।

মাছ ধরার নৌকা থেকে নেমে সেন্টিনেল দ্বীপে পা রাখার আগে তাঁর লিখে যাওয়া নোটে চাউ লিখে গিয়েছিলেন, ‘‘তোমরা ভাবতে পার, আমি পাগল হয়ে গিয়েছি! তাই এই ভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাচ্ছি সেন্টিনেলিজদের সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু আমি মনে করি, ভগবান যিশুর বার্তা ওদের কাছে পৌঁছে দেওয়াটা খুব জরুরি।’’ ওই নোট চাউ লিখেছিলেন গত ১৬ নভেম্বর। তার পরের দিনই মৎস্যজীবীদের চোখে পড়ে চাউয়ের মৃতদেহটিকে টানতে টানতে নিয়ে এসে মাটিতে পুঁতে দিচ্ছে সেন্টিনেলিজরা।

আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে গত তিন বছরে চার বার গিয়েছেন চাউ। কোনও বারই এই ভাবে আদিবাসীদের আক্রমণের মুখে পড়েননি তিনি, জানিয়েছেন পোর্ট ব্লেয়ার শহরের পুলিশকর্তা দীপক যাদব।

US Andaman John Allen Chau জন অ্যালেন চাউ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy